পর্যটন শিল্পে ফেনীর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ শিল্পের বিকাশে প্রয়োজন সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ। মাত্র ৯৮৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঐতিহাসিক জেলাটি দেশের মানচিত্রে খুব কম স্থান দখল করলেও পর্যটন শিল্পে রাখতে পারে বিশাল অবদান।
Advertisement
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় দেশের বৃহত্তম মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এ এলাকার চিত্তাকর্ষক নৈসগিক শোভা ও মনোমুগ্ধকর অসংখ্য দৃশ্য বিদ্যমান।
আরও পড়ুন: কাশফুল দেখতে ঘুরে আসুন বৃন্দাবনে
২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৮৭ সালে নির্মিত মুহুরী সেচ প্রকল্পের ৪০ গেট বিশিষ্ট রেগুলেটর ও ক্লোজার ড্যামটি দেখতেও আকর্ষণীয়। এছাড়া নদীর পাডে সবুজ বনানী ঘেরা মায়াবী পরিবেশ। শীতকালে অতিথি পাখির আগমন ও তাদের কলকাকলী যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
Advertisement
নদীতে নৌকার সারি মাছ ধরা ও নৌকা ভ্রমণের দৃশ্য ভ্রমণপিপাসু মানুষদের আকৃষ্ট করে। প্রতিবছর শীতে বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক ও পিকনিক পার্টির আগমন ঘটে এখানে। সেখানকার মৎস্য খামারগুলোও দেখার মতো।
বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন হওয়ায় এখানে নৌ বন্দরও গড়ে তোলা যেতে পারে। সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের সঙ্গে দ্বিমুখী সড়ক যোগাযোগ ভৌগলিক অবস্থান, পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে দারুণ দর্শনীয় স্থান।
তবে এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি রেষ্ট হাউজ ছাড়া থাকা খাওয়ার আর কোনো সুব্যবস্থা নেই। এতে দর্শনার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়। এছাড়া শহরের মধ্যেই অসংখ্য দৃশ্য বিদ্যমান।
আরও পড়ুন: কুয়াকাটা ট্যুরে কোন কোন স্পট ঘুরে দেখবেন?
Advertisement
ফেনী বড় মসজিদের অনতিদূরে আছে আধ্যাতিক সাধক পাগলা মিয়ার মাজার। শহরের কেন্দ্রস্থলে আছে ঐতিহাসিক রাজাঝির দিঘি। প্রাচীরঘেরা দীঘির চারপাশে আছে প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা। আরেকটি ঐতিহাসিক দিঘি আছে শহর থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিমে।
রাজা বিজয় সিংহের স্মৃতি ধারণ করে আছে সুবিশাল বিজয়সিংহ দিঘি। এ দিঘির পাড়গুলো অনেক উঁচু। ক্লান্ত জীবন থেকে একটু প্রশান্ত নিতে শহরবাসী ছাড়াও দেশে বিভিন্ন স্থান এখানে মানুষ আসে।
দিঘি ও সবুজ বনানীর দৃশ্য ছাড়াও পাশে আছে সার্কিট হাউজ। এছাড়া শহরের অদূরে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের স্মৃতি বিজডিত পুরোনো বিমান বন্দর, আছে গালর্স ক্যাডেট কলেজ, কম্পিউটার ইনস্টিটিউট।
সোনাগাজীর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আরও আছে ইরি বোরো ধানের ওপর গবেষণার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান সোনাগাজী ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট। এখানে কর্মরত আছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
আরও পড়ুন: কুয়াকাটাকে হার মানাবে ছইলার চর
সোনাগাজী বাজার সংলগ্ন স্থানে আছে হাঁস নিয়ে দেশের একমাত্র গবেষণাগার আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার। পাশে আরও আছে মেষের লোম দিয়ে হাতের তৈরি উন্নত ধরনের কার্পেট বুনন শিল্প।
ফেনীর প্রাচীন দর্শনীয় স্থানের মাঝে আছে সদর থানার শর্শদি গ্রামে পূর্ববঙ্গের স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের দ্বিতীয় রাজধানী ছিল। ওই সময়ের কিছু কিছু নিদর্শন সেখানে আজও বর্তমান।
শর্শদিতে সুলতান মুবারক শাহের প্রতিষ্ঠিত একটি সেনানিবাস ও হাম্মাম খানাও আছে। এছাড়া শর্শদি মসজিদ ও সাগর দিঘি আজও সেই শাসকের স্মৃতি বহন করছে। ফেনী শহর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে ফতেহপুর গ্রামে পুরোনো কেল্লা আছে।
আরও পড়ুন: সাফারি পার্কে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?
