সুরা আলাক কোরআনের ৯৬তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরাটির আয়াত সংখ্যা ১৯টি রুকু ১টি। সুরাটির ৬-১৯ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল আল্লাহর রাসুলের (সা.) শত্রু আবু জাহলের ব্যাপারে। হাদিসে এসেছে, একদিন নবি (সা.) কাবার পাশে নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় আবু জাহল নবিজিকে (সা.) দেখে বললো, মুহাম্মাদ! আমি কি তোমাকে নামায পড়তে নিষেধ করিনি? এ রকম আরও কিছু কথা বললে নবিজিও তাকে সাবধান করে জবাব দিলেন। তখন সে বললো, মুহাম্মাদ! তুমি আমাকে কিসের ভয় দেখাও? আল্লাহর কসম! এ শহরে আমার সমর্থক ও সহযোগী সবচেয়ে বেশি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সুরা আলাকের এ আয়াতগুলো নাজিল হয়।
Advertisement
সুরা আলাকের ৬-১৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
(৬)كَلَّا إِنَّ الْإِنسَانَ لَيَطْغَىٰকাল্লা ইন্নাল-ইনসানা লাইয়াতগা।মানুষ তো সীমালঙ্ঘন করে৷
(৭)أَن رَّآهُ اسْتَغْنَىٰআররাআহু-সতাগনা।কারণ সে নিজেকে ভাবে অভাবমুক্ত৷
Advertisement
(৮)
إِنَّ إِلَىٰ رَبِّكَ الرُّجْعَىٰইন্না ইলা-রাব্বিকার রুজআ।নিশ্চই তোমার রবের কাছে প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত।
(৯)أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَىٰআরাআইতাল্লাযী ইয়ানহাতুমি কি দেখেছো সেই ব্যক্তিকে
(১০)عَبْدًا إِذَا صَلَّىٰআবদান ইযা-সাল্লা-।যে এক বান্দাকে নিষেধ করে যখন সে নামায পড়ে৷
Advertisement
(১১)أَرَأَيْتَ إِن كَانَ عَلَى الْهُدَىٰআরাআইতা ইন কানা আলাল হুদা।ভাবো, যদি সে সঠিক পথে থাকে! (১২)أَوْ أَمَرَ بِالتَّقْوَىٰআও আমারা বিত-তাকওয়াঅথবা খোদাভীতি শিক্ষা দেয়!(১৩)أَرَأَيْتَ إِن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰআরাআইতা ইন কাযযাবা ওয়া তাওয়াল্লা।যদি সে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।(১৪)أَلَمْ يَعْلَم بِأَنَّ اللَّهَ يَرَىٰআলাম ইয়া‘লাম বিআন্নাল্লাহা ইয়ারা।সে কি জানে না, আল্লাহ দেখছেন?(১৫)كَلَّا لَئِن لَّمْ يَنتَهِ لَنَسْفَعًا بِالنَّاصِيَةِকাল্লা লাইল্লাম ইয়ানতাহি লানাছফাআম বিন্নাসিয়াহ।কখনোই নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি মাথার সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াবোই।(১৬)نَاصِيَةٍ كَاذِبَةٍ خَاطِئَةٍনাসিয়াতিন কাযিবাতিন খাতিআহ।সেই কপালের চুল যে মিথ্যুক ও কঠিন অপরাধী৷(১৭)فَلْيَدْعُ نَادِيَهُফালইয়াদউ নাদিয়াহসে তার সমর্থক দলকে ডেকে নিক(১৮)سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَছানাদউ-ঝঝাবানিয়াহ।আমি ডেকে নিই আযাবের ফেরেশতাদের ৷(১৯)كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبকাল্লা লা তুতি‘হু ওয়ামজুদ ওয়া-কতারিবকিছুতেই তার কথা মেনে নিয়ো না, তুমি সিজদা করো এবং তোমার রবের নৈকট্য অর্জন করো৷
শিক্ষা ও নির্দেশনা
১. মানুষের মধ্যে যদি ইমান ও তাকওয়া না থাকে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই সে হয় দুরাচারী, অহংকারী ও জালিম।
২. আল্লাহ চাইলে ফেরেশতাদের মাধ্যমে সরাসরি মুমিনদের সাহায্য করতে পারেন। যেহেতু দুনিয়া পরীক্ষার জায়গা, তাই বেশিরভাগ সময় আল্লাহ সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জালিমদের ছাড় দেন।
৩. মানুষকে নামাজ পড়তে বাঁধা দেওয়া, মানুষের মধ্যে নামাজের প্রচার প্রসারে বাঁধা সৃষ্টি করা আল্লাহর সাথে সরাসরি শত্রুতা এবং অত্যন্ত গর্হিত পাপ। এ রকম পাপের জন্য দায়ী ব্যক্তি দুনিয়াতেই শাস্তির মুখোমুখী হতে পারে।
৪. নামাজ ও নামাজের সিজদা মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী ও প্রিয় বানিয়ে দেয়। নবিজি সা. বলেছেন,
أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد فأكثروا الدعاءবান্দা সিজদারত অবস্থায় আল্লাহর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি থাকে, তাই সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করো। (সহিহ মুসলিম)
৫. কাফের ও জালিমরা যতোই বাঁধা সৃষ্টি করুক, নিষেধ করুক, অনুৎসাহিত করুক, মুমিনের কর্তব্য তাদের সব বাঁধা ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করে নামাজ ও সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা।
ওএফএফ/এএসএম