খেলাধুলা

চেনা মাঠ, চেনা পরিবেশে জ্বলে উঠবেন কাটার মাস্টার?

বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে পেছন থেকে যাদের ভূমিকা রাখতে হবে, তাদের একজন কাটার মাস্টারখ্যাত মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁ-হাতি এ পেসার তার গতি এবং কাটার দিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারেন যে কোনো ব্যাটারকে। বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্টের নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে বরাবরের মতো তার হাতেই ন্যাস্ত থাকবে।

Advertisement

ভারতের স্টেডিয়ামগুলো মোস্তাফিজের খুবই প্রিয়। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। মোস্তাফিজ তখন মাত্র ক্রিকেট বিশ্বে তার পদচারণা রেখেছেন। টগবগ করে ফুটছিলো ২০ বছরের এক তরুণ। তার কাটার মাস্টার দুর্বোধ্য হয়ে উঠছিলো ব্যাটারদের কাছে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একাই ৫ উইকেট নিয়েছিলেন দ্য ফিজ খ্যাত মোস্তাফিজ।

এর মধ্যে চারজন ব্যাটারই হয়েছিলেন বোল্ড। তাদের মধ্যে ছিলেন হেনরি নিকোলস, কেনে উইলিয়ামসন, মিচেল সান্তনার এবং নাথান ম্যাককালাম। এরা বুঝতেই পারেননি মোস্তাফিজের স্লোয়ার এবং ইয়র্কার। স্ট্যাম্প পর্যন্ত ভেঙেছিলো। আইপিএলে মোস্তাফিজের বলে কলকাতার ব্যাটার আন্দ্রে রাসেলের মুথ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও জ্বল জ্বল করছে।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ভারতের ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলের নিয়মিত মুখ মোস্তাফিজ। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, রাজস্থান রয়্যালস কিংবা দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে নিয়মিতই মাঠ মাতিয়ে যাচ্ছেন ভারতের এই পেসার। সেই সব চেনা মাঠে এবারের বিশ্বকাপ খেলতে গেলেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার। চেনা মাঠ, চেনা পরিবেশে তাই মোস্তাফিজের জ্বলে ওঠার দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের সব ক্রিকেটপ্রেমী।

Advertisement

খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরায় জন্ম মোস্তাফিজের। বাবা ছিলেন একজন ক্রিকেটপ্রেমী। বড় ভাই নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন। বড় ভাইয়ের সঙ্গে অনুশীলনে যেতেন মোস্তাফিজ। যদিও বিষয়টা মোটেও ছেলেখেলা ছিল না। কেননা প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের মাঠে তাদের অনুশীলনে যেতে হতো। বিশাল এই দূরত্বের মাঠে সকাল বেলায় ক্রিকেট প্র্যাকটিসে যাওয়ায় স্কুলের সঙ্গে মোস্তাফিজের দূরত্ব বেড়ে যায়।

একদিকে স্কুলের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে ক্রিকেটের সঙ্গে সখ্য বাড়ে তার। একই সঙ্গে ক্যারিয়ারের শুরুতে যে ব্যাটিং করতেন তার সঙ্গেও দূরত্ব বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তিনি বোলিংয়ে মনোযোগী হলেন। একটা সময় গড়ে উঠলেন এক উদীয়মান পেসার হিসেবে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিশ্বকে চমকে দিলেন।

ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে গুঁড়িয়ে দিয়ে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। অভিষেক ম্যাচে কোনো বোলারের পাঁচ উইকেট নেওয়ার এটা ছিল দশম ঘটনা। পরের ম্যাচে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। এরপর ম্যাচ দুই উইকেট। তিন ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে গড়েছিলেন ইতিহাস।

ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপেও অসাধারণ বোলিং করেছিলেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার। ওই বিশ্বকাপে মোস্তাফিজুর রহমান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শততম উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন। ২০ উইকেটে নিয়ে বাংলাদেশীদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকট শিকারী হয়েছিলেন। বিশ্বকাপের এমন পারফরম্যান্সের পুরস্কার পেয়েছিলেন রাইজিং স্টার অফ দ্য স্কোয়াডের সদস্য হয়ে। আইসিসি তাকে এ মনোনয়ন দিয়েছিল।

Advertisement

গত বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সটা যদি এ বিশ্বকাপে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে আনতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের জন্য হতে পারে অসাধারণ একটি বিষয়। কেননা মোস্তাফিজের সঙ্গে অন্য সতীর্থরা বল হাতে তার সঙ্গে সুর মেলাতে পারলে প্রতিপক্ষের জন্য তা কঠিন এক চ্যালেঞ্জে পরিণত হতে পারে।

এ বছর মোস্তাফিজের জন্য কিছুটা অম্লমধুর। কখনো ভালো করছেন তো আবার কখনো খেই হারিয়ে ফেলছেন। এশিয়া কাপের শুরুতে তাকে খেলানো হলো; কিন্তু কোনো সাফল্য পেলেন না। যে কারণে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো তাকে; কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ফিরেই সাফল্যের দেখা পেলেন। ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন।

এরপর বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করলেন। প্রথম দুই ম্যাচে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন তিনি। বিশ্বকাপে মোস্তাফিজের কাছে এই ধারাবাহিকতাই ধরে রাখার প্রত্যাশা ভক্তদের।

আইএইচএস/