অর্থনীতি

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের করছাড় নিয়ে জটিলতা কাটছে

চলতি বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজারের বেশি মানুষ এ স্কিমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি মাসেই এ অর্থ নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করবে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

তবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদার বিপরীতে করছাড় পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। আয়কর আইনে পেনশন স্কিমের চাঁদা কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত কি না, তা-ও উল্লেখ নেই। অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে এ চাঁদা করছাড়ের জন্য বিবেচিত। দুই আইনে দুই ধরনের অবস্থায় বিভ্রান্তিতে পড়েছেন করদাতারা।

জানা গেছে, জটিলতা নিরসরে দ্রুত এসআরও জারি করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এসআরও জারির পর এ সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন আয়কর আইন, ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিলে (কর অব্যাহতি, রেয়াত ও ক্রেডিট) পেনশন স্কিমের চাঁদার কথা উল্লেখ নেই। এ আইনের ষষ্ঠ তফসিলে (অংশ-৩) বলা হয়েছে, জীবন বিমার প্রিমিয়াম, প্রভিডেন্ট ফান্ডের চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা, সরকারি সিকিউরিটিজ বা মিউচুয়াল ফান্ডে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ, বছরে এক লাখ ২০ হাজার টাকা (মাসিক ১০ হাজার) ডিপিএসে বিনিয়োগ, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে সেই অর্থের ওপর কর রেয়াত বা করছাড় পাওয়া যাবে।

Advertisement

এক্ষেত্রে উল্লিখিত খাতে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, তার ১৫ শতাংশ বা ১০ লাখ টাকার কম যেই অর্থ, সেই পরিমাণ অর্থ করছাড় পাওয়া যাবে। ষষ্ঠ তফসিলে পেনশন স্কিমের চাঁদার কথা উল্লেখ নেই।

অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর ১৪ (১) (ঢ) ধারায় বলা আছে, পেনশনের চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদপ্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।

তবে আয়কর আইনের ৭৬ (২) ধারায় বলা আছে, আয়কর আইন ব্যতীত অন্য কোনো আইন বা আইন হিসেবে পরিগণিত দলিলের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে ওই আইন বা আইন হিসেবে পরিগণিত দলিলে যা-ই থাকুক না কেন, এনবিআর প্রজ্ঞাপন দ্বারা ওই ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি না দিলে সেই বিধান কার্যকর হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক আয়কর কর্মকর্তা বলেন, সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের আইনে কর অব্যাহতি দিচ্ছে, যার আইনগত ভিত্তি নেই। আয়কর আইন অনুযায়ী কর অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে শুধু এনবিআরের। এ বিষয়ে নিজেরা নিজেদের কর অব্যাহতি দিয়ে কোনো আদেশ, প্রজ্ঞাপন বা এসআরও জারি করলেও আয়কর আইনে এর বৈধতা নেই।

Advertisement

তিনি বলেন, আয়কর আইনে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন জমা থেকে অব্যাহতি বা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে, শুধু সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করছাড় পাবে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পরই বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজাল দূর হবে।

এসএম/এমকেআর/এমএস