জাতীয়

দুর্গাপূজাকে ঘিরে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা

দুর্গাপূজার দিনক্ষণ গণনা শুরু। এ উৎসবে প্রধান উপজীব্য প্রতিমা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। ১৪ অক্টোবর মহালয়ার আগেই শেষ করতে হবে প্রতিমা তৈরি। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। দেবী দুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মীকে আকৃতি দিতে ঘাম ঝরাচ্ছেন তারা।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার বাংলা বাজার, শাঁখারী বাজারে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমা শিল্পী আর সহযোগীরা মিলে বানাচ্ছেন দুর্গাপূজার প্রতিমা। মাটি আর খড় পানি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে এসব প্রতিমা। এরপর এতে দেওয়া হয় রঙ।

শারদীয় দুর্গা পূজায় এক সেট প্রতিমার জন্য দেবী দুর্গা ও তার চার সন্তান- সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মীকে বানানো হয়ে থাকে। পাশাপাশি থাকে অসুর, সিংহ, হাঁস, প্যাঁচা ও সাপ।

আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এটি সার্বজনীন

Advertisement

বাংলা বাজার শিরিস দাস লেনের বল্লভ জিঁউ মন্দিরে বানানো হচ্ছে ১২টি দুর্গাপূজার সেট। সেখানে কাজ করছেন বলাই চন্দ্র চন্দ্র পাল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর ১২টি কাজের অর্ডার পেয়েছি। বেশিরভাগ ঢাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপের। ঢাকার বাইরে থেকে দুটি অর্ডার পেয়েছি। পূজার জন্য সাধারণত তিন মাস আগে থেকে কাজ শুরু করতে হয়। আমার প্রতিমার কাজ প্রায় শেষ, এখন শুধু রঙ দিয়ে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পালা।

তিনি আরও বলেন, করোনার পর মাটি-খড়ের দাম বেড়ে গেছে। এখন প্রতি সেট প্রতিমার জন্য ৭০ হাজার টাকা নেই। দাম নির্ভর করে প্রতিমার ছোট-বড় ও ডিজাইনের ওপর।

এসময় পাশে বসে দেবী দুর্গাকে সাজাচ্ছিলেন নিতাই পাল। তিনি বলেন, এই পেশায় কাজ করে পূজার উৎসবের সময়ই শুধু আনন্দ। সারাবছর তেমন কাজ থাকে না। বাকি দিন কষ্ট করে চলতে হয়। তরুণরা আসতে চান না এ পেশায়। আমরা যারা আগে থেকে শিখেছি তারাই প্রতিমা বানাচ্ছি।

শাঁখারী বাজারে শিমুলিয়া শিল্পালয়ের পল্টন পাল বলেন, আমাদের দোকান ছোট। দুই-তিনজন মিলে কাজ করি। এখন দুর্গাপূজায় কাজ কম। তবে বছরের অন্যান্য সময় সরস্বতী পূজা, কালী পূজা, অন্যান্য পূজার জন্য প্রতিমা তৈরি করি।

Advertisement

আরও পড়ুন: মুসলিমদের আয়োজনে ৬০ বছর ধরে দুর্গাপূজা

শাঁখারী বাজারের প্রতিমা শিল্পী হরিপদ পাল। তিনি ৩০ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। জাগো নিউজকে বলেন, অসুস্থ হয়ে গেছি। এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারি না। অনেক অর্ডার আসে, কাজ করার সেই শক্তি নেই। দুজন সহযোগী নিয়ে কাজ করছি। এবার নিজেদের পূজামণ্ডপের জন্য, আর লক্ষ্মীবাজারের একটি মণ্ডপের জন্য বানাচ্ছি।

হরিপদ পাল বলেন, অন্যান্য জিনিসের মতো খড়-মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন খরচ বেড়েছে। এছাড়া প্রতিমা তৈরির কাজ এখন কেউই শিখতে চায় না। এ পেশায় কাজের অভাব। দুর্গাপূজা ছাড়া বছরের অন্যান্য দিন শিল্পীদের বসে থাকতে হয়।

আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়া, চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। এরপর ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ উৎসব।

আরএ/জেডএইচ/জিকেএস