খেলাধুলা

আমাদের বলতে হবে বিশ্বকাপ জিতব, হয়তো হাসাহাসি হবে: সোহান

বিশ্বকাপে খেলতে গেছে বাংলাদেশ। এবারের দলটিকে ভাবা হচ্ছে ইতিহাসের সেরা। সবারই প্রত্যাশা, টাইগাররা এবার ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে? সত্যিই কতটা যেতে পারবে?

Advertisement

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়া জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান আশাবাদী, দল এবার বেশ ভালো করবে। আর দলের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে যে বিশ্বকাপও জেতা সম্ভব, সেটি নিয়ে যত হাসাহাসি বা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপই হোক না কেন।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা এবং লক্ষ্য ও প্রত্যাশা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সোহান। তার সাক্ষাৎকারটি নিচে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

জাগো নিউজ: এবারের বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

Advertisement

নুরুল হাসান সোহান: আমার প্রত্যাশার ধরনটা ভিন্ন। খুব স্বাভাবিক যে একেকজন একেকরকম ভাবেন। চিন্তাভাবনাটা একেকজনের একেকরকম। তবে আমাদের দলে অনেক সিনিয়র আর জুনিয়র ক্রিকেটার আছে। এবার অনেকের শেষ বিশ্বকাপ। আবার কয়েকজনের প্রথম বিশ্বকাপ। টোটাল যে কম্বিনেশনটা হয়েছে, সেটা ভালোই আছে। সবাই ভালো করছেন।

তবে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, আমাদের লক্ষ্যটা থাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। আমার মনে হয়, আমরা সে সময়টা পিছনে ফেলে এসেছি। এখন আমাদের সময় হয়েছে দল হিসেবে ভালো খেলার। দলগতভাবে কিছু করার। এটা সত্য যে, কোনো দলের সবাই একসঙ্গে ভালো করেন না। সবার পারফরম্যান্স একত্রে ভালো হয়ও না। তবে আমার মনে হয় দল হিসেবে ভালো করাটা খুব জরুরি।

যারা ভালো খেলছেন তাদের সেই ধারাবাহিকতাটাও অনেক দরকার। ভালো করে আমরা যাতে ম্যাচ জিততে পারি। ম্যাচ জেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সময় ঘরের মাঠে বিশেষ করে মিরপুরে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে নামার আগে ধরেই নেওয়া হয় যে, আমরা ভালো করতে পারি। কিন্তু কঠিন সত্য হলো আমরা বড় মঞ্চে খুব কমই ভালো খেলি।

এবার সে ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে আমাদের বিশ্বকাপের মত বড় আসরে ভালো খেলা ও কিছু করে দেখানোর সময় এসেছে। আমি আসলে সেটাই চাই। কিছু চটকদার ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে চোখ ধাঁধালো, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে মাঠ আলোকিত হলো, কিন্তু দল জিতলো না, তা যেন না হয়। আমার মনে হয় অনেকদিক থেকে হিসেব করলেই দেখা যাবে, এবার আমাদের একটা ভালো সুযোগ। নিজেদের যে টিম কালচার সেটাও দিনকে দিন পাল্টেছে। এখন সবাই জিততে শিখেছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: এবার কয়টা ম্যাচ জিততে পারে বাংলাদেশ?

সোহান: আমার প্রত্যাশার ধরনটা আগের মতো নয়। আমরা সাধারণত বিশ্বকাপ এলেই ভাবতে থাকি দুই থেকে তিন ম্যাচ জিততে হবে। কিংবা আগেরবার কী করেছি, কয় ম্যাচ জিতেছি এবার তার চেয়ে বেশি ম্যাচ জিততে চাই।

বেশিরভাগ সময় লক্ষ্য থাকে ২ থেকে ৩টি জয়। কিন্তু আমার লক্ষ্য অন্য। আমি চাই আমরা যেন এবার থেকে সেই বৃত্ত ভাঙার চিন্তা করতে শুরু করি। কিভাবে পরের ধাপে যাওয়া যায়, সে চিন্তা শুরু করি।

এখন থেকেই ভাবতে শুরু করতে হবে আমরা ওই ২ থেকে ৩ ম্যাচ জয়ের ভেতরই সব আশা-ভরসা রাখবো না। আমরাও চ্যাম্পিয়ন হবো। আমাদেরও সেমিতে খেলতে হবে।

এভাবেই লক্ষ্য স্থির করে এগোতে হবে। তাহলে যে এবারই সেমিতে খেলবো বা ফাইনালে উঠে যাব, তা নয়। তবে লক্ষ্যটা অতদূর থাকলে এবার না হোক ২০২৭ কিংবা ২০৩১‘এ গিয়ে ঠিক আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

