বগুড়ার কাহালুতে সন্তান অপহরণ আতঙ্কে দিন পার করছে বিষ্ণপুর গ্রামের ৫০০ পরিবার। হুমকি দিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বাড়ির দেওয়ালে লিফলেট সাঁটানোর ২৪ ঘণ্টা পরও কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
Advertisement
সোমবার (২ অক্টোবর) উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মাজগাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, মোল্লাপাড়া ও দপ্তরিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামবাসীরা এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। দুর্বৃত্তরা শনাক্ত ও গ্রেপ্তার না হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে শঙ্কা কাটছে না তাদের। গ্রামবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশের একটি ও র্যাবের দুটি দল সার্বক্ষণিক সেখানে টহল দিচ্ছে।
দেখা গেলো, অভিভাবকরা সঙ্গে থেকে তাদের সন্তানদের স্কুল, মাদরাসায় নিয়ে যাচ্ছেন আবার নিয়ে ফিরে আসছেন। অনেকে সন্তানদের কাছে রেখে বাড়িতে বসে আছেন। এমনকি বাইরে খেলাধুলা করতেও যেতে দিচ্ছেন না।
দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিষ্ণুপুর গ্রাম পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন।
Advertisement
পরে গণমাধ্যমকে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে দুর্বৃত্ত কেউই তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। জেলা পুলিশের একাধিক দল ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। গোয়ান্দা পুলিশ সাদা পোশাকে গ্রামে নজরদারি চালাচ্ছে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে রোববার সন্ধ্যায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৫ শতাধিক বাড়ির দেওয়ালে লিফলেট, টাকা না দিলে সন্তানদের অপহরণ হুমকি
এরআগে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে দুর্বৃত্তরা কাহালুর বিষ্ণুপুর গ্রামের সন্তানদের অপহরণের হুমকি দিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বাড়ির দেওয়ালে কথিত শ্যাডো বাহিনী লিফলেট সেঁটে দেয়। রোববার ভোরে বাড়ির সামনে এসব লিফলেট দেখে গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
লিফলেটে বিভিন্ন বাড়ির আর্থিক ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে ২০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হয়েছে। ৬ অক্টোবরের মধ্যে চাঁদার টাকা ওই গ্রামের লোয়া পুকুরপাড়ে সোলার লাইটের সঙ্গে থাকা বক্সে কাগজে নিজের নাম লিখে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় দুর্বৃত্ত চক্র। অন্যথায় ৭ অক্টোবরের পর গ্রামের ছেলেমেয়ে হারিয়ে গেলে কোনো কিছু করার থাকবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। চাঁদা দাবিকারী কে বা কারা তা না খুঁজে অল্পকিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে না ফেলার ব্যাপারেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
Advertisement
এতে আরও লেখা রয়েছে, ‘দয়া করে চাঁদা দিয়েন। আমরা ছেলেগুলো ভালো না।’ লিফলেটের শেষে প্রেরকের স্থানে ইংরেজিতে ‘শ্যাডো’ লিখে ডানে ও বামে ফেসবুকের ইমোজি ব্যবহার করা হয়েছে।
বিষ্ণুপুর গ্রামের দপ্তরিপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, ‘কেউতো শনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি, আতঙ্ক কাটবে কীভাবে? এখন না হয় পুলিশ-র্যাব আছে, কয়েকদিন বাদে কেউ থাকবে না। আজও ছেলেকে স্কুলে যেতে দেইনি। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।’
বিষ্ণুপুর গ্রামের মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আঁখি আক্তার বলেন, ‘মেয়েকে আজ আমি নিজে মাদরাসায় নিয়ে যাওয়া আসা করেছি। প্রতিদিনতো আর সম্ভব না। এভাবে চললে গ্রাম ছাড়তে হবে।’
মুরইল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) জাহিদুল হক বলেন, গ্রামের কিছু মানুষের আতঙ্ক কেটেছে আবার কিছু মানুষের কাটেনি। তবে পুলিশ ও র্যাব সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। গ্রামের সবার দাবি জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।
র্যাব-১২ বগুডার কোম্পানি কমান্ডার (পুলিশ সুপার) মীর মনির হোসেন বলেন, কাহালুর ঘটনায় ছায়াতদন্ত চলছে। পাশাপাশি ওই গ্রামে টহলসহ নজরদারি অব্যাহত আছে।
এসআর/এমএস