খেলাধুলা

‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, তামিমকে না নেয়া পরিস্থিতির আলোকে যুক্তিযুক্ত’

নিজের খেলোয়াড়ী জীবনে বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য অঙ্গ ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা প্রতিভা ধরা হয় তাকে। আশরাফুলের ব্যাটেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুর পরিচিতিটা পেয়েছিলো বাংলাদেশ। নেতৃত্বও দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে আশরাফুলের নেতৃত্বে।

Advertisement

এখন এমেচার ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ধারাভাষ্য দেয়ার কাজ করছেন। দারুণ ক্রিকেট বিশ্লেষণী ক্ষমতা মোহাম্মদ আশরাফুলের। বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন ভারতে। দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল নিয়ে দারুণ বিশ্লেষণ তুলে ধরলেন তিনি।

এই সাক্ষাৎকারের একটা অংশজুড়ে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসলো তামিম ইকবাল প্রসঙ্গ। তামিমকে দলে রাখা না রাখার বিষয়ে নিজস্ব যুক্তি ও মতামত তুলে ধরলেন আশরাফুল। আবার প্রমাণ করে দিলেন, তামিমকে দল থেকে বাদ দেয়ার কিছু অকাট্য যুক্তির বিষয়কেও। দুই পর্বে জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো মোহাম্মদ আশরাফুলের সাক্ষাৎকার-

জাগো নিউজ: যে দলটি বিশ্বকাপ খেলতে ভারত গেলো, আপনার চোখে এই দলটি কেমন হলো?

Advertisement

মোহাম্মদ আশরাফুল: আমার কাছে এবারের বিশ্বকাপ দলটিকে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের মত মনে হচ্ছে। মানে, এই দলটির সাথে আমি ২০০৭ সালের দলটির বেশ মিল খুঁজে পাচ্ছি।

জাগো নিউজ: সেটা কেমন?

আশরাফুল: কারণ হলো, ২০০৭ সালের সাথে এবারের দলটির গঠন শৈলির অনেক মিল রয়েছে। সেবারও দলটি ছিল তিন-চার ভাগে ভাগ করা। হাবিবুল বাশার সুমন ভাই, রফিক ভাই (বাঁ-হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক) ছিলেন। তার সাথে মাশরাফি, আফতাব, আমি আর রাজিন ভাই একটা গ্রুপ ছিলাম। এর সঙ্গে তামিম, সাকিব আর মুশফিকরা একটা গ্রুপ ছিল।

এক কথায় তিন প্রজন্মের মিশেল ছিল ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। আমার মনে হয় এবারের বিশ্বকাপ দলটিতেও তেমন আছে। সাকিব, মুশফিক আর রিয়াদ আছে। লিটন, মোস্তাফিজ, মিরাজরা একটা গ্রুপে আছে। সঙ্গে যুব বিশ্বকাপ বিজয়ী দলের একটা গ্রুপ যুক্ত হয়েছে।

Advertisement

সব মিলিয়ে আমার কাছে ২০০৭ সালের মত খুব ব্যালান্সড একটা দল মনে হচ্ছে এবার। তরুণ আর অভিজ্ঞ ও পরিণত পারফরমারের মিশেল আছে দলটিতে। বেশ ট্যালেন্টেড একটা দল। ভাল স্কোয়াড বলা যায় নির্দ্বিধায়। তামিম ইকবাল থাকলে খুব ভাল হতো। তখন একদম পরিপূর্ণ থাকতো সব কিছু।

জাগো নিউজ: তামিম ইকবালের না থাকাটা কিভাবে দেখছেন? আপনার কি মনে হয় তামিমকে দলে রাখাটা উচিৎ ছিল?

আশরাফুল: আমরা সবাই জানি, আসলে কেন তামিম ইকবাল বিশ্বকাপ দলে নেই। মূলত ফিটনেসের কারণেই নেই তামিম। এটা নিয়ে অনেক কথা-বার্তা শুনছি। সব দেখে ও শুনে আমার একটাই কথা মনে হচ্ছে। তাহলো, আমরা বোধ হয় ভুলেই গেছি, বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম হয়তো দেখেইনি যে, এই বাংলাদেশ দলে ঘরের মাঠে ২০১১’র বিশ্বকাপে মাশরাফির মত কালজয়ী পারফরমারকে ফিটনেসের কারণে নেয়া হয়নি।

