কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চাকিরপাশা ও রৌমারীর নীলের কুঠি গ্রামের পাটাধোয়া পদ্মবিলে গত দু’বছর ধরে ফুটছে না শাপলা কিংবা পদ্মের কুড়ি। বিলে নেই কোনো পদ্মপাতা কিংবা ফুলের সমাহার। বিলের জলে এখন ভাসছে বিষাদের কচুরিপানা।
Advertisement
দুই বছর আগেও যে বিল দুটি ছিল প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণবিলাসী মানুষের প্রিয় স্থান। নৈঃস্বর্গিক যে বিল দুটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসতো যেখানে, সেই বিল এখন স্থানীয় মানুষের জন্য হতাশার বিলে পরিণত হয়েছে।
বিলটি ঘিরে শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম গড়ে উঠেছিল। অথচ গত দুই বছর ধরে বিল জুড়ে চলছে কচুরিপানার রাজত্ব। ফলে সব শ্রেণির মানুষের কাছে পদ্মবিলটি এখন বিষোদগারে পরিণত হয়েছে। বিলটির এমন নিষ্ক্রিয়তায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপাশা ইউনিয়নের চাকিরপাশা গ্রাম ও রৌমারী সদর ইউনিয়নে নীল কুটি গ্রামে প্রায় ৫০০ একর জুড়ে বিলে প্রতি বছর পদ্ম ফুল ফুটতো। পদ্মবিলে নেমে পদ্ম ফুল তুলতে ও কিনতে ফুল অনুরাগীদের বিচরণ ছিল দেখার মতো। কেউ প্রিয়জনকে উপহার দিতে পদ্ম ফুল কিনতেন। কেউ শালুক কিনতেন কেউবা পূর্জা অর্চনার জন্য পদ্মপাতা কিনতেন।
Advertisement
পদ্মবিল ঘিরে সকাল-সন্ধ্যা বসতো অস্থায়ী দোকান পাট। আবার অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ডিঙি নৌকায় করে পদ্ম বিলের মাঝে গিয়ে ছবি তুলে অবসর সময় কাটাতেন। অথচ গত দু’বছর ধরে সেই পদ্মবিল হয়ে আছে নিষ্প্রাণ। নেই ফুলের বাহার, নেই ডিঙি নৌকার বহর, নেই দর্শনার্থীর ভিড়ও। বিলের জলে এখন আগাছা আর কচুরিপানার বসবাস। বর্ষার শুরু থেকে আশায় দিন গুণা মানুষগুলোর কাছে পদ্মবিলটি এখন মরা গাঙে পরিণত হয়েছে।
চাকিরপাশা গ্রামের আব্দুস সোবহান মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে অদৃশ্য কারণে এই বিলে আর পদ্ম ফুল হচ্ছে না। অথচ এই পদ্মবিলকে ঘিরে এখানকার শতাধিক মানুষ উপার্জন করতো। পদ্মবিল দেখতে কুড়িগ্রামের মানুষ ছাড়াও রংপুর, লালমনিরহাটের মানুষ পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসতো। বিলটিকে পুণরায় সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
রৌমারী উপজেলার নীলের কুঠি গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত দু’বছর আগেও বিলটিতে পদ্মফুলের সমাহার ছিল। অথচ এখন বিলটিতে শুধু কচুরিপানা। কী কারণে বিলটির এ অবস্থা হলো জানি না। সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা নিলে বিলটি আগের মতো সরব হত।
বিলের পদ্ম ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা মো. মনসুর আলী বলেন, গত দুই বছর ধরে এই পদ্মবিলে ফুল ফোটাতো দূরের কথা পদ্মের পাতাও চোখে পড়ে না। প্রতি বছর বন্যার পরে আমন আবাদের কাজ শেষে আমরা বেকার থাকতাম। এই সময়ে অনেকে পদ্মপাতা, শাপলা ফুল, পদ্ম ফুল ও শালুক তুলে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। এখন পদ্মবিলে ফুল না থাকায় আমাদের উপার্জন বন্ধ।
Advertisement
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন (প্রাণি ও উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ) বলেন, রৌমারী ও রাজারহাট উপজেলার পদ্মবিলটি জেলার মানুষের কাছে খুবই পরিচিত ছিল। বিল দুটিকে ঘিরে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। অথচ গত দু’বছর ধরে বিলটিতে পদ্ম ফুল চোখে পড়ছে না। তবে এর কারণ হিসেবে বিলে সময়মতো পানি না থাকা ও স্থানীয়দের শালুক (বীজ) তুলে বিক্রি করাকে দায়ী করছেন তিনি। এছাড়া আশপাশের আবাদি জমিতে রসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বিল দুটিতে প্রভাব পড়তে পারে।
ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এএসএম