রাজনীতি

নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে ‘মাথাব্যথা’ নেই বিএনপির

# আন্দোলন-বহির্বিশ্বের তৎপরতায় আওয়ামী লীগের পরাজয় নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি।# নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার মূল ভরসা পশ্চিমা গোষ্ঠী।# তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে নির্বাচনী চিন্তা বাদ দিয়ে আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছে বিএনপি।# সরকারের পদত্যাগ জরুরি, এরপর নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে আলোচনা।

Advertisement

চলতি বছরের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে প্রায় তিন মাস। নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আর বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে এখনো অনড় বিএনপি। নির্বাচনকালীন সরকারের সময়সীমা বা কারা থাকছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই দলটির। এই মুহূর্তে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করাই তাদের একমাত্রা লক্ষ্য।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কোনো প্রক্রিয়া হলে তখন এর নেপথ্যে যারা কাজ করবেন, তাদের ওপর নির্ভর করবে সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে বা প্রতিনিধিত্ব কারা করবেন।

ড. মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল

Advertisement

আরও পুড়ন>> পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করুন, সরকারকে রিজভী

নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। দলটি চায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী— নভেম্বরের শুরু দিকে তফসিল আর জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে তফসিল ঘোষণার আর মাত্র একমাস সময় হাতে থাকলেও বিএনপি নির্বাচনী চিন্তা বাদ দিয়ে আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছে।

আরও পড়ুন>> শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কেন নির্বাচনে যাবে, প্রশ্ন নজরুলের

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের একজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, বিলুপ্ত ৯০ দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের নতুন রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। বিগত ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাকে ভিত্তি ধরে নতুন রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের যে সংস্কার দরকার, এর জন্য ন্যূনতম দুই বছর লাগতে পারে বা পরে তা আরও বাড়তে পারে।

Advertisement

‘নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার মূল ভরসা পশ্চিমা গোষ্ঠী। নিরপেক্ষ সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট তৈরি হলে পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারতও যুক্ত হতে পারে। ওই সরকারে তাদের চাওয়া অনুযায়ী পছন্দের প্রতিনিধি বা মতামতও থাকতে পারে।’

সেই সরকারের প্রতিনিধি বা সময়কাল নির্ধারণেও পশ্চিমা কূটনৈতিকরা মুখ্য ভূমিকা রাখবেন। নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার মূল ভরসা পশ্চিমারা। নিরপেক্ষ সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট তৈরি হলে পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতও যুক্ত হতে পারে। ওই সরকারে তাদের চাওয়া অনুযায়ী পছন্দের প্রতিনিধি বা মতামতও থাকতে পারে।

আরও পড়ুন>> সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না: মির্জা আব্বাস

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার বলেন, আগে সরকারের পদত্যাগ জরুরি। তারপর ৯০ দিনের যে সরকার ব্যবস্থা সেটাই হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আগামীকাল হলে সেই নির্বাচনী অংশ নিতে প্রস্তুত বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের সময়সীমা যত কম হবে সেটা চাই। ১৭ বছর ধরে আমরা নির্বাচনের বাইরে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতায় যাবো। আমরা কেন নিরপেক্ষ সরকারের মেয়াদ বাড়াতে চাইবো।

‘চাইলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ অল্পসময়েও তৈরি করা যায়’

এ নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি চায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক বা দল নিরপেক্ষ সরকার। কিন্তু এর আগের প্রধান কাজ হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ। বিএনপির আলোচনা করছে, ৯০ দিন মেয়াদি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল সেটি নিয়ে। কিন্তু এখানে যারা দূতিয়ালি করবেন বা সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব মেনে নেয়, এখন যারা এটি নিয়ে কাজ করবে তারা সময়সীমা নির্ধারণ করবে। আমাদের প্রাথমিক দাবি সরকারের পদত্যাগ। সেটি হওয়ার আগে পরের বিষয় নিয়ে এ মুহূর্তে দর-কষাকষির কিছু নেই।

আরও পড়ুন>> তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদের বিক্ষোভ

নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন করছে সেই সরকারের সময়সীমা কতদিন তা নিয়ে দলে কোনো আলোচনা আছে কি না এমন প্রশ্নে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আগে ৯০ দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, সেটি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছি। সরকার যদি কেয়ারটেকার সরকারে রাজি হয়, তবে সেটিতে কারা থাকবে বা মেয়াদকাল কী হবে সবাই মিলেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। আর যদি গণঅভ্যুত্থান হয়, যেমন এরশাদ সরকারের জাতীয় পার্টিকে বাদ রেখে অন্য দল বসে আলোচনা করেছিল কীভাবে কেয়ারটেকার হবে, অনুরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আগামীকাল হলে সেই নির্বাচনী অংশ নিতে প্রস্তুত বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের সময়সীমা যত কম হবে সেটা চাই। ১৭ বছর ধরে আমরা নির্বাচনের বাইরে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতায় যাবো। আমরা কেন নিরপেক্ষ সরকারের মেয়াদ বাড়াতে চাইবো।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বাইরে কিছু ভাবছে না বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে বা প্রতিনিধি কারা থাকবেন সেটি পরের বিষয়।

আরও পড়ুন>> ‘কাঠগড়ায়’ বিএনপির নেতৃত্ব নির্বাচন

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের ভাষ্যমতে, চাইলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ অল্প সময়েও তৈরি করা যায়।

তিনি বলেন, আমরা জানি যে অনেক সংস্কার করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে কেউ হয়তো বলতে পারেন যে এসব সংস্কার করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তারপরে আমরা একটা নির্বাচন করবো, তারপর গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। এটা কেউ বলতেই পারেন। আবার কেউ এটাও বলতে পারেন যে, এটা কয়েকমাসেই করা সম্ভব। আসলে আমাদের কাছে এটাও এখন মুখ্য প্রশ্ন নয়। আমাদের মুখ্য প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রানজিশন (মধ্যবর্তী সময়)।

আরও পড়ুন>> তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না: জয়নুল আবেদীন

কেএইচ/এমএএইচ/জেআইএম