খেলাধুলা

‘বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলাটা হতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ’

বিশ্বকাপে জয় দিয়েই শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। টাইগারদের বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে রীতিমত উড়ে গেছে আফগানিস্তান। এ জয়ের পর বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অনেকেই।

Advertisement

বাংলাদেশ দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম মনে করেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলাটা হবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দল কী সত্যি সত্যি পারবে সেমিফাইনালে যেতে? সে ক্ষেত্রে কিভাবে খেলতে হবে টাইগারদের? জাগোনিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাভেদ ওমর বেলিম।

জাগোনিউজের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল নিয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ কতদুর যেতে পারে বলে মনে করেন?

Advertisement

জাভেদ ওমর: বাস্তবতা হচ্ছে, যদি বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যায়, আমি যারপরনাই খুশি হবো। আমার মতে সেটাই হবে দুর্দান্ত রেজাল্ট। এক কথায় ‘আউটস্ট্যান্ডিং রেজাল্ট।’ বাট সেটা সহজ না মোটেই। খুব কঠিন কাজ । শেষ চারে নাম লিখানো অনেক শক্ত কাজ। সেমিফাইনাল এর চৌহদ্দি পর্যন্ত যেতে পাড়ি দিতে হবে অনেক দূর্গম পথ।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ যদি সত্যিই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে তাহলে কি হবে?

জাভেদ ওমর: বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলাটা হতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বলতে পারেন ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে গণ্য হবে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা।

ধরেন ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার কোন একদল সেমিফাইনালে গেল না। তাই বলে কিন্তু তাদের ঠিক বিশ্বকাপের পরের সিরিজটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে না। অবস্থা প্রায় একই থাকবে; কিন্তু বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভাল খেলতে না পারলে ঠিক তার পরে যে সিরিজটি খেলতে নামবে, সেটার ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

Advertisement

সেজন্য বলছি, ভারত যদি বিশ্বকাপে শেষ হাসি হাসতে নাও পারে, তারপরও ভারতীয় ত্রিকেট সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ভারতীয়দের পরবর্তী সিরিজর আগে সেভাবে ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বোর্ড এবং টিম ম্যানেজমেন্টের গোষ্ঠি উদ্ধার হবে না; কিন্তু বাংলাদেশ যদি অন্তত গোটা তিনেক ম্যাচ জিততে না পারে, তাহলে অনেক কথা হবে।

ঠিক বিশ্বকাপের পরের সিরিজে মাঠে নামার আগে টাইগারদের অনেক নেতিবাচক অবস্থায় পড়তে হবে। এমন একটা পরিস্তিতির উদ্ভব ঘটবে যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সব শেষ হয়ে গেছে। তাই আমি চাই বাংলাদেশ অন্তত গোটা তিনেক ম্যাচ জিতে দেশে ফিরুক। তাতে দেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা ঠিক থাকবে।

জাগো নিউজ: তামিম ইকবালের না থাকাকে জাভেদ কিভাবে দেখেন?

জাভেদ ওমর: আমার কাছে তামিম ইকবালের না থাকা এক ‘বিগ ব্লো।’ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তামিম ইকবালের না থাকার অর্থ এক বিরাট ঘাটতি। অপূরণীয় শূন্যতা। তামিম এক সময় আমার সাথেও ওপেন করেছে। আমি দেখেছি, জানি তামিম কতটা আ্যাগ্রেসিভ ব্যাটিং করতে পারে। তার ব্যাট কতটা সাবলীল।

শুরুর দিকে চালিয়ে খেলে প্রতিপক্ষ বোলিং এলোমেলো করে দেয়া তামিম ইকবাল পরবর্তীতে দলের প্রয়োজনেই হাত খুলে শটস খেলা কমিয়ে গ্রাফটারের ভূমিকা নিয়েছিলো। তামিমের সেই ইচ্ছেমত আক্রমণাত্মক, চটকদার আর বাহারি মার কমিয়ে ধীরে-সুস্থে ইনিংস সাজানোর ভূমিকায় দেখে অনেকেই খুশি হতে পারেননি; কিন্তু তারা খুঁটিয়ে দেখেননি তামিম কেন তার স্বভাবজাত আক্রমণাত্মক ও মেরে খেলা কমিয়ে দিয়েছেন। আসলে তামিম ঠিক কাজটিই করেছে। কারণ সে দলের জন্যই খেলার ধরণ পাল্টেছে ।

