ফেনীতে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পূর্ব বিরোধের জেরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে তাদের হত্যা করা হয় বলে দাবি স্বজনদের। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তারা।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দিনগত রাতে পৌরশহরের মধ্যম বিরিঞ্চি ফকির বাড়ি রনি হোসেনের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মাইদুল ইসলাম শাহাদাত সপ্তম আর রাহাদুল ইসলাম গোলাপ দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তাদের মরদেহগুলো ময়না তদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্তানদের শোকে বার বার জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে মা পলি আক্তার আর বাবা রনি পাগল প্রায়।
স্থানীয়রা জানান, রাতে খাবার খেয়ে রনি ও তার স্ত্রী এক রুমে আর তাদের দুই সন্তান মাইদুল ও রাহাদুল পাশের রুমে ঘুমি পড়েন। দিনগত রাত ১টার দিকে দুই সন্তানের রুমে আগুন লাগে। বাইরে থেকে ঘরের মূল দরজা আটকানো থাকে। সন্তানদের চিৎকারে বাবা-মা টের পেলেও বাইরে যেত না পারায় নির্বিকার ছিলেন। এরপরও টয়লেটের পানি ছিটানোর চেষ্টা করেন। তবে আশপাশের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তাদের চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও রনির দুই ছেলে মারা যায়।
Advertisement
বড় ছেলে মাইদুলের দগ্ধ মরদেহ খাটের ওপর থেকে আর আর ছোট ছেলে রাহাদুল ইসলাম গোলাপকে খাটের নিচ থেকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাহাদুলও মারা যায়।
পূর্ব বিরোধের জেরে পেট্রল ঢেলে পাশের বাড়ির প্রতিপক্ষরা আগুন লাগিয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।
আগুন নেভাতে আসা কয়েকজন জানান, আগুন নেভাতে গিয়ে ঘরটির প্রধান দরজার বাইরে থেকে রশি দিয়ে বেঁধে দেওয়া ছিল। এতে ধারণা করা যায় হত্যার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা আগুন দেওয়ার আগে ঘরে তালা দিয়েছে।
নিহত দুই শিশুর বাবা রনি বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে অনুমতি ছাড়া প্রতিবেশী জনি আর আনোয়ার তাদের এক স্বজনের মরদেহ দাফন করতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর থেকেই দফায় দফায় আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা। এর জেরেই তারা এ অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে।
Advertisement
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রনি বলেন, চোখের সামনেই আগুনে পুড়ছে আমাদের দুই শিশু সন্তান। আগুনের ভেতর থেকে বাঁচতে চেয়ে তারা আত্মচিৎকার করে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও আগুনের লেলিহান শিখা থেকে শেষ রক্ষা করতে পারিনি তাদের।
স্থানীয়দের পাশাপাশি স্বজনদের এমন অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। ঘটনার পরপরই সেখানে যান মেয়র।
ফেনী মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসজে/এএসএম