কৃষি ও প্রকৃতি

শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত ঝালকাঠির কৃষক

ঝালকাঠিতে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষকেরা জমিতে চারা পরিচর্যা, আগাছা পরিষ্কার ও পানি দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। ভালো দাম পেতে আগাম শাক-সবজির চাষে ঝুকছেন তারা।

Advertisement

ঝালকাঠিসহ পাশের জেলাগুলোতে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাচ্ছেন কৃষকেরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি কাজে তৎপরতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করছেন। ঝালকাঠি জেলার ৪ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে এখনো পাওয়া যাচ্ছে শীতকালীন শাক-সবজির চারা। জাতভেদে সবজির চারার দামও ভিন্ন ভিন্ন। পেশাদার কৃষক ছাড়াও শৌখিন মানুষেরা শখের বশে ছাদ কৃষি ও আঙিনা কৃষিতে ঝুঁকছেন।

সদর উপজেলার নবগ্রাম ও কীর্তিপাশা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মুলা, করলা, পটল, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজির চারা। মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত তারা। কাকডাকা ভোরে কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন সবজি পরিচর্যায়। বিকেল পর্যন্ত পরিচর্যা করে বাড়ি ফিরছেন। এভাবে শীতকালীন সবজি নিয়ে চলছে কৃষকের কর্মযজ্ঞ। বেড়েই চলছে কাজের চাপ।

আরও পড়ুন: পাহাড়ে বিলেতি ধনে পাতা চাষে লাভবান কৃষক 

Advertisement

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ৩৬ গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে প্রতি বছরই শীতকালীন সবজি চাষ হয়। পুরুষের পাশাপাশি সবজি চাষে অবদান রেখেছে নারীরাও। সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে ১২ মাসই সবজি চাষ হয়। সম্মিলিতভাবে নারী-পুরুষ চাষাবাদ করেন। পুরুষরা তাদের সহায়তা করেন এবং বাজারজাতের কাজ করেন।

এসব এলাকার ৫ হাজার পরিবার এখন সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষি বিভাগ সবজি চাষে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সদর উপজেলায় রবি মৌসুমে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে এবং গ্রীষ্মকালে ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। রবি মৌসুমে ৪৩ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন এবং গ্রীষ্মকালে ১৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। যা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলি গ্রামের সবিতা রানী হালদার জানান, একসময় গ্রামগুলোয় নারীরা এত কাজ করতেন না। তখন পেয়ারা, নারকেল, সুপারি আর সামান্য ধান আবাদ হতো। সে সময় প্রায় প্রতিটি ঘরেই অভাব ছিল। এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে কাজ করেন। এ কারণে ১২ মাস গ্রামগুলোয় সবজি চাষ হয়। অভাবও ঘুচে গেছে গ্রামের চাষিদের।

একই এলাকার সবুজ হাওলাদার জানান, কৃষাণ-কিষাণিরা সমানতালে কৃষি কাজ করছেন। নারীরা ক্ষেত সামলে সংসারের রান্নাসহ ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনার দায়িত্বও পালন করেন। ফসল সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ এবং কৃষাণিদের জন্য নতুন নতুন সবজি ক্ষেত তৈরিসহ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন পুরুষরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাস্তার পাশে ৪০০ পেঁপে গাছ লাগিয়ে আলতাফের বাজিমাৎ 

রাজাপুরের শুক্তাগড় গ্রামের মাহিনুর বেগম জনান, গত বছর তিনি ১ একর জমিতে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন শাক ও সবজি পেয়েছেন। তা পাইকারি বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে তার।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, গ্রামগুলোর উৎপাদিত শাক-সবজি জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ও বরিশালে চালান হচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে এখন গ্রাম ঘুরে ঘুরে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বাজারে। অনেক সময় পরিমাণে অল্প হলেও হাটে সবজি বিক্রি করতে নিয়ে যান নারীরাই। সবজির কদর সারাদেশেই আছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজিতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় গুণগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি।

সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক নারায়ণ মিস্ত্রি বলেন, ‘সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও অনেক কম। তবে সেবায় ত্রুটি করা যাবে না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় দিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব। এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে সবজি চাষকেই আমরা লাভজনক মনে করছি।’

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার শীতকালীন শাক-সবজিসহ সব রকমের ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। প্রান্তিক চাষিদের মাঝে শীতের শাক-সবজির মানসম্পন্ন বীজ এবং সার দেওয়া হয়েছে। আশা করি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ এবং উৎপাদন হবে। কেননা কৃষকদের প্রণোদনা ও পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও মজবুত করছে।’

মো. আতিকুর রহমান/এসইউ/জিকেএস