খেলাধুলা

পাঁচ ম্যাচ জিততে পারে বাংলাদেশ: তুষার ইমরান

বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র একদিন। বাংলাদেশ দল তাদের তাদের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। একটিতে জিতেছে, হেরেছে একটি। তবে দুই ম্যাচেই টাইগারদের পারফরম্যান্স ছিল বেশ আশা জাগানিয়া।

Advertisement

ওয়ানডে ফরম্যাটে অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ ভালো দল। বিশ্বকাপের আগে কিছুটা এলোমেলো হলেও এই দল ভালো কিছুই করবে, এমন আশা ভক্ত-সমর্থকদের। জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটার তুষার ইমরান তো মনে করেন, বাংলাদেশ এবার ৫টা ম্যাচও জিততে পারে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও আশা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তুষার ইমরান।

জাগো নিউজ: বিশ্বকাপ খেলতে যে দলটি গেছে, সেটা কেমন মনে হচ্ছে আপনার?

Advertisement

তুষার ইমরান: ভারতের মাটিতে দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ দেখলাম, দেখার পর মনে হচ্ছে টিম খারাপ না। ভালো।

বেশি কথা উঠেছিল তামিম ইকবালকে নিয়ে। তামিমের না থাকা নিয়ে বিতর্কের ঝড়। আমার জানামতে তামিম হয়তো বিশ্বকাপের পরে অবসরে চলে যেতো। তামিম টিমে থাকলে দলটা আরও ভালো হতো।

জাগো নিউজ: এই দলের কাছে আপনার প্রত্যাশা কতটা?

তুষার ইমরান: আমার মূল প্রত্যাশা হলো বিশ্বকাপে নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়া।

Advertisement

জাগো নিউজ: সেটা কেমন?

তুষার ইমরান: একটু ভেঙেই বলি। আমরা সর্বশেষ তিন বিশ্বকাপে মনে হয় সর্বোচ্চ তিনটা করে ম্যাচ জিতেছি। কোনোবারই চার ম্যাচ জিততে পারিনি। আমি এবার সেই তিন জয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন দেখি।

আমার বিশ্বাস, আশা এবার বাংলাদেশ আগের যে কোনোবারের চেয়ে বেশি ম্যাচ জিতবে। আমার প্রত্যাশা থাকবে এইবার চারটা থেকে পাঁচটা ম্যাচ জেতার। সেমিফাইনাল বা ফাইনাল খেলবো, তেমন না।

আমার মনে হয় সরাসরি সেমিফাইনাল বা ফাইনালের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে না নেমে ওয়ান বাই ওয়ান ম্যাচ ভাবা উচিত। সেভাবে ফোকাস করে ম্যাচ বাই ম্যাচ জেতার লক্ষ্য রেখে আগালে মনে হয় গোটা পাঁচেক ম্যাচ জেতা সম্ভব। আর সেটা হলে বুঝবো উন্নতি হচ্ছে। আমার বিশ্বাস আমরা যদি আফগানিস্তানের সাথে প্রথম খেলায় জয় দিয়ে শুরু করতে পারি, তাহলে এবার আমরা ৫টা ম্যাচ জিততেও পারি। অনেক কিছু নির্ভর করবে প্রথম ম্যাচের ওপর।

জাগো নিউজ: এই দল নিয়ে কি সত্যিই ৫ ম্যাচ জয় সম্ভব? ঘুরিয়ে বললে সাকিব বাহিনীর কি বিশ্বকাপে ৫ খেলায় জেতার সামর্থ্য আছে?

তুষার ইমরান: আমার তো মনে হয় আছে। দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ দেখলাম। পারফরম্যান্স খারাপ হয়নি। আশাব্যাঞ্জকই বলা যায়। এর বাইরে ধরেন প্রায় শেষ ১ যুগ ধরে আমরা ওয়ানডেতে ভালো ক্রিকেট খেলছি। বরং এশিয়া কাপ আর আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের সাথে শেষ দুই ওয়ানডে হোম সিরিজে আমরা তেমন ভালো খেলিনি। মানে সুনাম অনুযায়ী খেলা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের গ্রাফ তত ভালো না। মনে হয় আমরা একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছি। আর তেমন উন্নতি করতে পারিনি।

আমাদের ব্যাটাররা ঠিক যথাযথ দায়িত্ব নিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ব্যাট চালাতে পারছে না। আমাদের ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাব। জায়গামত ব্যাটাররা নিয়ামক ভূমিকা নিতে পারেনি। অথচ ব্যাটাররা দায়িত্ব নিয়ে ভালো ব্যাটিং করতে পারলেই আমরা জয়ের স্বাদ পাই। বেশিদূর পিছনে যেতে হবে না।

এইতো সেদিন ভারতের গুয়াহাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম প্র্যাকটিস ম্যাচের দিকেই তাকান। বোলাররা লঙ্কানদের ২৬০'র ঘরে আটকে রাখলো। তরপর ব্যাটাররা ভালো খেললো আমরা অনায়াসে ওই রান টপকে পেলাম ৭ উইকেটের দারুণ এক জয়। ঠিক পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথেই আবার ব্যাটিং ব্যর্থতা। মানে ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। আর তাই ইংলিশদের সাথে পরের ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতার খেসারত দিয়ে হারলাম আমরা।

জাগো নিউজ: ব্যাটিং ব্যর্থতা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন কি?

