ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোড যেদিন নদী হলো, তার পরদিন ফেসবুকে দেখলাম কিছু ফেসবুকার বলছেন এটা নৌকার জন্য সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা। নৌকার বিজয়ীদের জন্য এই পানি না হলেও জনদুর্ভোগের জন্য প্রকৃতি বেশ তৎপরই ছিল সেদিন। সারারাত অঝোরে বারিপাত আমাদের চিন্তায় ছিল না। বরং আমুদেই ছিলাম। মহানগরের বাসিন্দারা যারা সে রাতে বাইরে ছিলেন, তারা দেখেছেন দুর্ভোগ কেমন ছিল। আর যারা বাসায় ছিলেন তারা খিচুড়ি মাংসের উৎসব করেছেন, তা বলাই বহুল্য।
Advertisement
যারা টিনের চালের নিচে যাপন করছিলেন জীবন, তারা রুম ঝুম ঝুম ঝুম শব্দের নিক্কন শুনতে শুনতে বিভোর হলেও তাদের মনে শঙ্কা বাসা বেঁধেছিল কাল কি কাজে যেতে পারবো? টিনের চালের নিচের বাসিন্দারা যে মহানগরের প্রান্তিক তলানিতে বাস করেন, তা আমরা জানি। তাদের জীবনে সারা বছরই যেন বর্ষাকাল। রাস্তা ভাঙা, উন্নয়ন-কাটা, জলাবদ্ধ গলি-উপগলি ও তস্যগলির পানি ডিঙিয়ে তারা কাজে বেরোয়। সেই সব মানুষেরা রাতে ঘুমুতে পেরেছেন, এ দাবি কেউ করবেন না।
সেদিনের বৃষ্টিতে ঢাকার কোন কোন এলাকা ডুবেছিল? কিংবা এটা বলা যায় যে কোন কোন এলাকা জেগে ছিল সেই অবিরল বৃষ্টির তোপের পরও? সেই পরিসংখ্যান না জানলেও চলবে। কারণ ঢাকা এখন নালা-নর্দমাহীন এক কংক্রিটের বস্তি ছাড়া আর কিছু নয়। এ মহানগর একদিন অসংখ্য খাল আর ঝিলের সমারোহে গড়ে উঠেছিল। বাহান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির এই মহানগর এখন পানি নিকাশের নালা নর্দমাগুলোও বন্ধ পাল্টিকের বোতল, সদাই করার পলিথিনের ব্যাগ এবং পথচারিদের ছুড়ে ফেলা যত রকম প্লাস্টিক আবর্জনায়। যতটা পানি নিকাশের ড্রেন-নর্দমা আছে কাচা-পাকা মিলিয়ে, তা প্রতিদিনের বাসা-বাড়ির পানি বয়ে নেবার জন্যও উপযুক্ত না।
অর্থাৎ বড় প্রধান সড়ক, মাঝারি ধরনের সার্ভিস সড়ক আর গলিময় শহরের পাড়া-মহল্লার ড্রেনের পানি নিকাশের জন্য যে পরিমাণ গ্রেনেজ ব্যবস্থা করেছেন দায়িত্ব পাওয়া ও কর্তব্য পালনে গলধঘর্ম হওয়া অফিসারগণ, তা তাদের চিন্তার মতোই সংকীর্ণ। ফলে তারা ড্রেনেজ ব্যবস্থাটিকে প্রয়োজন মোতাবেক গভীর ও সুপরিসর করতে পারেননি।
Advertisement
