একুশে বইমেলা

স্টল খুঁজে পেতে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন জরুরি: রবিউল কমল

রবিউল কমল একজন গণমাধ্যমকর্মী ও শিশুসাহিত্যিক। তার জন্ম বান্দরবানের পার্বত্যগ্রাম আজিজনগরে। বেড়ে ওঠা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায়। সুন্দরবনের কাছাকাছি হওয়ায় সবুজের মধ্যেই কেটেছে শৈশব ও কৈশোর। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় লেখালেখিতে হাতেখড়ি। একই সময়ে মাদকবিরোধী রচনা প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কার পান। স্কুল-কলেজে পড়াকালীন মাদকবিরোধী সংগঠন ‘আমরা করব জয়’ নিয়ে কাজ করতেন।

Advertisement

তার লেখা গল্প প্রথম ছাপা হয় যুগান্তরের ছোটদের পাতা আলোর নাচনে। প্রথম ছড়া ছাপা হয় ইনকিলাবের সোনালী আসরে। চাচাতো ভাই হামিদ কল্লোলের মাধ্যমে লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠা। শিক্ষাজীবনে ব্যবসায় প্রশাসন স্নাতক, কর্মজীবনে দ্য ডেইলি স্টারে কর্মরত। সম্পাদনা করছেন ছোটদের সাময়িকী ‘প্রজাপতি’ ও ‘আমার ইশকুল’।

সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

আরও পড়ুন: অনুবাদ-সেল নামে আলাদা কর্নার হোক: আবু আফজাল সালেহ 

Advertisement

জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?রবিউল কমল: বইমেলা আসতে এখনো কয়েক মাস বাকি। তাই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে আগামী বইমেলায় তিনটি বই আসতে পারে। একটি কিশোর গোয়েন্দা এবং দুটি থ্রিলার।

জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?রবিউল কমল: বইমেলা হচ্ছে প্রাণের মেলা। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের মিলনমেলা। বইপ্রেমীরা এ মেলার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করেন। তাই বইমেলা নিয়ে প্রত্যাশা সবার বেশি। আগামী বছরের মেলা গোছানো হবে এটাই প্রথম চাওয়া। মেলার পরিসর বেড়েছে কিন্তু সেটাকে আরও পরিপাটি করা দরকার। দেখা যায়, মেলায় গিয়ে অনেকে স্টল খুঁজে পান না। তাই স্টলের জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যেক লাইনের শুরুতে ওই লাইনের কতগুলো স্টল আছে ও সেগুলোর নাম লেখা সাইনবোর্ড রাখা যেতে পারে। আরও ভালো হয়, যদি প্রত্যেকটা লাইন বা রো’কে নাম্বার দিয়ে সুনির্দিষ্ট করা যায়। তাহলে কত নম্বর লাইনে স্টল আছে, তা জানা গেলেই সহজে স্টল খুঁজে পাওয়া যাবে।

আবার যেহেতু জানুয়ারিতে নির্বাচনের কথা আছে। ওই নির্বাচনের পরে স্বাভাবিকভাবেই নতুন সরকার গঠন করা হবে। সুতরাং তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন থাকবে, সেটাও ভাবার বিষয়। তাই বাংলা একাডেমিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়টা বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে আমরা চাইবো একটি সুন্দর মেলা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, মেলা যেন পরিপাটি হয়; মানুষ আসতে পারে—সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অনুবাদের পারিশ্রমিক অনেক কম: শেহজাদ আমান 

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?রবিউল কমল: আমি ঠিক অসঙ্গতি বলবো না। কিন্তু আমার কয়েকটি কথা আছে—বলতে পারেন পরামর্শ। প্রথমত দেখা যায় মেলা শুরুর দিনেও স্টলে কাজ চলছে। এটি খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার। যেহেতু মাসব্যাপী মেলা চলে, তাই স্টলের কাজ মেলা শুরুর আগেই শেষ হওয়া উচিত। তাহলে মেলার মাঠে গিয়ে পাঠককে হাতুড়ির খটখট শব্দে বিরক্ত হতে হবে না। আরেকটি বিষয় হলো, মেলায় অনেকে শিশুদের নিয়ে যান। আবার বিশেষ শিশুরাও থাকে। তাই তাদের বিশ্রামের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা উচিত। সেখানে শিশু বা প্রতিবন্ধীরা ছাড়া কেউ বসতে পারবেন না। এমন ব্যবস্থা থাকলে কিন্তু তাদের জন্য সুবিধা হবে।

