দেশজুড়ে

কোনো কাজেই আসছে না ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার সেতু

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নে ছোট ফেনী নদীর ওপর সড়ক বিহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। ফলে সেতু থাকলেও সংযোগ সড়কের অভাবে সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। দুই পাশে চলাচলের কোনো রাস্তা না থাকার পরও দুই গ্রামের মাঝে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই সেতু। দেড় বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও কোনো কাজে আসছে না।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হক ট্রেডার্স। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বরে প্রথম মেয়াদ শেষ হয়। ২০২৩ সালে সেতুটির কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

আরও পড়ুন: সেতু নির্মাণের ৬ বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদীর ওপর উত্তর জায়লস্কর ও ওমরপুর গ্রামের সংযোগ স্থাপনে সেতুটি তৈরি করা হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। জনগণের ব্যবহার ও চাহিদার গুরুত্ব বিবেচনা না করে এ সেতু নির্মাণের ফলে সরকারি অর্থের পুরোটাই অপচয় হয়েছে।

Advertisement

আবদুল ওহাব নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ওমরপুর, উত্তর জায়লস্করসহ তিন গ্রামের মানুষের যাতায়াত সিলোনীয়া বাজার ঘিরে। এখানে বাজার, শহরে যাতায়াত ও যোগাযোগের পরিবহনগুলোও সিলোনীয়া বাজার ঘিরে। কিন্তু কোটি টাকা খরচ করে এ পথে সেতু তৈরির কোনো প্রয়োজন ছিল না। একই নদীর ওপর সামান্য দূরত্বে আরও ৪টি সেতু আছে।

অধিগ্রহণের বিষয়ে স্থানীয় ভূমি মালিক আবুল খায়ের বলেন, গত ৬-৭ মাস আগে আমাদের কাছ থেকে কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত টাকা বা কোনো নির্দেশনা দেয়নি।

আরও পড়ুন: সংযোগ সড়ক নেই, কাজে আসছে না ৩২ লাখ টাকার ব্রিজ

অনেকের অভিযোগ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে এসব কাজ এলজিইডিতে তদবির করে ভাগিয়ে আনেন। প্রয়োজন না থাকলেও সড়ক-সেতুর কাজ এনে কমিশন ভাগিয়ে নিয়ে তারা আড়ালেই থেকে যান। ফলে সরকারের উন্নয়ন তহবিলের একটা অংশ অকারণেই খরচ হয়।

Advertisement

শফিকুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ওমরপুর এলাকা থেকে বর্তমান রাস্তা ব্যবহার করে শহরে যাতায়াতে যে সময় লাগবে, এই সেতু ব্যবহার করে যেতে সময় লাগবে দ্বিগুণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ব্যক্তির পকেট ভারী করার জন্য এই সেতু। এখানে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাহিদা কিংবা প্রয়োজনের কোনো মূল্য নেই।

আরও পড়ুন: ঝকঝকে সেতুতে উঠতে লাগে মই

জানতে চাইলে এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, সেতু নির্মাণের আগে উপযোগিতা যাচাইয়ে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেওয়ার পরে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। আমি ফেনীতে যোগদান করেছি বেশিদিন হয়নি। সেতুটি সম্পর্কে তেমন অবগত নই। তবে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, সংযোগ সড়কের জন্য দুইপাশে প্রায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪ শতাংশ জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ছাড়পত্র পেলে জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/কেএসআর