জাতীয়

রূপালি পর্দার দর্শক আজও আসেন বলাকা সিনেমা হলে

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেটে অবস্থিত বলাকা সিনেমা হল। প্রায় সাত দশক ধরে হলটি সেখানকার মানুষের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ওই এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সিনেমাপ্রেমী শিক্ষার্থীদের বড় অংশ এ হলে সিনেমা দেখতেন। ভিড় থাকতো নানা শ্রেণিপেশার মানুষেরও। কিন্তু করোনা মহামারির সময় হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় হলটি। এরপর আর খোলেনি। তবে এখনো চলচ্চিত্রের রূপালি পর্দার দর্শকরা হলটি চালুর অপেক্ষায় আছেন।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৫৪ সালে এ সিনেমা হলটির যাত্রা শুরু। সত্তর-আশির দশকে প্রেক্ষাগৃহের জমজমাট ব্যবসা থাকলেও ডিজিটাল মাধ্যমের প্রসারে এ ব্যবসায় ভাটা পড়ে। তবে কাছাকাছি অন্য কোনো সিনেমা হল না থাকা আর আশপাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হওয়ায় এ সিনেমা হলটি ভালোই চলছিল৷

চালু থাকাকালীন হলটিতে প্রতিদিন তিনটি শো চলতো। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রথম শো, বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দ্বিতীয় এবং সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলতো তৃতীয় শো।

হল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার সময় টানা নয় মাস বন্ধ থাকায় মালিকপক্ষের প্রায় ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বাধ্য হয়ে হলের কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে।

Advertisement

প্রায় ১২০০ দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ সিনেমা হল চালু রাখতে প্রয়োজন ৬৫ জনের মতো কর্মচারী। বর্তমানে হলটি দেখাশোনার জন্য সাতজন কর্মচারী আছেন৷ এরমধ্যে বলাকা সিনেমা হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দোকানের ভাড়া ওঠাতে কাজ করেন তিনজন। বাকি চারজন পাহারাদার।

সরেজমিনে বলাকা সিনেমা হলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, হলটির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। গেটের অন্য পাশে একজন প্রহরী। ভেতরে প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। গেটে দাঁড়িয়েই কথা হয় দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করা নিরাপত্তাপ্রহরী নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার কাজ তালা মেরে দাঁড়িয়ে থাকা, কেউ যেন ভেতরে ঢুকতে না পারে। করোনার সময় থেইক্যা হল বন্ধ। অনেকেই তো জানে না। এহনও প্রতিদিন অনেকে সিনেমা দেখতে এসে ফিরে যান। কী করমু! লোকজন এলে বইলা দেই হল বন্ধ।

একসময় ববিতা, শাবানা, মান্না, শাকিল খান, শাবনূর, মৌসুমী ও পপিসহ অনেক নায়ক-নায়িকা এ হলে এসে সিনেমা দেখতেন বলেও জানান এই নিরাপত্তাপ্রহরী।

সিনেমা হলের সামনে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ও হলটি চালু ছিল। বন্ধুরা মিলে মাঝেমধ্যেই আসতাম সিনেমা দেখতে। এখন তো হল বন্ধ। এটি আবার চালু হওয়া উচিত।

Advertisement

সিনেমা হলটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সজীব নামের এক কর্মচারী বলেন, হল চালানোর মতো কর্মচারী এখন নেই। আমি দেখাশোনা করি আর হলের আন্ডারে যে দোকানগুলো আছে সেগুলোর ভাড়া তুলি। এর বাইরে আর কোনো কাজ নেই।

জানা গেছে, হলটির মূল মালিকানা ছয়জনের হাতে। বর্তমানে ছয় মালিকের দেওয়া ক্ষমতাবলে মোহাম্মদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি হলটির দেখভাল করেন। ওই ব্যক্তি মিরপুর সনি সিনে কমপ্লেক্সের মালিক।

মোহাম্মদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বলাকা সিনেমা হলের ভবনটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হলে আবারও সিনেমা হল চালু হবে। করোনাকালীন অনেক লোকসান হয়েছে। মূলত ডিজিটাল সিনেপ্লেক্সের কথা ভেবেই হলটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে।

এমএনএইচ/এমকেআর/জিকেএস