আসলে তামিম থাকলে বলতাম বাংলাদেশ সেরা ও আদর্শ দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে। এখন তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, দলে তামিম ইকবাল নেই। তাকে ছাড়া দলটি আসলে অপূর্ণ। এখন যদি জুনিয়র তামিম ভাল খেলে ফেলে, তাহলে ভাল। আর যদি দল ভাল রেজাল্ট করে ফেলে সেটাও হবে অনেক ভাললাগার। তবে এখন মনে হয় আমরা নিজেদের সেরা দল নিয়ে বিশ্বকাপের মাঠে যাইনি।

জাগো নিউজ: তাহলে আপনি বলতে চান তামিমকে রেখেই দল সাজানো উচিৎ ছিল?

জাভেদ ওমর: হ্যাঁ, তাই। আমাদেরতো এমনিতেই ওপেনিংয়ে অনেক বড় সমস্যা আছে। সেখানে দীর্ঘদিন জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়ে আসা তামিম থাকলে খুব ভাল হতো। তামিম ছাড়াও যদি বাংলাদেশ ওপেনিং সমস্যা কাটিয়ে ভাল খেলে, সমস্যা নেই। তবে তামিমের দলে থাকাটা উচিৎ ছিল।

জাগো নিউজ: তামিমের ঘাটতি কি পোষানো সম্ভব?

জাভেদ: ভাল খেলতে হলে পুরো দলকে ভাল খেলতে হবে। আমাদের আফ্রিদি বা বাবর আজম নেই যে একা ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন।

জাগো নিউজ: খেলা হবে ব্যাটিং বান্ধব পিচে। সে ক্ষেত্রে টিম বাংলাদেশের গেম প্ল্যান কি হওয়া উচিৎ?

জাভেদ ওমর: আমার মনে হয়, অন্য কোন দিকে চিন্তা না করে আমাদের গেম প্ল্যানটা আমাদের মত করেই সাজানো উচিৎ। ওই যে সাড়ে তিনশো করে ফেলবো, ৪০০ করতে হবে। বা ৩০০ প্লাস রান না করলে কিছুই করা যাবে না, গো হারা হারতে হবে। এমন ভাবার দরকার নেই। আমার মনে হয় আমাদের উচিৎ নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্য বিচার করে প্ল্যান সাজানো উচিৎ। আমি বিশ্বাস করি, উইকেট যত ব্যাটিং বান্ধব আর ব্যাটিং স্বর্গই হোক না কেন, আমাদের সামর্থ্য হলো ২৮০ রান করা। আমরা যেন অযথা সাড়ে তিনশো’র টার্গেট নিয়ে না নামি। আমরা ২৮০ করার টার্গেট নিয়ে খেলবো। দেখবেন, সেটা হয়ত তিনশো‘তে গিয়ে ঠেকবে।

কিন্তু যখনই আপনি তিনশো করতে মরিয়া হয়ে উঠবেন, তখন অবস্থা খারাপ হবে। এশিয়া কাপ ও ওয়ার্ল্ডকাপ ওয়ার্মআপ ম্যাচে দেখেন সাড়ে তিনশোর ভূত চেপেছিল মাথায়। তা পারিনি। উল্টো বেশি হাত খুলে মেরে খেলতে গিয়ে বেশিরভাগ ম্যাচেই পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারিনি। তাই মারমার কাটকাট অবস্থায় যাওয়া যাবে না। তাতে ক্ষতি হবে আরও। নিজের শক্তি ও সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখেই খেলতে হবে। তাতে ৫০ ওভার খেলতে বা ৩০০ বল পুরো খেলতে পারলেই না আপনি ৩০০ করতে পারবেন। অযথা সাড়ে তিনশোর চিন্তা করে মেরে খেলতে গিয়ে ৪২-৪৩ ওভারে অলআউট হলেতো আর লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।

জাগো নিউজ: টাইগার পেসারদের নিয়ে কিছু বলেন?

জাভেদ ওমর: সবাই বলছে খেলা হবে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে। সেখানে বোলারদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। তাই আমারতো মনে হয় আমাদের ব্যাটারদের চেয়েও বোলারদের জন্য বিশ্বকাপ নিয়ে এসেছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাদের কাজটা যে ব্যাটারদের চেয়ে কঠিন।

জাগো নিউজ: আপনার চোখে ৪ সেমিফাইনালিস্ট কে কে?

জাভেদ: অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত আর পাকিস্তান।

এআরবি/আইএইচএস