পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন সেতুর পাশে দেওয়া বাঁধে পানি আটকে কৃষকের প্রায় ৫০০ বিঘা সবজির জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁধ কেটে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করেন। এতে পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানির নিচে থাকা বেশিরভাগ জমির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দাশুড়িয়া ও সলিমপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মৃত রতনাই নদীর চুরিওয়ালা ঘাটে সড়কের ওপরে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশে যানবাহন চলাচলের জন্য রতনাই নদীতে বাঁধ দিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। গত সাতদিনের প্রবল বর্ষণে বাঁধে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে আশপাশের ফসলের জমি ডুবে গেছে।
Advertisement
চলতি মৌসুমে এ এলাকার জমিতে শুধু সবজির আবাদ করা হয়। এবার উপজেলার নওদাপাড়া ও ভাড়ইমারী এলাকার শত শত বিঘা জমিতে গাজর, কপি, মুলা আবাদ করা হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, মৃত রতনাই নদীর চুরিওয়ালা ঘাটে সড়কের ওপর সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে যাতায়াতের জন্য বাঁধ দিয়ে অস্থায়ী সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়কে পানিপ্রবাহের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে টানা সাতদিনের বৃষ্টির পানি বাঁধে আটকে ফসলের জমি ডুবে গেছে।
তারা আরও জানান, জমিতে চাষ করা গাজরের চারা বয়স দুই মাস। এসময় জমিতে ৫-৭ পানি আটকে থাকায় সব গাছ মরে গেছে। এখনো শত শত বিঘা জমি পানির নিচে রয়েছে।
Advertisement
ভাড়ইমারী আনন্দবাজার এলাকার কৃষক মন্টু মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প সড়কের নিচে দিয়ে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা না থাকায় শত শত বিঘা জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেলো। আমরা এ ক্ষতি কীভাবে পূরণ করবো?’
একই এলাকার কৃষক তুহিন প্রমাণিক বলেন, ‘প্রায় ৪০০-৫০০ বিঘা জমির গাজর, ফুলকপি, ধনেপাতা ও ওলকপির জমি পানিতে ডুবে গেছে। এসব জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পানি নেমে যাওয়ার পর আবার নতুন করে এসব ফসলের চাষ করতে হবে। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলো।
কৃষক লিটন বিশ্বাসের সাত বিঘা জমির গাজর পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গাজর চাষে এরই মধ্যে আমার প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমি এ টাকা ওঠাবো কী করে?
সলিমপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে বাঁধ দিয়ে নির্মিত সড়কে পানিপ্রবাহের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ফসলি জমি ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে এসে বাঁধের একটি অংশ কেটে দিয়ে পানি অসারণের ব্যবস্থা করেছেন।
Advertisement
নির্মাণাধীন সেতুর সাব ঠিকাদার সৈকত জাগো নিউজকে বলেন, এ সেতুর মূল ঠিকাদার শরীয়তপুরের সফল এন্টারপ্রাইজ। তারা নির্মাণকাজ শুরুর সময় সেতুর পাশে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাদের কাজটি সাব ঠিকাদার হিসেবে আমরা করছি।
তিনি বলেন, সেতু ঢালাইয়ের জন্য রড বাঁধাইসহ সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টি না হলে পাঁচদিন আগেই ঢালাই হয়ে যেতো। সেতুর পাশে বিকল্প সড়কে পানি আটকে ফসলের জমির নষ্টের খবর শুনে আমি গিয়েছিলাম। কৃষকদের দুর্দশা দেখে আমি উপজেলা প্রকৌশলীর সেতুর সঙ্গে কথা বলেছি। বাঁধ কাটার বিষয়টিও আমি শুনেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, শত শত ফসলি পানির নিচে ডুবে আছে। কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাঁধের কিছু অংশ কেটে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা জাগো নিউজকে বলেন, বাঁধ কাটার পর পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু কৃষকের যা ক্ষতি হওয়ার তাতো হয়েই গেছে।
শেখ মহসীন/এসআর/এএসএম