সাজ্জাদ হোসেন চিশতী। পেশায় একজন গণমাধ্যমকর্মী। ঢাকায় জন্ম হলেও পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় আনন্দপুর ইউনিয়নে। তিনি কর্মজীবনের ব্যস্ততায় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ছুটে গিয়েছেন বহুবার। দেখেছেন পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র। মুগ্ধ হয়েছেন নানা জেলার নানা সংস্কৃতি দেখে।
Advertisement
চেখেও দেখেছেন বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার। এভাবে সফর করতে করতে ৬৪ জেলার পাশাপাশি ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ২৮ দেশে। ৬৪ জেলায় সফর ও বিশ্বের ২৮ দেশে ভ্রমণের নানা অভিজ্ঞতা ও গল্প ভাগাভাগি করেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।
আরও পড়ুন: সাজেক ভ্যালিতে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?
জাগো নিউজ: ৬৪ জেলা ভ্রমণের পরিকল্পনা কিভাবে মাথায় এলো?
Advertisement
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: কোনো পরিকল্পনা ছিল না। যেহেতু আমি গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত তাই কাজের সুবাদে প্রায় সময় রাজধানীর বাইরে যেতে হতো। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রতিনিধি সম্মেলন হতো। এটিও একটি কারণ নানা জেলা ও বিভাগে যাওয়ার।
এভাবে যেতে যেতে একসময় দেখলাম আমার অনেকগুলো জেলা সফর হয়ে গেছে। তারপর ইচ্ছে হলো একেক জেলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও খাবারের স্বাদ নেওয়ার। এভাবে যেতে যেতে একদিন খেয়াল করলাম আমার ৬২ জেলায় পা রাখা শেষ। বাকি ছিল শুধু কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর। তারপর এই দুটি জেলাও ঘুরে দেখলাম। এভাবে আমার ৬৪ জেলায় ভ্রমণ সম্পন্ন হলো।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর মাঝে ভিনগ্রহের দ্বীপ ‘সকোত্রা’
জাগো নিউজ: সবগুলো জেলা ঘুরে দেখতে কত বছর সময় লেগেছে?
Advertisement
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: ২০১১-২০২৩ সালের ভেতর আমি সবগুলো জেলা ঘুরে দেখেছি। কর্মজীবনের দায়িত্বের জন্য অন্য জেলায় যাওয়া আর পারিবারিক ট্যুর মিলে সর্বমোট ১২ বছর সময় লেগেছে।
জাগো নিউজ: এখন পর্যন্ত ভ্রমণের সঙ্গী কারা কারা ছিলেন?
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: কোনো বন্ধুবান্ধব ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক সফরটাই বেশি ছিল। সেই হিসেবে আমার সহকর্মী ও পরিবারকেই সফরসঙ্গী হিসেবে বেশি পেয়েছি। আমার মা, সহধর্মিণীকে নিয়েও অনেক জেলায় ঘুরেছি।
এছাড়া ভাই, বোন, বোন জামাই নিয়েও অনেক জেলায় বেড়াতে গিয়েছি। যেমন উত্তরবঙ্গ পুরোটাই শীতের মাঝে পারিবারিকভাবে ঘুরে শেষ করেছি। খাবার নিয়ে যেমন বিড়ম্বনা হয়েছে তেমনই নতুন নতুন অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুয়াকাটা ট্যুরে কোন কোন স্পট ঘুরে দেখবেন?
জাগো নিউজ: কোন জেলা ঘুরে সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি নিয়ে এসেছেন?
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: আমার সব থেকে সুন্দর স্মৃতি হচ্ছে সিলেটে। ইচ্ছে ছিল হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর মাজার জিয়ারত করে, আল্লাহর কাছে দাম্পত্য জীবন সুখের জন্য দোয়া চাইবো। তাই বিয়ের একদিন পরেই আমার নববধূকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যাই।
খুব ভোরবেলা পৌঁছে গিয়েছিলাম। ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর ৪টা বাজে। চারদিকে তখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার। গা ছমছমে পরিবেশ। তাও ৬ টার আগে প্রধান ফটক খুলবে না। তবুও আমরা সেখানেই অবস্থান করি।
ভোর ৬টা বাজে দরজা খোলে। এরপর আমরা মাজার জিয়ারত করি। এই যে বাইরে রাতের দৃশ্য উপভোগ করা যা খুবই রোমাঞ্চকর এক অভিযানের মতো। এটি আমার সুন্দর স্মৃতির একটি।
আরও পড়ুন: কাশফুল দেখতে ঘুরে আসুন বৃন্দাবনে
জাগো নিউজ: বাংলাদেশে আপনার প্রিয় জেলা কোনটি?
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: আমার সবচেয়ে প্রিয় জেলা কক্সবাজার। ২০০৫ সালে আমি প্রথম কক্সবাজার যাই। ২০০৫-২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৬৭ বার কক্সবাজার গিয়েছি। যতবার সেখানে যাই মনে হয় নতুন কোন ঠিকানায়, নতুন পরিবেশে এসেছি।
জাগো নিউজ: কোন জেলা ঘুরে আপনার মনে হয়েছে যে এই জেলার মানুষের আন্তরিকতা বেশি?
