দেশজুড়ে

এক হাতে ভর করে চলে দিনমজুর শাহ আলীর সংসার

জীবন যুদ্ধে হার না মানা সৈনিক মো. শাহ আলী (৪৪)। দুর্ঘটনায় নিজের একটি হাত হারিয়েও দিনমজুরি করেই চালাচ্ছেন সংসার। ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী শাহ আলী। হাত হারানোর পর হারিয়েছেন নিজের বসত ভিটাটিও। এখন অন্যর জমি ভাড়া নিয়ে ঘর বানিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনো রকম দিন পার করছেন তিনি।

Advertisement

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়নের দ্বীপ চর গতিয়াশাম গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ আলী। লেখাপড়া না থাকায় কৃষি কাজ ও দিনমজুরি করেই চলতো তার সংসার। এলাকায় কাজ না থাকলে ছুটতেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। তেমনি একবার বগুড়ায় ধান কাটতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি হাত হারান তিনি। এর কিছুদিন পরই তার একমাত্র সম্বল বসত ভিটাটিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। তার পুরো পরিবার জুড়ে নেমে আসে অন্ধকার। এরপরও হাল ছাড়েননি তিনি। ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজেকে প্রতিবন্ধী না ভেবে এক হাত নিয়েই ধরেন সংসারের হাল। আগের চেয়ে উপার্জন কমলেও পরিবারকে বাঁচাতে দিন রাত পরিশ্রম করে চলছেন শাহ আলী।

আরও পড়ুন: সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে লাইফ সাপোর্টে মা, দরকার সহযোগিতা

শাহ আলীর জাগো নিউজকে বলেন, আমার ১৬ শতক ভিটেমাটি ছিল। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলতো। এলাকায় কাজ না থাকলে জেলার বাইরে ধান কাটতে যেতাম। ২০২১ সালে বগুড়া ধান কাটতে যাওয়ার পথে ট্রাক আর সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় একটি হাত হারাই। তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। এক মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি আসি। ক্ষত না শুকাতেই শুরু হয় নদী ভাঙন। এক রাতেই তিস্তা আমার ভিটেমাটি কেড়ে নেয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় দ্বীপ চরে ১০ শতক জমি ভাড়া নিয়ে ঘর বানিয়ে পরিবার নিয়ে থাকছি। প্রতি বছর পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এক বছর ধার দেনা করে কোনো রকম চলার পর কিছুটা সুস্থ হলে আবারও কাজ শুরু করি। কষ্ট হলেও এক হাতে মাটি কাটা, ধান কাটা, বাদাম চাষ করাসহ সংসারে যাবতীয় কাজ করি। তবে আমার এক হাত নেই বলে সহজে কেউ কাজে ডাকে না। কাজ থাকলেও আমাকে সবাই এড়িয়ে চলে। কেউ মায়া করে ডাকলে সেদিন কাজ জুটে। আর না হয় বেশিরভাগ দিনই বেকার থাকতে হয়। আমি ভিক্ষা বৃত্তিকে ঘৃণা করি। না খেয়ে মরলেও জীবনে আল্লাহ যেন এই ভিক্ষা বৃত্তি না করায়।

আরও পড়ুন: সেই বৃদ্ধার ভাতার ব্যবস্থা করলেন ইউএনও

শাহ আলীর স্ত্রী মোছা. আকলিমা বেগম বলেন, আগে মোটামুটি ভালো ছিলাম। স্বামীর হাত হারানোর পর প্রায় তিন বছর ধরে আমরা কষ্টে আছি। সরকার তিনমাস পর দুই হাজার ২০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা দেয় তা দিয়ে কি আর সংসার চলে। ভাড়া জমিতে বাড়ি করে আছি। বছর শেষ না হতেই তাদের টাকা দিতে হয়। আমাদের চারটা মেয়ে একটা ছেলে সন্তান নাই যে সংসারের হাল ধরবে। কষ্ট হলেও ওই মানুষটার এক হাতের ওপর ভরসা ছাড়া উপায় নেই। দিন যতই যাচ্ছে সংসারে খরচের সঙ্গে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। আল্লাহ জানে ভবিষ্যতে আমাদের কপালে কি আছে।

প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম বলেন, শাহ আলী পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছে। এক হাতের ওপর ভর করে চলছে তার সংসার। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। সরকার যে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয় তাই দিয়ে কি আর এতগুলো মানুষের জীবন চলে।

Advertisement

ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আ. কুদ্দুস বলেন, দুর্ঘটনায় এক হাত হারিয়ে শাহ আলী পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন।তার নামে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি বেসরকারি ভাবে পরিবার চলার মতো কোনো সহযোগিতা পেলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা দুর হবে।

আরও পড়ুন: টাকার অভাবে বন্ধ শিশু আয়শার চিকিৎসা, সহযোগিতা চান বাবা-মা

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, বিষয়টি এই মাত্র জানলাম। শাহ আলী আবেদন করলে চিকিৎসা ছাড়াও স্বাবলম্বীর হতে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/জেএস/জিকেএস