আবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের নানা সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উচ্চ নিবন্ধন কর আরোপের অবস্থান থেকে সরে আসছে। একই সঙ্গে ঘোষিত এলাকাভিত্তিক কর আরোপের পরিবর্তে মৌজাভিত্তিক কর ধার্য করা হয়েছে। ফলে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে বাড়তি করের বোঝা কমছে ভোক্তার।
Advertisement
এনবিআর জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কৌশল ও কর কমানোর প্রস্তাব গত সোমবার (৩ অক্টোবর) অনুমোদন পেয়েছে। করনীতি সদস্য ড. সামস উদ্দিনের সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কর দ্বিগুণ করে সরকার। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং এই খাতে রাজস্ব আদায়ে ধস নামে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এনবিআর উৎসে কর আদায়ের পদ্ধতি বদলানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বিদ্যমান এলাকাভিত্তিক উৎসে কর হারের পরিবর্তে মৌজা ও শ্রেণিভিত্তিক (আবাসিক, বাণিজ্যিক, রিয়েল এস্টেট বা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকৃত জমি) কর আদায় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কোন এলাকায় জমি কিনতে কত কর
Advertisement
নতুন পদ্ধতিতে জমির পাঁচটি শ্রেণি করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- ক শ্রেণি: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাণিজ্যিক এলাকা (জমি বা প্লট)। খ শ্রেণি: ক শ্রেণিতে উল্লিখিত এলাকার আবাসিক। গ শ্রেণি: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, কিন্তু ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক এলাকা। ঘ শ্রেণি: গ শ্রেণিতে উল্লিখিত আবাসিক এলাকা। ঙ শ্রেণি: ক, খ, গ, ঘ শ্রেণি ব্যতীত অন্যসব এলাকা; দেশের পৌরসভা ও প্রত্যন্ত এলাকার জমি বা প্লট।
নতুন জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঢাকা জেলার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার অন্তর্গত সকল মৌজার ক্ষেত্রে শ্রেণিভিত্তিক করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। ক ও গ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা আদায় করা হবে। একই মৌজার খ ও ঘ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৬ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি এবং ঙ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী- ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলখুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকাসমূহ ও মহাখালী এলাকার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাসিক বা বাণিজ্যিক-উভয় শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোগ্য ছিল। সে হিসেবে নতুন জারি করা আদেশে জমির উৎসে কর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
আরও পড়ুন: আবাসনে লাগামছাড়া ব্যয়, অভিযোগের অন্ত নেই ক্রেতার
Advertisement
একইভাবে ঢাকা জেলার ধানমন্ডি, ওয়ারী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, বংশাল, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানার অন্তর্গত সকল মৌজার শ্রেণিভিত্তিক করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। ক ও গ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি, খ ও ঘ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৪ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি এবং ঙ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন আয়কর আইনে ঢাকার উত্তরা, সোনারগাঁও, জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলামোটর এবং কাকরাইল এলাকার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১২ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসেবে নতুন জারি করা আদেশে জমির উৎসে কর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
এছাড়া ঢাকা জেলার খিলক্ষেত, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা মডেল থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, চকবাজার থানা, কোতোয়ালি থানা, লালবাগ থানা, খিলগাঁও, শ্যামপুর ও গেন্ডারিয়া থানার সব মৌজার নতুন করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। ক ও গ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি, খ ও ঘ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ২ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি এবং ঙ শ্রেণির জন্য ভূমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে যেটা বেশি তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকার উত্তর-পশ্চিম বিমানবন্দর, মুগদা, রূপনগর, ভাষানটেক, বাড্ডা থানা, পল্লবী থানা, ভাটারা, শাহজাহানপুর, মিরপুর মডেল থানা, দারুস সালাম থানা, দক্ষিণখান থানা, উত্তরখান থানা, তুরাগ থানা, শাহ আলী থানা, সবুজবাগ থানা, কদমতলী থানা, কামরাঙ্গীরচর থানা, হাজারীবাগ, ডেমরা ও আদাবর থানা, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও কালিগঞ্জ থানার সব মৌজা, নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও থানার সব মৌজার ক ও গ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৪ লাখ টাকা, খ ও ঘ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ঙ শ্রেণির জন্য ৮ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি এক লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলার খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও কোতোয়ালি থানার সব মৌজা, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর থানার সব মৌজা, গাজীপুর জেলার সদর, বাসন, কোনাবাড়ি, গাছা, টঙ্গী পূর্ব, টঙ্গী পশ্চিম থানার সব মৌজার ক ও গ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকা, খ ও ঘ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ বা এক লাখ টাকা এবং ঙ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৮০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
আরও পড়ুন: কর বাড়ায় কমেছে ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন, রাজস্ব আহরণে ভাটা
আর ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই উপজেলার সব মৌজা, চট্টগ্রামের আকবর শাহ, ইপিজেড, কর্ণফুলী. চকবাজার, চান্দগাঁও, ডবলমুরিং, পতেঙ্গা, পাঁচলাইশ, বন্দর, বাকলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামি ও সদরঘাট থানার সব মৌজা এবং নারায়ণঞ্জ জেলার আড়াই হাজার থানার সব মৌজার ক ও গ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ২ লাখ টাকা, খ ও ঘ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ বা ৮০ হাজার টাকা এবং ঙ শ্রেণির জন্য ৬ শতাংশ অথবা কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেই হারে উৎসে আয়কর দিতে হবে।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্য সিটি করপোরেশন এলাকা ও অন্য কোনো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা সদরে অবস্থিত সব পৌরসভার অন্তর্গত সব মৌজার ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৬ শতাংশ, জেলা শহরের বাইরের পৌরসভার ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ এবং পৌরসভা ব্যতীত অন্য সব মৌজার জন্য ২ শতাংশ উৎসে কর ধার্য করা হয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন পদ্ধতিতে জমির ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই উপকৃত হবেন।
আগের সবধরনের জমির রেজিস্ট্রেশনে একই হারে কর ছিল। এখন কর কমানোর পাশাপাশি মৌজাভিত্তিক ও জমির শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। এতে আবাসিক জমি কেনাবেচার খরচ কমবে।
এসএম/এমআরএম/এএসএম