মো. আবুবকর সিদ্দিক ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাইবান্ধা সদর উপজেলার কিশামত মালিবাড়ী মুন্সিপাড়া গ্রামে। তিনি দারিয়াপুর আমান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি এবং লেংগারবাজার আইডিয়াল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে স্নাতক এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর পাস করেন।
Advertisement
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার অনুভূতি কেমন?মো. আবুবকর সিদ্দিক: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মেলবন্ধন কার না ভালো লাগে! প্রাপ্তি সততই আনন্দের ও গর্বের। ৪১তম বিসিএস আমার প্রথম বিসিএস ছিল। এ বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তি আমাকে পরম আনন্দিত ও উদ্বেলিত করেছে। নিজের জন্য যতটুকু না আনন্দিত হয়েছি, তার চেয়ে পারিপার্শ্বিক সব শুভাকাঙ্ক্ষীর আনন্দ দেখে বেশি আনন্দবোধ করেছি। এ প্রাপ্তি ও স্বীকৃতি একইসঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি ও অনুপ্ররেণার বাতিঘর। এখনো প্রজাতন্ত্রের জন্য কাজ করছি, নিয়োগপ্রাপ্তির পরও প্রজাতন্ত্রের জন্যই কাজ করতে হবে; পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে এখনকার চেয়ে দায়িত্ব, কর্তব্য ও সেবার আওতা বা সুযোগ নিঃসন্দেহে বেড়ে যাবে। যা মনোসন্তুষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে সবার কল্যাণার্থে যদি কিছুটা কাজও করতে পারি, তবেই এ প্রাপ্তির পরম সার্থকতা অর্জিত হবে।
আরও পড়ুন: যেভাবে শিক্ষা ক্যাডার হলেন হামিদুল্লাহ
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মো. আবুবকর সিদ্দিক: একটা সময় মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতি আমার তীব্র ঝোঁক ছিল। মেরিন টেকনোলজিতে ভর্তিও হয়েছিলাম। পরে পারিবারিকসহ অন্য কারণে সিভিল জবের দিকে আকৃষ্ট হই। স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সিভিল জব সম্পর্কে আমার ধারণা বেশ অপ্রতুল ছিল। স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পর ক্যাম্পাসেরসহ অন্য অনেক ভাইয়া-আপুকে বিভিন্ন পেশায় সফল হতে দেখেছি। তাদের সফলতা মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। সব পেশা ও আমার সার্বিক দিক বিবেচনায় স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শেষ দিকে গিয়ে মোটামুটি মন স্থির করে ফেলি যে বিসিএসেই বসবো। তারপর থেকেই বিসিএসে পথচলা শুরু।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই। প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন? মো. আবুবকর সিদ্দিক: আমি মূলত স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শেষদিক থেকে বিসিএসকেন্দ্রিক পড়ালেখা শুরু করি। এর আগে মন যা চাইতো তা-ই পড়তাম। গোয়েন্দা উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি বেশি পড়া হতো। চাকরির এ-বই ও-বই কিনে নাড়াচাড়া করতাম ঠিকই, কিন্তু পড়া সেভাবে হতো না। কখনো কখনো জিআরইর জন্য পড়েছি আবার কখনো আইবিএ ও বিআইবিএমে স্নাতকোত্তর করার লক্ষ্যে পড়েছি। যদিও নানাবিধ কারণে কোনো পরীক্ষাতেই বসা আমার হয়ে ওঠেনি। বিসিএস প্রস্তুতির শুরুতেই সিলেবাস আর বিগত বিসিএসগুলোর প্রশ্নাবলি দেখে নিয়েছিলাম। ফলে পড়ার সময় কোথায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা বুঝতে পেরেছিলাম। প্রিলি প্রস্তুতিকালীন আমি বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিজ্ঞান, গণিত, মানসিক দক্ষতা, শব্দার্থ ও অনুবাদ পার্টগুলো নিয়মিত দেখতাম; যা লিখিত পরীক্ষার জন্য দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করেছে। আমার বর্তমান চাকরি ভাইভায় আত্মবিশ্বাসী থাকতে অনেকাংশেই সহায়তা করেছে। ৪১তম বিসিএস প্রিলির পরপরই আমার বেপজাতে চাকরি হয়ে যায়। ফলে চাকরিতে থেকেই আমার ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় বসতে হয়েছে। জবের পাশাপাশি পড়ালেখা করা বেশ কঠিন। দিন যতই বাড়ে; ততই কঠিন হয়ে যায়। তবে সুতীব্র ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো পরিস্থিতিতে থেকে সাফল্যকে আলিঙ্গন করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: কঠোর পরিশ্রম করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছি: সোহান
