রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সোসাইটি এলাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী, শতাধিক তরুণের সহায়তায় গত ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর দুই দিনে খালের ১ থেকে ৪ নম্বর ব্রিজের পুরো অংশ পরিষ্কার করে। এই কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন মোর্শেদ মিশু নামের এক ব্যক্তি। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ প্রশংসা কুড়ায়। তবে পরিষ্কার সেই খালে আবারও ময়লা জমতে শুরু করেছে।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, খাল থেকে ময়লা পরিষ্কারের পর পানির স্রোত বেড়ে গেছে। যার ফলে খালের নিচে থাকা ময়লার কিছু অংশ উপরে উঠে আসছে। এটিও ময়লা জমার অন্যতম কারণ।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালের পানিতে আবারও জমতে শুরু করেছে ময়লা। পানি থেকে আসছে দুর্গন্ধ। খালের পানিতে বোতল, প্লাস্টিক সামগ্রী, পলিথিনের ব্যাগ, খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ, বিভিন্ন ভাঙাচোরা সামগ্রী জমে আছে। খালের পাড়ে ময়লা স্তুপ করে রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিষ্কারের পর কয়েকদিন ভালোই ছিল খালের এই অংশ। তবে আবারও ময়লা ফেলা শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অল্প কয়েক দিনে আবারও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হবে খালটি। তাদের অভিযোগ স্থানীয়দের সচেতনতার অভাবেই এভাবে খালে ময়লা জমে। তাছাড়া আশপাশের বহুতল ভবন থেকে খালে ময়লার ব্যাগ ফেলা হয়। অনেক গৃহকর্মী কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় ময়লার ব্যাগ খালে ফেলে যান।
Advertisement
খালের পাশেই একটি দোকানে নরসুন্দরের কাজ করেন মোহাম্মদ জাবেদ। তিনি বলেন, যে যেমনে পারতেছে ময়লা ফালাইতাছে। বিল্ডিংয়ের ওপর থেকে ময়লা ফালায়, কেউ যাইতাছে ময়লা খালে ফালাই দিয়া যাইতাছে। সবজি বিক্রেতারা ময়লা ফালায়। কাজের বুয়া ফিরা যাওয়ার সময় ময়লা ফালায় দিয়ে যায়। আবার দূরে বস্তি আছে ওখান থেইক্যা ময়লা ফালায়। মানে যে যেমনে পারতাছে ফালাইতাছে। আমরা চাই খালটা পরিষ্কার থাকুক, সুন্দর হোক। সুন্দর হইলে আমাগোরই ভালা।
খালের এক নম্বর ব্রিজের ওপর কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আল-আমরানের সঙ্গে। এসময় তিনি তার এক বন্ধুর সঙ্গে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। এই ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের নিজেদেরকে আগে সচেতন হতে হবে। দেখা গেলো পরিষ্কার করলে আমরা নিজেরাই আবার ময়লা ফেলতেছি। আমি পাঁচ দিন আগে আসলেও এখানে ময়লার গন্ধে দাঁড়াতে কষ্ট হতো। এখন বন্ধুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করতে পারছি। খাল পরিষ্কার রাখলে আমাদের জন্যই ভাল। তাছাড়া ময়লা থাকলে বিভিন্ন রোগ জীবানু ছড়ায়, এডিশ মশা জন্মায়। এ জন্য আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া জরুরি।
স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, জনগণকে সচেতন হতে হবে। খালটা পরিষ্কার করার সাত ঘণ্টা পর আবার ময়লা জমে গেছে। এটা কিন্তু তারা দেখেছে। এখন জনগণ যদি দেখে সচেতন না হয় তাহলে আমরা কতক্ষণ পরিষ্কার রাখবো। আমাদের একার পক্ষে সম্ভব না। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বেসরকারিভাবে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে খাল পরিষ্কারের জন্য। এটা সরাসরি মেয়রের আন্ডারে টেন্ডার হয়। এখন টেন্ডার বন্ধ এটা চালু হলে খাল পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে।
এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরও জানান, যারা এই পরিষ্কারের কাজ এবং ব্রিজে পেইন্টিং করেছে তাদেরসহ মেয়রকে নিয়ে আমরা মতবিনিময় সভা করেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে খাল পাড়ে লাইট লাগানো হবে এবং ছোট ছোট দোকান করে দেওয়া হবে যাতে লোকজন এসে বসতে পারে এবং ময়লা ফেলতে নিরুৎসাহিত হয়।
Advertisement
এমএনএইচ/এসএনআর/জিকেএস