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: উত্তরবঙ্গের মানুষের আন্তরিকতা বেশি মনে হয়েছে। তারা খুবই মিশুক। তাদের খাবারও খেতে খুব সুস্বাদু। সহজ-সরল ও সুন্দর মনের মানুষ তারা।
জাগো নিউজ : ব্যক্তিগত সফর নাকি কর্মময় জীবনের সফর কোনটা বেশি কাছে টানে?
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: আমি আমার কর্মজীবনটা ভীষণ উপভোগ করি। জেলা বা বিভাগীয় সম্মেলনে যখন যাই অনেক প্রতিনিধিরা দেখা করতে আসে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে ভালোই লাগে।
আরও পড়ুন: দিনাজপুর ভ্রমণে ঘুরে আসুন ‘৬ সাগরে’
তাদের জেলা-উপজেলা সম্পর্কে নতুন কিছু জানা , তাদের চাওয়া-পাওয়া, আবেগ, উচ্ছ্বাস আমাকে খুব টানে। বলতে পারেন ব্যক্তিগত সফর থেকেও কর্মময় জীবনের ঘোরাঘুরি আমি বেশি উপভোগ করি।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের বাইরে আর কোন দেশ আপনার পছন্দ?
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: আমি এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৮ দেশ ভ্রমণ করেছি। আমার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে মক্কা-মদিনা।
কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কতবার সেখানে যেতে চান আমি বলবো বারবার মক্কা-মদিনার মাটিতেই যেতে চাই। এটা ভ্রমণের জন্য হোক বা ধর্মীয় কারণে কিংবা আমার ওমরার জন্যই হোক না কেন।
আরও পড়ুন: ঘুরে আসুন সিলেটের সবুজ পাহাড়ের পাশে শাপলার রাজ্যে
জাগো নিউজ: মক্কা-মদিনার পর কোন দেশ আপনার কাছে বেশি সুন্দর মনে হয়েছে?
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: মক্কা-মদিনার পর আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে ভারত। সময় পেলেই আমি সেখানে ছুটে যাই। কারণ তাদের একেকটি প্রদেশ একেকটি দেশের মতো। যেমন আপনি যদি মুম্বাইতে যান একরকম লাগবে, দিল্লি মনে হবে আরেক রকম।
দুটি প্রদেশের ভাষা হিন্দি হলেও উচ্চারণে পার্থক্য আছে। আবার কোলকাতায় গেলে বাংলা ভাষা শুনে ভালো লাগবে। আমাদের বাংলার সাথে মিল আছে। ঘুরে দেখার মতো পাহাড়-নদী অনেক কিছু আছে। একেকটি প্রদেশের একেক রকম সৌন্দর্য। দার্জিলিংয়ের পাহাড় ভালো লাগবে।
শিমলা-মানালির পাহাড় দেখেও মুগ্ধ হবেন। আর কাশ্মীরের সৌন্দর্যটা দুইরকম। একটা হচ্ছে শীতকালে, আরেকটা গরমকালে। গরমকালে পুরোটা সবুজ, শীতকালে পুরোটা বরফে ঢাকা চাদরের মতো। সব মিলিয়ে মক্কা-মদিনার পর আমার কাছে ভারত ভালো লাগে।
আরও পড়ুন: একদিনেই ঘুরে আসুন মিরসরাইয়ের বোয়ালিয়া ঝরনায়
জাগো নিউজ: তরুণ প্রজন্ম যাদের বাজেট কম কিন্তু বাংলাদেশ ঘুরে দেখার প্রবল ইচ্ছা তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
সাজ্জাদ হোসেন চিশতী: আমাদের অনেকের ধারণা দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া মানেই অধিক খরচ। আসলে এমনটি মোটেও নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক অভ্যন্তরীন ট্রাভেল এজেন্সি গড়ে উঠেছে। যারা স্বল্প মূল্যে কক্সবাজার, সাজেকের মতো স্থানে ঘুরিয়ে আনছে।
সর্বোচ্চ ২ থেকে ৪ হাজার খরচে ভালোভাবেই ঘোরা যাচ্ছে দূরের জেলাগুলো। তাদের ব্যবস্থাপনাও খুব ভালো। যদি পরিকল্পনা করে যান তাহলে খরচ আরও বাঁচবে। ধরুন আপনি শুধু পাহাড় দেখবেন তাহলে খাগড়াছড়ি , বান্দরবান, রাঙামাটি দেখে আপনি চলে আসলেন।
আরও পড়ুন: ১৮ ঘণ্টা পানির নিচে থাকে যেই দ্বীপ
তারপর আপনি যদি কক্সবাজার যান তাহলে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন দেখে চলে আসলেন। যদি সিলেট যান তাহলে আশেপাশে সুনামগঞ্জ, তাহেরপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চা বাগান ইত্যাদি দেখে চলে আসলেন। এক কথায় প্ল্যান করে গেলেই স্বল্প খরচে আপনি অনেকগুলো জেলা ঘুরে দেখতে পারবেন।
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/জেআইএম