শমসের গাজীর ঐতিহাসিক স্মৃতি নিদর্শন
ভাটির বাঘ শমসের গাজী আনুমানিক ১৭১০ সালে আধুনিক ফেনী জেলার নিজকঞ্জরা গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম পীর মোহাম্মদ ও মাতার নাম কৈয়ারা বেগম। এখানে দর্শনীয় স্থান হলো শমসের গাজীর বাড়ীর সুরঙ্গ পথটি। এটি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। লম্বায় ৫০ ফুট।
কথিত আছে, গাজীর পরিবারের সদস্যরা ওই পাশের নর্দমায় পুকুরে যাতায়াতের জন্য সুড়ঙ্গটি তৈরি করেছেন। শমসের গাজীর মায়ের নামে কৈয়ারা দিঘি খনন করেন। শিলুয়ার শিল পাথর বিশাল প্রাচীন ধ্বংসবিশেষ।
সবগুলোর বেলে পাথর। সম্ভবত মূল মূর্তির ওপর থেকে ভেঙ্গে পড়া দুটি অংশ দু’পাশে পড়ে আছে। ছাগলনাইয়ার চম্পক নগরে আছে এসব ঐতিহাসিক নিদর্শন। ছাগলনাইয়ায় এছাড়া আছে দর্শনীয় সাত মন্দির।
আরও পড়ুন: শুধু বর্ষা নয়, শরতের টাঙ্গুয়ার হাওর একটু বেশিই সুন্দর
এছাড়া আছে শুভপুর ব্রীজ মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এখানে যুদ্ধ হয়। এখানে আছে ঐতিহাসিক বিলোনীয়া স্থল বন্দর ফেনী থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে পরশুরামের বিলোনীয়ায় ১৯৬৫ সালের আগে বিলোনীয়া চেক পোষ্ট স্থলবন্দর হিসাবে চালু হয়।
সেসময় ভারতীয় পণ্য সামগ্রী চট্টগ্রাম বন্দরে আনা নেওয়া হত এ রেলপথে। ১৯৯৭ সালের ১৬ আগষ্ট অলাভজনক ঘোষণা করে রেল বিভাগ এটিকে বন্ধ ঘোষণা করে। বর্তমানে স্থলবন্দরটি আবার চালু হয়েছে।
অপরদিকে ফেনী শহরের অদূরে কাশিমপুর গ্রামে আছে ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প ও কামার সম্প্রদায়। আবার ছাগলনাইয়ার চম্পক নগরের মৃৎশিল্পও ঐতিহ্যের ধারক বাহক।
আরও পড়ুন: ১৮ ঘণ্টা পানির নিচে থাকে যেই দ্বীপ
চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ
ফেনীর পূর্বাঞ্চলের স্বনামধন্য জমিদার ছিলেন চাঁদগাজী ভূঞা। তার নির্মিত চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ মোঘল স্থাপত্যের অনুকরণে এক অপূর্ব সৌধমালা এখনও দর্শক পর্যটকদের বিস্মিত করে।
ফেনীর অচিন বৃক্ষ বাংলাদেশের উদ্ভিদ জগতে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বিরল প্রজাতির এ গাছটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। এটিও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
এসব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোও পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণ হতে পারে। এসব নিদর্শন দেখার জন্য সারা বছরই ভিড় করছে দর্শনার্থীরা।
ফেনী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি আইনুল কবির শামীম বলেন, ‘এসব নিদর্শনগুলো রক্ষায় ও পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে করে ফেনীর পর্যটন শিল্প থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করা সম্ভব হবে।’
জেএমএস/এএসএম