এ-দোষ কার বা কাদের তা আমরা বলবো না বা বলতে পারবো না। তবে মহানগরের বুকের ওপর দিয়ে যে সব খাল প্রবাহিত ছিলো, সেগুলোর দশা তো সরকারের লোকেরাই মেরেছেন। কিছু ভূমিখোর, কিছু রাজনীতির লোক এই সুযোগে দখল করেছেন পরিত্যক্ত সরকারি জায়গা-জমি ও প্রবাহ। এটা তাদের রাজনৈতিক স্বভাব। এই স্বভাবেরই একটি ডেমোনিস্টেশন সেদিন বারিবর্ষণের মাধ্যমে প্রকৃতি আমাদের দেখালো।
আমরা এখন কি করবো? এই মহানগরকে পরিত্যাগ করে ফিরে যাবো গ্রামে? ওই সব গ্রাম বা ৮৫ হাজার গ্রাম তো আর গ্রাম নেই সেমি শহর হয়ে গেছে। কারণ, সরকারের প্লান হচ্ছে সবাইকে উন্নয়নের স্বাদ দেবেন। গ্রামে বিদ্যুত গেছে- সেই বিদ্যুতের সরবরাহ পাক বা না পাক, তাতে তো সরকারের মাথা ব্যথা নেই। গ্রামগুলো ক্রমান্বয়ে সেনিটাইজ হয়ে উঠছে। কিন্তু পানি নিকাশের জন্য সেই গ্রামগুলো ঢাকার মতোই ড্রেনেজ সিস্টেমের নরক তৈরি হচ্ছে।
মানুষ বাড়ছে আর পাল্লা দিয়ে উৎপাদনের জমিতে তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি। আমাদের উৎপাদনের ভূমি কমে যাচ্ছে। সে খেয়াল সরকার রাখছে বলে মনে হয় না। আগামি দিনগুলোতে আরো মানুষ বাড়বে, কমবে কৃষির জমি। তখন কোটি কোটি মানুষের গ্রাসের খাদ্য কোথায় উৎপাদন করবো আমরা? চাষের ভূমি রক্ষার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে তা ভাবতে হবে। মহানগর ঢাকার নদী-নালা, খাল বিল ও ঝিলগুলো যেমন ক্রমান্বয়ে সরকার রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমি খোরদের পেটে গেছে (অস্বীকার করতে পারবেন না যে সেতুভবন তৈরি হয়েছে খাল ভরাট করে। এবং বলতে পারবেন না যে ওই খাল ভরাট করেছে বিএনপি সরকারের লোকেরা। আর আমরা কেবল সেইগুলো ব্যবহার করছি।)
এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি, ঢাকা মহানগরের সম্প্রসারণকে থামানো দরকার। পরিকল্পিতভাবে গ্রামের মানুষকে গ্রামেই রেখে তাদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা তো জানি, গরিব মানুষেরা কেন শহরে আসে। গ্রামে আয়-রোজগারের সংস্থান নেই বললেই চলে, তাই নগরই তাদের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করে। এবং সেই জন্য প্রান্তিক মহানগরের প্রান্তিক এলাকায় গড়ে ওঠে অবৈধ বস্তি। রাজনৈতিক মাস্তানগণ সেই সব বস্তি থেকে চাঁদা তোলে। এই সব কাহিনি কি মানুষ জানে না?