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন? মো. আবুবকর সিদ্দিক: বাবা-মা-ই জগতের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তাদের জন্য ভালো কিছু করার তাড়নাটা বরাবরই ছিল। এছাড়া শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী, বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাইসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন, যারা বরাবরই আমাকে মানসিক শক্তি জুগিয়ে গেছেন, বিপদে-আপদে পাশে থেকেছেন। আমাকে নিয়ে তাদের বিশ্বাস ও চাওয়া-পাওয়াগুলো সত্যিই আমাকে দায়বদ্ধ করে তুলেছিল। তাদের দোয়া ও উৎসাহ এবং আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বদৌলতে স্রষ্টা আমায় সফলতা দিয়েছেন, এছাড়া অন্য কিছু নয়।
Advertisement
জাগো নিউজ: নতুনদের প্রস্তুতি নিয়ে আপনার সার্বিক পরামর্শ কী?মো. আবুবকর সিদ্দিক: প্রত্যেক মানুষই অমিত শক্তি ও সম্ভাবনার অধিকারী। অনেকেই তার শক্তি ও সম্ভাবনার ক্ষেত্র সম্পর্কে জানেন না। প্রথমে সেই ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে। বিসিএস লক্ষ্য হলে, সেখানে পৌঁছানোর কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতকরণ, যথাযথ কর্মকৌশল নির্ধারণ ও তদনুযায়ী কাজ শুরু করতে হবে। এতেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়। নিজের শক্তি-সামর্থ ও দুর্বলতা খুঁজে বের করে কৌশলীভাবে লেখাপড়া করলে সফলতা সহজেই ধরা দেয়। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মেলবন্ধনে কর্মে শান্তি ও আনন্দ প্রাপ্তি ও নিজেকে উৎসর্গ করা যায়। কাউকে অনুকরণ করে নয় বরং নিজের লক্ষ্য খুঁজে বের করে সেটি অর্জনে নিয়মিত নিরলসভাবে কাজ করলে সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য। সাফল্যের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। চলার পথে অনেক সময় ছন্দপতন ঘটবে, অনেক দুঃখ-ক্লেশ আসবে। এগুলোকে মোকাবিলা করে সাফল্যকে আলিঙ্গন করা যায় বলেই জীবন পরমানন্দময়। স্বপ্নপূরণে যারা নিরলসভাবে কাজ করেন, তারা সফল হন। হোক সেটা দুদিন আগে বা দুদিন পরে।
আরও পড়ুন: ভাইভা বোর্ডে ফার্স্ট ইম্প্রেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ
অনুজদের প্রতি পরামর্শ থাকবে, নিজেকে কখনোই দুর্বল ভাবা চলবে না। বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী ছেড়ে দেওয়াও বোকামি। বর্তমান প্রেক্ষাপট যেমনই হোক না কেন, একাডেমিক পড়ালেখা একেবারেই জলাঞ্জলি দিয়ে স্নাতকের শুরু থেকেই চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার পক্ষপাতী আমি নই। সময়ের কাজ সময়ে করা উচিত। স্নাতকের প্রথম তিনটি বর্ষে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি ইংরেজিতে কথা বলা, পত্রিকা পড়া, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত কাজে দক্ষতা আনা ও ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ের চর্চাসহ আত্মোন্নয়নমূলক নানাবিধ কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে। তবে কেউ যদি আগে থেকে পড়তে চান; তবে পরামর্শ থাকবে যেন ইংরেজি আর গণিতের ভিত্তিটা মজবুত করে নেন। কারণ হঠাৎ করেই এ বিষয়ে হাত আসে না। এ দুই বিষয়ের মজবুত ভিত্তি দ্রুত সফলতা আনতে সাহায্য করে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মো. আবুবকর সিদ্দিক: সুস্থতা ও মান-ইজ্জতের সঙ্গে দুনিয়ায় জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে পারলেই সার্থকতা অর্জিত হবে। পেশাগত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন ও তার সফল বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করার অভিলাষ রয়েছে।
এসইউ/এমএস