তুষার ইমরান: বোলাররা আসলে নিয়মিত ভালো বল করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভালো করার দায়িত্বটা ব্যাটারদেরও। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটা ভালো না হলে কিন্তু আপনি ভালো ফল করতে পারবেন না। ব্যাটাররা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারছে না। তাদের ব্যাটে নিয়মিত রান আসছে না। তাই সেভাবে জয় ধরাও দিচ্ছে না।

জাগো নিউজ: প্রস্তুতি ম্যাচ দুটি নিয়ে কিছু বলুন।

তুষার ইমরান: প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথমটিতে ব্যাটাররা ভালো খেলেছে। আমরা ২৬৩ তাড়া করে হেসেখেলে ৭ উইকেটের অনায়াস জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছি। ওই খেলায় তিন তিনজন ব্যাটার দায়িত্ব নিয়ে খেলে ফিফটি করেছে। ম্যাচ শেষ করেও ফিরলো।

কিন্তু যখনই আমাদের আগে ব্যাট করে একট বড়সড় স্কোর গড়ে প্রতিপক্ষকে টার্গেট সেট করে দেওয়ার সময় আসে, তখনই ব্যাটিংটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটাররা তাদের দায়িত্ব ভুলে যাচ্ছে। ব্যাটিংয়ের অবস্থা হঠাৎ একটু খারাপ হয়েছে, তার প্রমাণ হলো শেষ কয়েকটা খেলায় আমরা পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারছি না। আগেই অলআউট হয়ে যাচ্ছি।

জাগো নিউজ: কেন নির্ধারিত ৫০ ওভার পুরো ব্যাট করা সম্ভব হচ্ছে না? এটা কি প্রতিপক্ষর বোলিংয়ের কারণে নাকি নিজেদের দুর্বলতা বা ঘাটতির কারণে?

তুষার ইমরান: নাহ, কোনোটাই না। আমার মনে হয় আমাদের ব্যাটিংয়ে হঠাৎ একটু বেশি টি-টোয়েন্টির মেজাজ ও ধরন চলে এসেছে। মাঝে বেশ কিছু চেঞ্জ এসেছে। কিছু প্লেয়ার মাঝে দলে এসেছিল যারা মূলত টি-টোয়েন্টি প্লেয়ার। যেমন-আফিফ, শামিম পাটোয়ারী ছয় ও সাত নম্বরে খেলেছে। তারা ইনিংসটাকে বড় করতে পারেনি। টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলতে গিয়ে একটু বেশি তাড়াহুড়ো করেছে। সেটা বাকিদের মাঝে সংক্রমিত হয়েছে। তাই ইনিংসের শেষ দিকের ব্যাটিংটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।

জাগো নিউজ: তাহলে আপনি কি ব্যাটারদের ওপরই সব দায়দায়িত্ব অর্পন করতে চান?

তুষার ইমরান: না, না। তা বলছি না। খেলা হবে ভারতের মাটিতে। সেখানে ‘ট্রু উইকেট’। বেশিরভাগ পিচই ব্যাটিং বান্ধব। তাই ব্যাটারদের ভালো খেলা জরুরি। রান করাটাও খুব দরকারি। কিন্তু বোলারদের ভূমিকাও কিছু কম নয়। বোলারদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। মূল চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে বোলারদের। কারণ খেলা হবে ব্যাটিং বান্ধব পিচে। ভালো বোলিং করতে পারলে প্রতিপক্ষকে ২৮০’র আশপাশে বেঁধে রাখা সম্ভব। আর যদি খারাপ বোলিং করে, তখন প্রতিপক্ষ ৩০০ থেকে ৩৫০ করে ফেলবে। আর এই ‘ট্রু উইকেটে’ যদি ব্যাটাররা খারাপ ব্যাটিং করে তার দায়দায়িত্ব আসলে তাদেরই বহন করতে হবে।

জাগো নিউজ: পেস বোলিং নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। পেস বোলিং সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?

তুষার ইমরান: অবশ্যই আমাদের পেস বোলিংয়ের মান বেড়েছে। ডোনাল্ড ফাস্টবোলিং কোচ হয়ে আসার পর হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজ, শরিফুল সবার উন্নতি হয়েছে। তিনজনই উইকেটের দু দিকে সুইং করাতে শিখেছে। তাসকিন হয়তো অত সুইং করাতে পারে না। তবে তার গতি আছে। সেও উন্নতি করেছে। দুই দিকে বল ম্যুভ করাতে পারে তরুণ তানজিম সাকিব।

জাগো নিউজ: কিন্তু ভারতের ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচে পেসার কি কার্যকর কিছু করার সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকবে? তুষার ইমরান: কেন থাকবে না? আপনি যদি ভালো জায়গায় বল ফেলতে পারেন, তাহলে আপনাকে মারাটা অবশ্যই কঠিন। যে কোনো ব্যাটারই হোক না কেন আর পিচ যত ব্যাটিং ফ্রেন্ডলিই থাকুক না কেন, যদি ভালো জায়গায় বল পিচ করে তাহলে হাত খুলে মারা কঠিন।

তারওপর যদি কোনো বোলার নিজের কারিশমায় বল সুইং করাতে পারে, তাহলে সফল হওয়া সম্ভব। ইংল্যান্ডের সঙ্গে হাসান মাহমুদের বলে হ্যারি ব্রুকের বোল্ড হবার দৃশ্যটি কল্পনা করুন। আউট সুইং করাতে করাতে হঠাৎ ইনসুইং করে উইকেট উপরে দিলো আমাদের তরুণ ফাস্টবোলার হাসান মাহমুদ।

ভারতের পিচে ভারতীয় ফাস্টবোলারদের উন্নতির মূলে আছে বাড়তি গতি, সুইং ও বৈচিত্র্য। আমাদের পেস বোলাররা যদি জোরের সাথে দুই দিকে সুইং করাতে পারে, তাহলে অবশ্যই আমাদের বেশি ম্যাচ জেতা সম্ভব।

এআরবি/এমএমআর/আইএইচএস