Advertisement
২.নিউ ইয়র্ক মহানগর নাকি বৃষ্টিতে ডুবে গেছে। জাগো নিউজেই একটি রিপোর্ট আর ভাসমান নিউ ইয়র্কের একটি সড়কের ছবি দেখলাম। নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ হলে সিটি কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে? আমাদের মহানগরের মেয়রদ্বয় দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর পানিতে ডুবে নৌচলাচলের উপযোগী ( আমরা দেখলাম প্রাইভেট মোটরকারগুলো ডুবতে ডুবতে চলছে আর মানুষ কাপড় ভিজিয়ে কোমরপানিতে গন্তব্যে ফিরছেন) হলেও মেয়রের মুখে কোনো রা নেই।
ডেঙ্গুতে প্রতিদিনই ১২ থেকে ২০/২২ জনের মৃত্যু হলেও না স্বাস্থ্যমন্ত্রী না মেয়রদ্বয় এই মৃত্যু আতঙ্ক নিয়ে কথা বলছেন। প্রথম দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও উৎখাত তার অধীন নয়। তিনি বলেননি যে সে দায়িত্ব সিটি মেয়রদ্বয়ের। উত্তরের মেয়র চায়নার নকল কিংবা উৎকৃষ্ট এডিস ও তার লার্ভা নিধনের অষুধ এনে তার আবাসন এলাকার গুলশান লেকে ছিটালেন, তাতে কোনো কাজ হয়েছে বলে সংবাদ পাইনি আমরা। এবং তার এলাকার গরিব প্রান্তিক মানুষেরা শিকার হচ্ছে এডিসের। আর দক্ষিণের মেয়র তাপস তো মুখে যেন কুলুপ এঁটেছেন, তেমনি তার সিটির এলাকায় মশা মারার ব্যাপারে নিশ্চুপ, আমরা দেখেছি। বরং এটাই দেখলাম যে ডেঙ্গুর প্রকোপকে উপেক্ষা করে তিনি বিদেশ সফর করলেন।
সিটি মেয়রের কাজ কী? আমরা জানি তিনি মহানগরবাসীকে সেবা দিয়ে জনজীবনকে স্বাভাবিক রাখাই তার প্রধান দায়িত্ব। দ্বিতীয় দায়িত্ব বোধহয় মহানগরের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা। তৃতীয় দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিক পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও বাসোপযোগী করে রাখা। তার এলাকার বিল-ঝিল, নালা-নর্দমায় যাতে এডিসের লার্ভা জন্মাবার সুযোগ না পায় সেই ব্যবস্থা করা। জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বসতিদের বাড়িঘর, নালা নর্দমা ও বারান্দা-ছাদের ফুলের টবে যাতে পানি জমে না থাকে, সেই প্রচারণা করলেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। নাগরিক বসতিদের এটাও শিক্ষা দিতে হবে যে মহানগরে বাস করতে হলে অতি জরুরি কিচেনের ময়লা-আবর্জনা কি ভাবে প্রতিদিন বাসাবাড়ির নিচে, প্রেমিসে সংরক্ষণ করতে হবে।
প্লাস্টিক বর্জ্য আর সিনথেটিক বর্জ্য, কাচের বর্জ্য ও অন্যান্য পুনরায় উৎপাদনযোগ্য ( রিসাইকেলিং) যে আলাদা আলাদা কনটেইনারে রাখতে হয় এবং হবে, সেই প্রশিক্ষণ দিতে হবে বসতিদের। বাসা-বাড়ির জানালা দিয়ে যে আবর্জনা রাস্তায় ফেলা মহানগরে সামাজিক অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ এই সাংস্কৃতিক বোধ জাগ্রত করতে হবে।
শুধু নাগরিকগণ বাড়ির কর নিয়মিত পরিশোধ করলেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আবর্জনা সংগ্রহকারীদেরকেও সহযোগিতা করতে হয়। আর যারা সিটির ওই সব কাজে নিয়োজিত তাদেরও শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করতে হবে। যদি কোনো বসতি সিটি করপোরেশনের নিয়ম আনুযায়ী আবর্জনা সংরক্ষণ না করেন, তাহলে তাদের ফাইন করার নিয়ম করতে হবে।