তাসকিনের মত দূরন্ত ফাস্টবোলার গতবার একই কারণে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ দলে জায়গায় পায়নি। আমাদের দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে কিন্তু ইনজুরি ও ফিটনেসে ঘাটতির কারণে নামি ও বড় পারফরমারের বিশ্বকাপ দলে না থাকার রেকর্ড আছে। যেখানে শতভাগ ফিট না থাকলে বাদ পড়ার নজির কিন্তু আছে। বিবেচনায় আনে না। কেন আনে না? জানি না।

জাগো নিউজ: আপনি যদি প্রধান নির্বাচক হতেন, তাহলে কি তামিমকে নিতেন না বা বিবেচনায় আনতেন না?

আশরাফুল: আমি সিলেক্টর হলে ডেফিনেটলি তামিমকে দলে নিতাম। তবে ভুলে গেলে চলবে না, যে নির্বাচকরাই শুধু দল সাজান না বা ক্রিকেটার নির্বাচন করেন না । অধিনায়ক, কোচ আর টিম ম্যানেজমেন্ট সবাই মিলেই দল সাজায়। তাদের মত নেয়া হয়।

জাগো নিউজ: তার মানে শতভাগ ফিট না থাকলেও তামিম ইকবালকে নেয়ার পক্ষে থাকতেন আপনি?

আশরাফুল: ঠিক তাও না। একজন অভিজ্ঞ, দক্ষ আর দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের অন্যতম সফল, সেরা ব্যাটার এবং এক নম্বর ওপেনার হিসেবে আমি তামিমকে দলে রাখার পক্ষে। তবে তাকে বিশ্বকাপ দলে রাখা নিয়ে আমার নিজেরও কিছু অবজারবেশন আছে।

যেহেতু অধিনায়ক সাকিব আর তামিমের মধ্যে বর্তমানে সম্পর্কটা ভালো নয়। অস্বাভাবিক। একটা তিক্ততা বিরাজমান। সে কারণে আমি মনে করি, তামিম দলে থাকলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা অন্যরকম হয়ে যেতে পারতো। দলে ভাগাভাগিরও সম্ভাবনা দেখা দিত। দেখা যেতো, ৪/৫ জনের এক গ্রুপ থাকতো তামিমের সাথে। আরেক দল অধিনায়ক সাকিবকে সঙ্গ দিত।

তাতে করে দলের ভেতরে গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হতো এবং দুটি গ্রুপ হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। এতে করে ভালোর চেয়ে খারাপ হতো বেশি। বিশ্বকাপের মত এত বড় আসরে দলের ভেতরে বিভক্তি কাম্য নয় একদমই। তাতে বরং টিম স্পিরিট, ঐক্য, সম্প্রীতি ও সংহতি বাধাপ্রাপ্তই হতো বেশি। তখন ভাল রেজাল্ট হওয়া কঠিন হতো।

জাগো নিউজ: তারপরও আপনার মনে হয় না তামিম একজন পারফরমার হিসেবেই দলে থাকার দাবিদার?

আশরাফুল: অবশ্যই দাবিদার। ক্রিকেটার, পারফরমার তামিম একশ’ বার দলে থাকার দাবিদার। ওপেনার হিসেবে সেরা খেলোয়াড় তামিম। ব্যাটার হিসেবেও অনেক মেধাবি, বড়; কিন্তু সেগুলোই সব নয়। ড্রেসিংরুমটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রীতি, ঐক্য ও সংহতিটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো দল হতে হলে বন্ডেজটা খুব জরুরি। সাকিব-তামিম কথা বলে না। সেটা ভালো দল হওয়ার জন্য আদর্শ নয়।

যদিও দক্ষিণ আফ্রিকান দলে কিন্তু এমন আছে। তারা একজন আরেকজনের সাথে কথা না বলেও একসাথে খেলে। তবে আমাদের কালচারে এটা নেই। ড্রেসিং রুমে দু’জন সিনিয়র ও অপরিহার্য্য সদস্য নিজেরা কথা বলে না। আমি আমার দীর্ঘ খেলোয়াড়ী জীবনে দেখিনি। এমন সমস্যা নিয়ে বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে ঐক্য ধরে স্বাভাবিক ও ভাল খেলা খুব কঠিন। তাই আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, তামিমকে রেখে যাওয়াটা উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে যুক্তিযুক্ত।

এআরবি/আইএইচএস