কৃষি ও প্রকৃতি

কলা চাষে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা পাহাড়ে

সবুজে মোড়ানো সম্ভাবনাময় পাহাড়ের বুকজুড়ে সাজানো কলা বাগান। পাহাড়ে ১২ মাস কলা চাষ হয় বলে সব মৌসুমে এখানে কলা পাওয়া যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে কলা চাষে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার পথে হাঁটছেন চাষিরা। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন প্রত্যন্ত জনপদ থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে বিপুল পরিমাণ কলা বিক্রি হয় বিভিন্ন হাট-বাজারে।

Advertisement

জানা যায়, দেশজুড়ে পাহাড়ের কলার চাহিদা বেশি হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। সাপ্তাহিক হাটের দিন লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয়। এমন চিত্রই দেখা গেছে খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড় কলার হাট মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা বাজারে। পাহাড়ে উৎপাদিত কলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের হাত ধরে ঢাকা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার ফলে পাহাড়ে দেশীয় কলা চাষের উপযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। পার্বত্যাঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি কলার চাষ বাড়লেও বাড়েনি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সঠিক সময়ে বাজারজাত করার অভাবে উপযুক্ত দাম মেলে না। এমনটাই জানিয়েছেন কলা চাষিরা।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে কালো আখ চাষে মফিজুরের বাজিমাৎ

Advertisement

পাহাড়ে মাটিভেদে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ হয়। এর মধ্যে দুই জাতের কলা চাষ হতে দেখা যায়। একটি দেশি জাতের বাংলা কলা, অন্যটি চম্পা কলা। এছাড়া সবরি ও সাগর কলা চাষ হয় এখানে। এলাকায় কলা চাষে কীটনাশক ব্যবহার হয় না বললেই চলে। কলা এমনিতেই পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। সারাবছর এসব কলার ফলন পাওয়া গেলেও আগস্ট-অক্টোবর মাসে বেশি পাওয়া যায়।

কুমিল্লা থেকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বাজারে আসা ব্যবসায়ী মো. আব্দুল সালাম জানান, সারাবছরই তিনি মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা বাজার থেকে কুমিল্লা ও আশেপাশের জেলায় কলা নিয়ে যান। বেশ সুস্বাদু হওয়ায় সমতলের জেলায় এ অঞ্চলের কলার চাহিদা অনেক বেশি। ফলে মানুষ পাহাড়ের কলা সামনে পেলেই কিনে নেয়।

চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘শহরের বাজারগুলোতে পাহাড়ি কলার চাহিদা অনেক বেশি। সমতলের কলা আর পাহাড়ের কলার গুণগত মানে অনেক পার্থক্য। তাই এখানকার কলার দামও অনেকটা বেশি। দাম বেশি হলেও সমতলের ক্রেতাদের কাছে পাহাড়ি কলার চাহিদা বেশি।’

আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে ফলদের চাহিদা বেশি

Advertisement

কলার বাণিজ্যিক চাষে সরকারি প্রণোদনার দাবি করে স্থানীয় পাইকার মো. শাহিন মিয়া বলেন, ‘কলা চাষে সরকারি সহায়তা দেওয়া হলে এখানকার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবেন চাষিরা।’

স্থানীয় বাজারে প্রতি ছড়া কলা (কমপক্ষে ১০০ পিস) মানভেদে ৩০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। যা সমতলের জেলায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হয়। এমনটা জানিয়েছেন নোয়াখালী থেকে আসা কলা ব্যবসায়ী মো. নুরুল আমিন।

মাটিরাঙ্গা উপজেলার কৃষি অফিসার মো. সবুজ আলী বলেন, ‘পাহাড়ের মাটিতে বাংলা ও চাপা কলা ভালো হয়। এখানে কলা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে বলে তেমন পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না। শুধু কলা চারার আশপাশে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মরা পাতা ও অতিরিক্ত চারা কেটে ফেললেই হয়।’

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসইউ/এএসএম