কিন্তু আমাদের মেয়রদ্বয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এতোটাই মগ্ন যে একজন বলে বসলেন মির্জা ফখরুল ইসলামকে ঢাকায় তিনি ঢুকতেই দেবেন না। এটা যে মাস্তানির ভাষা, সেটা হয়তো তিনি মানবেন না। কারণ তিনি রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে, আবার শাসক শেখ পরিবারের মানুষ, ব্রিটেন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে এসেছেন, অতএব তিনি তো রাজনীতিই করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সিটির মেয়র হওয়ার পর তিনি রাজনীতিক হলেও তার প্রধান দায়িত্ব তাঁর এলাকার বসতিদের সমস্যা সঙ্কট নিরসন করে সেবাকে উন্নত ও সুশৃঙ্খল করা। কিন্তু সেটা তিনি আমাদের দেখাতে পারেননি। এবং বসতিদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ ও পরামর্শ দিলেই যদি তারা সেইভাবে তাদের বসতি এলাকার চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতো, তাহলে পৃথিবীর দেশে দেশে সিটি সরকার ও মেয়রশিপ থাকতো না।
আমরা দেখলাম পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ঘর্মঘট করেছেন বা করছিলেন তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের জন্য। ওখানকার মেয়র লুৎফর রহমান বাঙালি এবং তিনি সেবা দেবার ব্যাপারে তৎপর ছিলেন। ধারণা করি, ধর্মঘট উঠে গেছে এবং ফুটপাশে জমে ওঠা পলিথিনের ব্যাগের ভেতরের আবর্জনা ও দুর্গন্ধ তারা পরিষ্কার করে নিয়েছেন। ফলে ওই হ্যামলেটের বাসিন্দারা আর দুর্গন্ধ পাচ্ছেন না।
সেখানকার পরিবেশও আর দূষিত হচ্ছে না। এলাকাটি বাঙালি ও এশিয়ানদের , তারা অনেকটাই গরিব, তুলনামূলকভাবে- কিন্তু মেয়রগণ খুবই তৎপর এবং সেবা দেবার জন্য উদগ্রীব। ঢাকার উত্তরের মেয়রকেও দেখি বেশ তৎপর কিন্তু তার এলাকার এডিসও তিনি মারতে পারেননি। মহানগরে কোন ধরনের গাড়ি চলবে, তাদের সংখ্যা কতো হবে, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মহানগরে যে সব বাস চরাচল করে, ফিটনেসহীন সেই সব গাড়ি চিরতরে বন্ধ করতে না পারলে কেউ আর তাদের ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচন করবেন না। আমি জানি একথার পর তারা একটুও বিচলিত হবেন না। কারণ ভোটে জেতার তাদের রয়েছে পরীক্ষিত পথ। কিন্তু অন্তত একটিবার ডেঙ্গুর মা-বাবা এডিস মশা ও তাদের ছানাপোনা লার্ভা নিধনে তারা জয়যুক্ত হোন, এটা তো আমরা চাই। কিন্তু তারা তা চান না।
প্রশ্নহীন থাকতে পাররে এবং জবাবদিহিতা না থাকলে কে আগ বাড়িয়ে ভালো কাজে মনোযোগী হয়? মশা মারার ক্ষেত্রে তারা যে ব্যর্থ, গত পনেরো বছর ধরেই তা আমরা দেখেছি। আমরা তারও অতীতের মশানিধনের ব্যর্থতার কথাও জানি। আমাদের মনে হয় মেয়রদ্বয় অতি মানবিক মশা নিধনে। মানুষের জন্য যে মানবিকতা সেই বিষয়ে মেয়রদ্বয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক লোকেরা অতীব মানবিকতা দেখাচ্ছেন। মানুষের ওপর তাদের মানবিক চেতনার উন্মেষ না হলেও মশক ধ্বংস করতে তাদের হৃদয়ে বোধহয় বেদনা জাগে। এ-জন্য নকল অষুধ বা অষুধ প্রয়োগের মাত্রা কমিয়ে কম খরচে কিংবা জল ছিটিয়ে নাগরিকের চোখে ধুলো দিতে ও ওস্তাদি তা তারা ভালোই জানেন। কিভাবে লুট করতে হবে লার্ভা মারার ওষুধের টাকা, সেটা দায়িত্বশীলদের নখদর্পনে।
