দেশজুড়ে

‘নদী আমগোর সব শেষ কইরে দিছে’

‘এই যে জায়গাটা দেখছেন, এইখানে আমার বাবার কবর ছিল। বাবার শেষ ইচ্ছেতে নিজেদের ভিটেতেই তাকে কবর দিছিলাম। প্রকৃতির কি লীলা, সেই কবরটাও এখন রাখতে পারলাম না। এর চেয়ে দুঃখের কিছু নাই। ব্রহ্মপুত্র আমার বাবার কবরটাও গিলে ফেললো।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নকলা উপজেলার দক্ষিণ নারায়ণখোলা গ্রামের জহুরুল হক।

Advertisement

গত বছর ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে নিজের বাবার কবর বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছিলেন তিনি। এরপরই জাগো নিউজসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সেই সংবাদ প্রচারের পর ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরি প্রতিরক্ষার কাজ হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর ফলে গত বছরের ভাঙনে কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিল জহুরুলের বাবার কবরটি। তবে শেষ রক্ষা হলো না। এ বছরের চতুর্থ দফার ভাঙনে রোববার রাতে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে জহুরুল হকের বাবার কবরসহ অন্তত পাঁচটি কবর।

আরও পড়ুন: ‘নদীতে সব বিলীন হয়ে গেছে, খয়রাতির খাতায় নাম লেখাইছি’

ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে বেহাল দশা শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকার নদী তীরবর্তী মানুষের। ১০ বছরে ভাঙনের করাল গ্রাসে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি, মসজিদ, কবরস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বছরের চতুর্থবারের ভাঙনে ভেঙেছে সিরাজ মিয়ার শেষ সম্বল মুদী দোকানও। নদী গর্ভে যাওয়া দোকানের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাখছেন অন্যের জমিতে। চলতি বছরের ভাঙনে নদী গর্ভে গেছে প্রায় দেড়শো একর আবাদি জমি ও অন্তত ৫০টি বসতভিটা।

Advertisement

মুদী দোকানি সিরাজ মিয়া বলেন, এই দোকানটাই আমার শেষ সম্বল ছিল। ভাঙনে আমার দোকানটাও শেষ। এখন কি নিয়ে বাঁচবো? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের এই ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান করে দিবেন।

বৃদ্ধা হাসনা আরা বলেন, ‘৪২ বছর ধরে এই এলাকায় থাকি। আমার জামাইয়ে ভিটা এইটা। নদী আমগোর সব শেষ কইরে দিছে। প্রত্যেক বছরই এই ভাঙন হয়। এইবারের ভাঙন সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ।’

আরও পড়ুন: ভাঙন আতঙ্কে ঘুম হারাম পদ্মাপাড়ের মানুষের

স্থানীয় নদী তীরবর্তী মানুষ বলছেন, প্রতি বছরই ভাঙনের সময় অস্থায়ী কাজ করে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন মৌসুমের পর আর তাদের দেখা মেলে না। আমরা চাই স্থায়ী সমাধান। এই এলাকায় ব্লক দিয়ে বেঁধে দিলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব।

Advertisement

কৃষক মজিবর মিয়া বলেন, যা জমি ছিল বেশিরভাগই নদীর মধ্যে। দুই কিলোমিটার দূরের নদী আইসা আমগোর সব শেষ করে দিতেছে।

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন মোকাবিলায় এ বছর দুইটি দরপত্রে প্রায় ৮৫ লাখ টাকার ৩৩০ মিটার জরুরি আপদকালীন অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবুও ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের বেশ কয়েকজন এরই মধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

আরও পড়ুন: মুন্সিগঞ্জে পদ্মায় হঠাৎ ভাঙনে ঘর-বাড়ি বিলীন

নকলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাগো নিউজকে বলেন, এই নদীর ভাঙনে অনেকের বাপ দাদার জমি ভিটা বিলীন হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরীও বিষয়টা জানেন। আশা করছি দ্রুত এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধান আসবে।

ইমরান হাসান রাব্বী/জেএস/এমএস