তা না করে যদি ওই ২/৩ ম্যাচ জেতার চিন্তা মাথায় নিয়ে শুরু করি, তাহলে আর কখনো ওপরে ওঠা সম্ভব হবে না। খুব ভালো করে লক্ষ্য করুন, আমরা সেই ২০০৭ থেকে ২০১৯ গড়পড়তা সর্বোচ্চ ৩ ম্যাচ জিতেছি। এর বাইরে জেতা সম্ভব হয়নি। সেমিফাইনালও পৌঁছাতে পারিনি। তাই বলছি চিন্তভাবনার রূপটা পাল্টাতে হবে। ম্যাচ জয়ের সংখ্যার দিকে না তাকিয়ে ভালো খেলার গ্রাফটা ওপরে টেনে তোলার পাশাপাশি লক্ষ্যটাও বড় করতে হবে। আমি আসলে সেভাবেই চিন্তা করতে চাই।

আমাদের বলতে হবে, আমরা বিশ্বকাপ জিতবো। হয়তো তা নিয়ে হাসাহাসি হবে। কিন্তু আমার মনে হয় এখন সময় ওই পরিবেশ তৈরির। সেটা শুধু প্লেয়ার, বোর্ড আর মিডিয়া নয় , দর্শক ও ভক্ত সবার মাঝেই একটা চিন্তা আসবে আমরা বিশ্বকাপ জিতবো। আমাদের বলার অভ্যাস করতে হবে। সেই অভ্যাসটাই একদিন বিশ্বকাপ জয়ের রসদ হয়ে দেখা দেবে।

জাগো নিউজ: বলা হচ্ছে ভারতে খেলা হবে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে। সেখানে অনেক দলই ৩০০-৩৫০ করে ফেলছে। আবার ৩০০+ স্কোর তাড়া করে জিতেও যাচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাটিংটা তো তেমন না। আমাদের বড় স্কোর গড়ার রেকর্ড কম। বড় স্কোর তাড়া করার নজিরও নেই তেমন। তাহলে বাংলাদেশের করণীয় কী হতে পারে?

সোহান: আমি আসলে ওইভাবে ভাবতে ও চিন্তা করতে নারাজ। আমার সোজাসাপ্টা কথা, কোন দল কী করলো; ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া আর ভারত কতবার সাড়ে ৩০০ করলো, ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকা কিভাবে ওই বিশাল স্কোর টপকে জিতলো- এসব ভেবে লাভ নেই। আমি তা ভাবতেও চাই না। আমার সোজা সাপ্টা কথা, আমাদের আর কাউকে ফলো করে লাভ নেই।

জাগো নিউজ: তাহলে বাংলাদেশের কেমন ক্রিকেট খেলা উচিত?

সোহান: অন্যের দিকে না তাকিয়ে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলার চিন্তা ও পরিকল্পনা করা উচিত। মাথায় আনতে হবে আমরা কী করতে পারি, আমাদের সত্যিকার সামর্থ্য কী।

আমার মনে হয় ওই সাড়ে ৩০০‘র কথা চিন্তা করে মাঠে নামলে বা ব্যাটিং শুরু করলে আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। তখন দেখবেন আমরা দুশোর নিচে বা আশপাশে অলআউট হয়ে যাব। তারচেয়ে বরং আমাদের নিজেদের স্টাইলটাই ধরে রেখে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলা উচিত। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ২৭০-২৮০ আর সর্বোচ্চ ৩০০ করার। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আমরা যদি ৫ খেলায় ২৭০-২৮০ থেকে ৩০০ রান করে ফেলতে পারি , দেখবেন আমরা তখন দুই ম্যাচ জিতে যাব। এমনকি ৩ ম্যাচও জিতে যেতে পারি।

মানে ধারাবাহিকভাবে ২৮০+ বা ৩০০ পুঁজি গড়তে পারলে তাকে জয়সূচক পুঁজিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। সেটাই হওয়া উচিত লক্ষ্য। তা না করে যদি ভেবে বসে থাকি যে, আমাদের সাড়ে তিনশো করতেই হবে, ৪০০ করতে হবে। তাতে করে দেখা যাবে প্রত্যাশার চাপে আমাদের ২০০ করাও হবে না। তখন তখন নিজেদের স্বাভাবিক ব্যাটিং আরও খারাপ হবে। ম্যাচ জেতার পথও হবে রুদ্ধ। তারচেয়ে ভাবতে হবে আমরা আসলে কত রান করতে পারি, কত স্কোর গড়ার সত্যিকার সামর্থ্য আছে আমাদের। সেই সামর্থ্যর প্রয়োগ ঘটানোর চিন্তাটাই হতে পারে সাফল্যর পূর্বশর্ত ।

শুধু ব্যাটিং দিয়েও হবে না। আমাদের জিততে হলে ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং তিন ডিপার্টমেন্টে ভালো করতে হবে। নিজেদের সামর্থ্যর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা এশিয়া কাপে ভারতের সাথে ২৬০+ রান করেও জিতেছি। তার মানে আমাদের টিম পারফরম্যান্সটাই মূল শক্তি। সেটা যাতে হয়, সে চেষ্টাই থাকতে হবে। অযথা বিগ স্কোর গড়ার চিন্তা করলে বরং ক্ষতিই হবে বেশি।

এআরবি/এমএমআর/আইএইচএস/