তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া আমেরিকার আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি পেয়েছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লা শহরে। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থেকে আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেন এবং সবশেষে সাফল্যের দেখা পান। তার মাস্টার্স প্রোগ্রামের নাম ‘মাস্টার্স অব ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার’।
Advertisement
তিনি বৃত্তি পাওয়া, আবেদন প্রক্রিয়া ও নতুনদের পরামর্শ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বৃত্তি পাওয়ার অনুভূতি কেমন? তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য আসার ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই ছিল। প্রথম চেষ্টায় সফল হওয়ায় খুবই খুশি আমি। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
জাগো নিউজ: বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়াটি কেমন ছিল?তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: বিদেশে উচ্চশিক্ষা বেশ ব্যয়বহুল। এজন্য শুরু থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল স্কলারশিপ। পাস করার পর সময় নষ্ট না করে সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করি। শাবিপ্রবির স্থাপত্য বিভাগে নিজ ব্যাচে প্রথম স্থান অধিকার করায় প্রোফাইল কিছুটা এগিয়ে ছিল। কিন্তু শুধু সিজিপিএ দিয়ে স্কলারশিপ পাওয়াটা কঠিন। আমি প্রায় এক বছর সিলেটে একটি আর্কিটেকচারাল ফার্মে প্রফেশনাল ফিল্ডের অভিজ্ঞতা অর্জন করি। পাশাপাশি বিভিন্ন ভলান্টিয়ারি কাজ ও অর্গানাইজেশনে নিজেকে নিয়োজিত করি। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্থাপত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে মেধাতালিকা অর্জন করি। এরমধ্যে আইইএলটিএস দিয়ে ফেলি এবং নিজের পোর্টফলিও তৈরি করতে থাকি। আবেদনের শুরুতেই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবো, তার আবেদনের শেষ তারিখ উল্লেখ করে একটি তালিকা তৈরি করি। আবেদনের শেষ তারিখ মাথায় রেখে ‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস’ তৈরি করে রাখি। পাশাপাশি আমার থিসিস সুপারভাইজার ও অন্য শিক্ষকের সঙ্গে ‘লেটার অব রিকমেন্ডেশনে’র জন্য যোগাযোগ রাখি। ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কলারশিপে আবেদন করি। তার মধ্যে ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপে ওয়েটিং লিস্টে থাকাসহ নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ডের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেয়েছি। আমেরিকায় শুধু আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতেই আবেদন করি এবং এখান থেকেই ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ পাই।
Advertisement
আরও পড়ুন: আমার বিসিএস প্রস্তুতি শুরু হয় মাস্টার্সের পর: আনিসুর রহমান
জাগো নিউজ: আমেরিকার বৃত্তির ধরন সম্পর্কে যদি বলতেন—তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: শুধু আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি নয়, আমেরিকার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ভাবে দুভাগে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। একটি সেন্ট্রালি ফান্ডেড স্কলারশিপ এবং অন্যটি প্রফেসর রিকমেন্ডেশনে প্রদত্ত স্কলারশিপ। সেন্ট্রালি ফান্ডেড স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আমেরিকার সব ইউনিভার্সিটির স্টেট থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ফান্ড বরাদ্দ থাকে। মেধার ওপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি পারশিয়াল, হাফ এবং ফুল ফান্ডিং দিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রকমের রিসার্চের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্টাইপেন্ডের সুযোগও আছে। এ ক্ষেত্রে ভালো প্রোফাইল, রিসার্চ, রেজাল্ট, মোটিভেশন লেটার বড় ভূমিকা রাখে। প্রফেসর বেইজড ফান্ডের ক্ষেত্রে আমেরিকা, কানাডা—এসব দেশের শিক্ষকরা রিসার্চের জন্য ফান্ড পেয়ে থাকেন। ভালো প্রোফাইল, জিআরই বা আইএলটিএস স্কোর—সব জিনিস নিয়ে প্রফেসরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রফেসররা তাদের সঙ্গে ফান্ডিংয়ের সঙ্গে রিসার্চের সুযোগ করে দেন। আমি সেন্ট্রালি আবেদন করেছিলাম, কোনো প্রফেসরের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি।
জাগো নিউজ: যেসব বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ আছে— তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপে সর্বমোট ৬টি ডিপার্টমেন্ট আছে। এরমধ্যে এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্স, ব্যবসা, ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, হিউম্যান সায়েন্স এবং লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স। এ ৬টি ফ্যাকাল্টির আওতায় ১শ’র ওপর মেজর কোর্স আছে। সব কোর্সেই মেধাভিত্তিক কম-বেশি স্কলারশিপের সুযোগ আছে।
জাগো নিউজ: আবেদনের যোগ্যতা কেমন থাকতে হয়?তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: আবেদনের জন্য বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন রিকোয়ারমেন্ট তালিকা থাকে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা থাকে। ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচারে আবেদন করার ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে সিজিপিএ ৩.০০ এবং আইইএলটিএস ৬.৫ থাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়া ইন্টার্নশিপ, থিসিস এবং রিসার্চ পাবলিকেশন, ভালো জিআরই বা আইইএলটিএস স্কোর; এসব চেকলিস্ট পূরণ করলে আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যায়।
Advertisement
জাগো নিউজ: বৃত্তির সুযোগ-সুবিধা কেমন?তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেলে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সব ধরনের বিলে ছাড় দেওয়া হবে। তাছাড়া গ্র্যাজুয়েটে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ দেওয়া হয়। সেখানে বছরে ১০ মাস রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ থাকে। যার বিনিময়ে মাসে প্রায় এক-দুই হাজার ডলার স্টাইপেন দেওয়া হয়। স্টাইপেনের পরিমাণ প্রমোশন হিসেবে সাধারণত প্রতি বছর বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি হেলথ ইনস্যুরেন্সের সুবিধা আছে।
আরও পড়ুন: কঠোর পরিশ্রম করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছি: সোহান
জাগো নিউজ: কী কী কাগজপত্র দরকার? তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আবেদনের জন্য সব সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, পাসপোর্ট, পোর্টফোলিও, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, লেটার অব রিকমেন্ডেশন, ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স লেটার, আইইএলটিএস বা জিআরই স্কোর সার্টিফিকেট ইত্যাদি প্রয়োজন। তবে আবেদনের আগে থেকেই ট্রান্সক্রিপ্ট এবং সার্টিফিকেট সত্যায়িত করে রাখা ভালো।
জাগো নিউজ: আবেদন করা যায় যেভাবে?তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: আমেরিকায় সাধারণত প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যেই আবেদনের সময় শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের ইন্সট্রাকশন ফলো করে যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। তাছাড়া অনেকেই ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রফেসরের সাথে ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। সেজন্য হাতে বেশ সময় রেখে প্রফেসরদের ই-মেইল করা শুরু করে দিতে হয়। আবেদনের জন্য আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০-১০০ ডলার পর্যন্ত আবেদন ফি রেখে থাকে।
জাগো নিউজ: নতুনদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন? তাবাসসুম আহমেদ ফারিয়া: বিদেশে উচ্চশিক্ষা যদি কারো স্বপ্ন হয়—আমি নতুনদের বলবো, ব্যাচেলর শেষ করার সাথে সাথেই প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। কারো যদি কিছু বছরের স্ট্যাডি গ্যাপ থাকে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনি যে কোনো সময় উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারেন। শিক্ষার জন্য বয়সটা আসলে তেমন কোনো বিষয় নয়। ধৈর্য রেখে পরিশ্রম করে গেলে অবশ্যই সফল হবেন।
এসইউ/এএসএম