কৃষি ও প্রকৃতি

হলুদ চাষে ৫০ লাখ টাকা লাভের আশা রবিউলের

লিজ নিয়ে অনাবাদি ২৫ বিঘা জমিতে মসলা জাতীয় ফসল হলুদ চাষ করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের তরুণ ব্যবসায়ী ও কৃষি উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম রবি। এ হলুদ থেকে তিনি এবার ৫০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন। পাশাপাশি প্রতিদিন তার কৃষি খামারে ৫০-৬০ জন মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। হলুদ ক্ষেত পরিচর্যায় কাজ করছেন ২৫-৩০ জন নারী-পুরুষ। অন্য ফসল বাদাম, কপি, মুলা ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রায় ২৫ জন নারী-পুরুষ। তাছাড়া পুকুরে মাছ চাষে কাজ করছেন ৪ জন পুরুষ।

Advertisement

জানা যায়, সদর উপজেলার দক্ষিণ ঠাকুরগাঁওয়ের আকচা ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত গিয়াসউদ্দিনের ছেলে রবিউল ইসলাম রবি। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি গত বছর অনাবাদি দেড় বিঘা জমিতে বগুড়া পাটনাই জাতের হলুদ চাষ করেছিলেন। এতে এক বিঘা জমিতে হলুদের ফলন হয়েছিল ১৬০ মণ। এবার তিনি ৩৫ বিঘা জমি লিজ নেন। তার মধ্যে শুধু ২৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন হলুদ। চলতি বছরের বৈশাখ মাসে এসব জমিতে রোপণ করেন হলুদ। মাত্র সাড়ে ৪ মাসে হলুদের গাছ থেকে তিনি বিঘায় প্রায় ২০০ মণ ফলনের আশা করছেন। এছাড়াও বাকি জমিতে বাদাম, আদা, ফুলকপি, মুলা, আখ ছাড়াও পুকুরে মাছ চাষ করেছেন।

তার খামারে কাজ করা স্থানীয় শ্রমিক আহসান হাবীব, রাজা, স্মৃতি রাণী সেনসহ অন্যরা জানান, আগে তারা কাজ পেতেন না। এখন রবিউলের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে ও পুকুরে প্রতিদিন কাজ করছেন। এতে তারা ভালো আয় করে সংসার চালাতে পারছেন। তার চাষাবাদ দেখে স্থানীয়রাও উদ্বুদ্ধ হয়ে মসলা জাতীয় ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ১০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন সাইফুল 

Advertisement

স্থানীয় কৃষক আব্দুল মজিদ, নজরুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের এদিকে আগে তেমন হলুদ, আদা ও বাদাম চাষ হতো না। অনাবাদি জমিতেও যে হলুদ, আদা ও বাদামের চাষ ভালো হয় তা আমাদের জানা ছিল না। রবিউলের মাধ্যমে তা জানতে পারি। তাই আগামীতে আমরাও এসব চাষ করার চিন্তা করছি।’

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ‘কৃষির মতো ব্যবসায়ও এতটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আমি ৩৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করি। এর মধ্যে অনাবাদি ২৫ বিঘা জমিতে হলুদ ও ১ বিঘা জমিতে আদা চাষ করেছি। বাকি জমিতে বাদাম, কপি, মুলা ও আখ চাষ করেছি। হলুদ চাষে ২৫ বিঘায় সব মিলিয়ে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ হবে। যদি ফসলের ন্যায্য মূল্য পাই তাহলে খরচ বাদ দিয়ে শুধু এ মৌসুমে হলুদ থেকে ৫০ লাখ, অন্য ফসল ও পুকুরের মাছ থেকে ৫০ লাখ মোট ১ কোটি টাকা লাভ হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠে কাজ করে অনেকেই উপার্জন করছেন। স্মার্ট কৃষি গড়ার লক্ষ্যে সঠিকভাবে পরামর্শ ও সরকার যদি আমার মতো উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ দেয় তাহলে আরও বড় করে কৃষিতে অগ্রসর হতে পারবো। এতে আরও মানুষের আয়ের উৎস বাড়বে। দেশে মসলা এবং সবজি জাতীয় ফসলের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি কৃষি উদ্যোক্তাও বাড়বে।’

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে কালো আখ চাষে মফিজুরের বাজিমাৎ 

Advertisement

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের তথ্যমতে, এ জেলার মাটি উর্বর, উঁচু এবং মাঝারি উঁচু হওয়ায় সবজি ও ফলের চাষ অনেক ভালো হয়। প্রতি বছর এখানে প্রায় ১৪০ হেক্টর জমিতে আদা, ২৫০ হেক্টর জমিতে হলুদ, ১৫০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, ৯০০ হেক্টর জমিতে মুলা ও ২৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়। এছাড়া অন্য ফসল ভালো চাষ হয় এবং ফলনও ভালো হয়।

কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রবিউল ইসলাম কৃষিবান্ধব হয়ে শ্রমজীবী মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরির পাশাপাশি অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছেন। আমরা তাকে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছি। আশা করি তিনি কৃষিতে অনেক লাভবান হতে পারবেন। রবিউল ইসলামের মতো কৃষি উদ্যোক্তাদের হাত ধরে আগমীতে কৃষি আরও উন্নত হবে।’

তানভীর হাসান তানু/এসইউ/জিকেএস