সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দিলেও বাজারে এসব নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। এরই মধ্যে গত দুই সপ্তাহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে কিছু পণ্য আমদানির অনুমতিও মিলেছে। এসব কারণে সাময়িকভাবে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম সামান্য কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সরবরাহ কমায় সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে কাঁচা মরিচ, বিভিন্ন সবজি ও মাছের দাম। সব মিলিয়ে বাজারে ভোক্তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই বললেই চলে।
Advertisement
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: কেজিতে ৮০ টাকা বাড়লো কাঁচা মরিচের দাম
বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে ঢাকার বাজারগুলোতে পণ্যের সরবরাহ কম। তাতে সবজি ও মাছের দাম বেড়েছে। এছাড়া কাঁচা মরিচের বাজারেও অস্থিরতা কাটেনি। অন্যসব সবজির মত আলুর দামও বাড়তি। পেঁয়াজের সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ পণ্যটির দামও সামান্য বেড়েছে। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
Advertisement
বৃষ্টির কারণে সরবরাহ সংকটের কথা জানিয়ে রামপুরা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইউনুস হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কাল (বৃহস্পতিবার) প্রায় সারারাত থেমে থেমে বৃষ্টি, ভোরেও ছিল। এতে রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি পণ্যের বাজার কারওয়ান বাজারের সবজির আড়তগুলোতে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক আড়তে ভোর পর্যন্ত সবজির চালান আসেনি। এ কারণে সবজির দাম বাড়তি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এদি প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। খোলা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে আবারও ৯০ টাকায় উঠেছে। যা গত সপ্তাহে ৮০ টাকায় নেমেছিল। পাশাপাশি আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে আরও ১৫ কোটি টাকার প্রণোদনা
খুচরায় প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সে হিসাবে বাজারে এক কেজি আলুতে অন্তত ১২ টাকা আর প্রতি কেজি পেঁয়াজে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফার্মের ডিমের হালি ৪৮ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
Advertisement
সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বড় আকারের গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। করলা, বরবটির দাম ছুঁয়েছে ১০০ টাকা। দরদাম করে নিলেও ৮০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন শিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। ছোট ফুলকপি ৬০ টাকার কমে মিলছে না। এছাড়া ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুলের কেজিও ৬০ থেকে ৮০ টাকা। পটল, ঢেঁড়সের কেজিও ৬০ টাকা। তবে সস্তার সবজি হিসেবে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে গত কয়েকদিন ধরেই কাঁচা মরিচের দাম বড় ব্যবধানে ওঠানামা করছে। শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে কোথাও ২৪০ টাকা আবার কোথাও ২৮০ টাকা কেজি দরে এ পণ্যটি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: ১২০ টাকায় উঠেছে সবজি, চাল-চিনি-পেঁয়াজের দামও কমেনি
মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা হোসেন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজি কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। কারণ, বৃষ্টিতে সরবরাহ কম। এতে পরিবহন খরচও বেড়েছে। এ অবস্থা ব্যবসা করাই কঠিন এখন।
মাছের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। নদী ও হাওরের মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে আগে থেকেই। চাষের মাছের দামও এখন বেশ চড়া। এক্ষেত্রেও সরবরাহ সংকট এবং বাজারে ইলিশ কম থাকার কথা বলছেন বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন: বেনাপোল দিয়ে ভারত গেলো ১৭৪ টন ইলিশ
আগে এক কেজি ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙাশের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, একই মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। দাম বেড়ে তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। কোথাও কোথাও ৩০০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। চাষের কই, পাবদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকার বেশি দরে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের চাষের রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এক কেজির বেশি ওজনের হলে ৪০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। আর বড় মাছের কেজি ছুঁয়েছে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিতে তিনটি হবে- এমন আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। যা গত বছর একই সময়ে ৪০০ টাকা ছিল। আকারে একটু বড় ইলিশ দামেও বেশি। একেকটি ৮০০ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকার বেশি। এক কেজি সাইজের ইলিশের কেজি দেড় হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। আর কেজির বেশি ওজনের হলে দুই হাজার টাকা বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। দর কষাকষি করে হয়তো কিছুটা কমে কেনা যাচ্ছে। তবে তা সাধারণ ভোক্তাদের একেবারেই নাগালের বাইরে।
শান্তিনগর বাজারে সিরাজুল নামের একজন বিক্রেতা বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ইলিশ শিকার বন্ধ হয়ে যাবে। এখন যা ধরা পড়ছে সব ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। এ কারণে দেশের বাজারে দাম চড়া। আর ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাজারে অন্য মাছের দামও বাড়তি।
আরও পড়ুন: কেজিতে ২০ টাকা বেশি আলু-পেঁয়াজ, ডিমের দামেও হেরফের
তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে নদী-নালায় মাছ ধরা পড়ে কম। সেজন্য দেশি মাছ একদমই নেই। বাজারে এখন চাষের মাছই ভরসা। টান পড়ায় দামও চড়া।
এনএইচ/এমকেআর/জিকেএস