আবার মেলার মাঠে প্রচুর ধুলা উড়তে দেখা যায়। এতে যাদের এলার্জি আছে, তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিশুদের শ্বাসকষ্ট হয়। তাই এটাও বিবেচনায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে ধুলা কমানো যায়, নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়—সেটা নিয়ে বাংলা একাডেমিকে ভাবতে হবে।

জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?রবিউল কমল: এখন দশ বছর আগের সঙ্গে তুলনা করলে বলতে হবে বইয়ের বিক্রি কমেছে। এটা কিন্তু খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কারণ সময়ের সঙ্গে মানুষ আপডেট হয়েছে। পড়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করছে। আগে কিন্তু পড়ার জন্য শুধু প্রিন্ট বই ভরসা ছিল। এখন প্রিন্ট বই ছাড়াও ই-বুক পাওয়া যাচ্ছে, বিভিন্ন অ্যাপে গিয়ে বই পড়া যাচ্ছে। তাই বইয়ের বিক্রি কিছুটা কমেছে। কিন্তু পাঠক সেভাবে কমেনি। মানুষ আগের মতোই বই পড়ছে, শুধু মাধ্যম বদলে গেছে। আগে প্রিন্ট বই পড়তো, এখন ই-বুক পড়ে, অ্যাপে বই পড়ে। তাই আমি বলব, পাঠক বেড়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন মাধ্যমে বইপড়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় প্রিন্ট বইয়ের বিক্রি হয়তো কিছুটা কমেছে। তবে সেই কমার হারটা আশঙ্কাজনক নয়। আসল কথা হলো—বইয়ের পাঠক বেড়েছে, সেটাই স্বস্তির।

আরও পড়ুন: বইয়ের প্রচারণাকে আমি ইতিবাচক মনে করি: মোহাম্মদ নূরুল হক 

জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?রবিউল কমল: এখন কিন্তু আর আগের সময় নেই। অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটায়। সেখানে আরেক জগত তৈরি হয়েছে। তাই বইয়ের জায়গাতে পরিবর্তন আনতে হবে। বইয়ের প্রচারণায় পরিবর্তন আনতে হবে। বই কিন্তু প্রকাশ করা হয় বিক্রির জন্য। প্রকাশক লাভ করতেই বই প্রকাশ করেন। তাই আমার কাছে বই একটি পণ্য। আর যে কোনো পণ্যের প্রচারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমিও তাই বইয়ের প্রচারণাকে খুব ইতিবাচকভাবে দেখি। এখন লেখক বেড়েছে। কিন্তু কে কোন বিষয়ে লিখছেন, কী লিখছেন সেটা পাঠক জানেন না—পাঠকের কাছে এ তথ্য পৌঁছানো খুবই জরুরি। এজন্য প্রচারণা ভালো মাধ্যম। শুধু প্রচারণাই পারে একটি বইকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে। বাইরের দেশে কিংবা বিশ্বের প্রথিতযশা লেখকরা অনেক আগে থেকেই বইয়ের প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি। তারা বই নিয়ে প্রমোশনাল ভিডিও বানাচ্ছেন, সেগুলো সোশ্যাল মাধ্যমে প্রমোটও করছেন। অথচ আমরা এখানে অনেক পিছিয়ে। আমার দৃষ্টিতে, বইয়ের প্রচারণা দরকার।

জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?রবিউল কমল: এখনকার পাঠক অনেক সচেতন। তাই তাদের জন্য পরামর্শ দেওয়ার কিছু নেই। তবে অভিভাবকদের কাছে একটি অনুরোধ, আপনার সন্তানের হাতে বই তুলে দিন। কারণ বই মানসিক বিকাশে সহায়তা করে, কল্পনার জগত বিস্তৃত করে, ইতিবাচক চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়। তাই আপনার সন্তানকে বই পড়তে উৎসাহিত করুন, তাদের বই কিনে দিন।

এসইউ/জিকেএস