চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি.জে) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনায় শাস্তির দাবি জানিয়ে ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন করেছেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
সোমবার (৯ অক্টোবর) সকালে ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি.জে) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করলে বিদ্যালয়ের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন এবং শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরত পাঠান। কিন্তু দুপুরের দিকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে মানববন্ধন করেন।
এর আগে রোববারই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন এ ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।
জানা গেছে, এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় মারার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার হলে বিশৃঙ্খলা ও অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে পরীক্ষার্থী দশম শ্রেণির এক ছাত্রের খাতা কেড়ে নেন শিক্ষক। এতে শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এরই এক পর্যায়ে শিক্ষক হাফিজুরকে চড়-থাপ্পড় মারে ওই ছাত্র।
Advertisement
এ ঘটনায় শিক্ষকদের পক্ষে রোববার রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান। সোমবার সকালে বিদ্যালয়ে পৌঁছে শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এতে বিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা।
বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ে ছুটে যান বিদ্যালয়ের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। শিক্ষকদেরকে সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়ে তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
পরে দুপুরে বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ সময় সহকারী শিক্ষক সাজিদ রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরাই দাবি জানিয়েছে, এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনা আর যেন চুয়াডাঙ্গায় না ঘটে। আমরা আজ তাদের উদ্যোগে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা প্রতীকী প্রতিবাদ নিয়ে এসেছি। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা সারা বাংলাদেশে এটা জানাতে চাই। এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া হবে না। সামাজিকভাবে আমরা এতো নিচে নেমে গেছি, এটা থেকে উত্তোরণ দরকার।
Advertisement
সহকারী শিক্ষক শিখা রানী শিল বলেন, শিক্ষেকদের সামাজিক মর্যাদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। শাসন কমিয়ে দেওয়া, বেত উঠিয়ে দেওয়া, পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বন করার পরও তাকে বসতে দেওয়া, টিসি না দেওয়ার কারণে সামজিক অবক্ষয় হচ্ছে। কড়া প্রশাসন আর আমাদের হাতে নেই। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান বলেন, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের বক্তব্য এবং সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষার নিয়মকানুন যথাযথভাবে মানছিল না। যে কারণে ভুক্তভোগী শিক্ষক তার খাতাটি নিয়ে নেন এবং বসতে বলেন। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী শিক্ষকের ওপর চড়াও হয় এবং একপর্যায়ে চড়-থাপ্পড় মারে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের সভাপতি চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসকের পরামর্শে আমরা সদর থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়াও জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আমরা অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে এক শিক্ষককে মারধরের কথা বলা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, শিক্ষককে মারধর খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা) প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
হুসাইন মালিক/এফএ/এমএস