আন্তর্জাতিক

পশ্চিমা সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন এক সপ্তাহের বেশি টিকবে না: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক ও আর্থিক সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন এক সপ্তাহের বেশি যুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র যদি কিয়েভকে সহায়তা দেওয়া কমিয়ে দেয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একার পক্ষে সেই সহায়তা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় বলে সতর্কবার্তা আসার পরপরই এমন মন্তব্য করলেন পুতিন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সোচি শহরের ব্ল্যাক সি রিসোর্টে মস্কোভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক (চিন্তাকেন্দ্র) ভালদাই ডিসকাশন ক্লাবের একটি সভায় বক্তৃব্য দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। সেসময় তিনি বলেন, ইউক্রেনকে প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি ডলারের অনুদান দেওয়া হচ্ছে। যদি এটা থেকে যায়, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে জেলেনস্কির সব সৈন্য মারা যাবে।

পুতিন আরও দাবি করেন, জুনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে কিয়েভের পাল্টা আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন ৯০ হাজারেরও বেশি সেনা হারিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনাকারী সাংবাদিকের সাড়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড

Advertisement

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক অস্থিরতা রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কিয়েভের প্রয়োজনীয় সামরিক ও মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করতে পারে। চলতি সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, আমি চিন্তিত যে ইউক্রেনের জন্য আমাদের সহায়তা লাইনচ্যুত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার স্পেনে ইউরোপিয়ান পলিটিক্যাল কমিউনিটির (ইপিসি) এক সভায়, ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিয়েভের প্রাথমিক দাতা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ ইউক্রেনের প্রধান দাতা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একা ভূমিকা রাখতে পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের দেশগুলো মিলেই ন্যাটো জোট গঠিত, যা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র সরবরাহের অর্থায়নসহ ইউক্রেনকে বহু বছরের সহায়তায় ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত ঘোষণা বাইডেনের

Advertisement

তাছাড়া ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে আরও ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন কংগ্রেস এরই মধ্যে কিয়েভের জন্য ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে মানবিক সহায়তা রয়েছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শাটডাউন এড়াতে বিরোধী রিপাবলিকানদের সঙ্গে করা চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের জন্য নতুন মার্কিন তহবিল স্থগিত রাখা হয়েছে। তাছাড়া কট্টরপন্থী রিপাবলিকানদের দ্বারা এই সপ্তাহে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থিকে অপসারণের ঘটনা ইউক্রেনের জন্য সাহায্যের বিষয়ে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ রিপাবলিকান নেতা ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করতে চায়।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সিনিয়র ফেলো জিম ডুবিক বলেছেন, পুতিনের হিসাব ছিল যে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদী সমর্থন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়বে ও রাশিয়া এ যুদ্ধে জিতে যাবে। মার্কিন কংগ্রেসের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পুতিনকে এ বিষয়ে আরও শক্ত বিশ্বাস এনে দিয়েছে।

আরও পড়ুন:  রুশ হামলা থেকে বাঁচতে আন্ডারগ্রাউন্ড স্কুল তৈরি করছে ইউক্রেন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে স্পেনে বৈঠক করার সময় ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান ‍উভয় দলই তাকে সমর্থন করে।

ইপিসি শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতারা বলেন, রাশিয়া চায়, আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমাদের দেখাতে হবে, আমরা দমে যাওয়ার নয়। ইউক্রেনকে আমরা শেষবিন্দু পর্যন্ত সাহায্য করে যাবো।

তবে এরই মধ্যে ইউরোপী ইউনিয়েনের মধ্যে ইউক্রেনকে সহায়তা করা নিয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। ইইউ ও ন্যাটোর অন্যতম পোল্যান্ড এরই মধ্যে কিয়েভকে আর অস্ত্র দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে আর অস্ত্র দেবে না পোল্যান্ড, কারণ কী?

আরও পড়ুন: স্লোভাকিয়ার জাতীয় নির্বাচনে ‘রাশিয়াপন্থি’ দলের জয়

অন্যদিকে স্লোভাকিয়ায় সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর স্মেইর-এসএসডি পার্টি। ফিকোকে বলা হয় রাশিয়াপন্থী নেতা। নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তার দল সরকার গঠন করলে সবার আগে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করা হবে।

সূত্র: আল জাজিরা

এসএএইচ