সিটিকে বরাদ্দ দেয় সরকার, তাদের তহবিল অটুট রাখার জন্য নয়, মহানগরের বাসিন্দাদের সেবা নিশ্চিত করতে। সেটা যদি তারা দিতে না পারেন, তাহলে উচিৎ ওই পদে না থাকা। যে সব ওয়াদা দিয়ে তারা মেয়র হয়েছিলেন, সেই সব ওয়াদার একটি এডিস নিধনই যদি না করতে পারেন, তাহলে কি করতে হবে তা নিজেরাই ঠিক করুন।৩.কয়েক বছর আগের কথা। আমি ম্যানহাটান থেকে সাবওয়ে ধরে জামাইকার ১৬৯ স্টেশনে নেমেছি। ওই দিন সারাদিনই বৃষ্টি হচ্ছিল। নেমেই ফেঁসে গেলাম। পাতাল থেকে ওপরে ওঠে দেখি বেরোবার মুখে জনা দশেক নারীপুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। বাইরে মধ্যম মাপের বারিধারা বইছে। এবং সড়কে পানি জমে সয়লাব। সেই জলমগ্ন সড়কে এসে বাস একটি থামলো। নামলেন কয়েকজন। যারা ওই বাসে যাবেন গন্তব্যে তারা উঠে গেলেন। যাদের হাতে ছাতা ছিলো তারা হিলসাইডেরই বাসিন্দা। তারা চলে গেলেন। আমি মনে মনে বললাম, ১৬৯ স্টেশনের ওপরের এই সড়কটি ঢাকার শান্তিনগর চৌরাস্তা নয়, জল জমছে কিন্তু তা ধীরে হলেও বেরিয়ে যাচ্ছে। ধীরে কেন বেরুচ্ছে? কারণ, পানি নিকাশের ড্রেনের ভেতরটা জলমগ্ন হয়ে আছে মরসুমের পানি আর টানাবৃষ্টির ফলে।
মিনিট তিরিশের মধ্যেই বৃষ্টি থামলো এবং আবারো মিনিট কুড়ির মধ্যেই থৈ থৈ পানির ধ্বনি থেমে গেলো। আমি আবার হেনলি রোডের বাসার দিকে হিলে উঠতে থাকলাম। উঠতে উঠতে দেখলাম বৃষ্টির পানি আমাদের ছোটো খরস্রোতা ঝর্ণার মতো কলকল শব্দে তখনও নামছে। হিলি এলাকায় পানি আটকে থাকে না। থাকতে পারে না। কিন্তু ঢাকা তো হিলি এলাকাার মহানগর নয়, এটা বুঝেই বৃষ্টি/অতিবৃষ্টির এই দেশের মহনগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার ডিজাইন করা দরকার ছিলো। সেটা হয়নি।
যারা অতীতে ডিজাইন করেছিলেন তাদের কল্পনা এতোটা দীর্ঘ ছিলো না বলেই আজকে এমন অবস্থা। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার পর তো আমাদের চেতনা ফেরার কথা। এই মহানগরে যে দুই কোটি মানুষ বাস করতে আসবে, সেটা না সরকার না তখনকার পৌর করপোরেশন বা এখনকার মেয়রগণ ভাবতে পারেননি। আবার ভাববেন কেমন করে? তারা তো ভুলে থাকেন যে সরকারের ক্ষমতা যেমন কেন্দ্রিভূত, তেমনি দেশের মানুষের চিন্তাও কেন্দ্রাতিগ।
ঢাকায় টাকা ওড়ে, এটা তো পুরোনো কথা। ঢাকা ছাড়া দেশের কোথাও কাজও পাওয়া যায় না যে সেখানে জীবিকা করে বাঁচবে। আমাদের গরিব মানুষের বাঁচবার পথ একে একে বন্ধ হচ্ছে। আর আমরাও দলান্ধ হয়ে বসতিদের চেয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে উঠে পড়ে লাগছি। জনসেবা ও জনকল্যাণ যে এটা না, সেটা না মেয়রদ্বয় না সরকার বাহাদুর বুঝতে পারছেন না। এটাই দুর্ভাগ্য আমাদের।
# ০১/০১/২৩#লেখক: কবি, সাংবাদিক, কলামিস্ট।
এইচআর/ফারুক/এমএস