দেশজুড়ে

৩ বছরেও মেলেনি পাকা ভবন, গরমে অতিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থী

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বরাদ্দ চাওয়ার তিন বছরেও পাকা ভবন পায়নি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চারটি কক্ষের একটি টিনশেড স্কুলঘরে নানান প্রতিকূলতা সহ্য করে পাঠদান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে তপ্ত রোদে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণাও পোহাতে হয় তাদের। একটু বৃষ্টি হলেই শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে হয়। তখন পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়ে।

Advertisement

বিদ্যালয়ের পাশেই পানপাড়া-জামালপুর সড়ক। কিন্তু নেই নিরাপত্তা দেওয়াল। এতে শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুঁকিতে থাকেন শিক্ষক-অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের সভাপতিও অন্য উপজেলার বাসিন্দা।

এসব সমস্যায় জর্জরিত রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রোববার (১ অক্টোবর) দুপুরে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাইন উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক গৌরী রায় চৌধুরীসহ অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া যায়।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যালয়ের জমি ৩৫ শতাংশ। কিন্তু খতিয়ানভুক্ত হচ্ছে মাত্র ১৫ শতাংশ। ১৯৭০ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়। তখন বিদ্যালয়ে একটি পাকা ভবন ছিল। ওই ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নিলামের মাধ্যমে তা অপসারণ করে। এরপর বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চার কক্ষের টিনশেড ঘরটি নির্মাণ করা হয়। তখন একটি পাকা ভবন বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বিদ্যালয় থেকেও একাধিকবার আবেদন করা হয়েছিল।

Advertisement

দীর্ঘ তিন বছর পার হলেও ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সবশেষ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও একটি ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, আবার কিছু শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে গেছে। এখন বিদ্যালয়টিতে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৬ জন শিক্ষার্থী আছে। এরমধ্যে ২৭ জন বালক ও ৪৯ জন বালিকা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য রাস্তার পাশে সুপারি গাছের কাঠি দিয়ে অস্থায়ী বেড়া দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, দক্ষিণ হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাইন উদ্দিন রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের বাসিন্দা। প্রতিদিন বাড়ি থেকেই তিনি নিজ কর্মস্থল রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের পানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। তিনি বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক। তবে তার বাড়ি থেকে দক্ষিণ হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার।

নুসরাত জাহান ও মায়েশা আক্তার আয়েশাসহ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, টিনের ঘরে গরমে ক্লাস করতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। তাদের একটি খেলার মাঠ নেই। অন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু তাদের বিদ্যালয়ে অনেক কম। এজন্য তাদের সহপাঠীও কম। বৃষ্টিতে পানি ঢুকে পড়ে শ্রেণিকক্ষে।

অভিভাবক নুরুল আমিন ও দেলোয়ার হোসেন জানান, তিন বছর আগে পাকাভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে টিনশেড ঘরটিতে কার্যক্রম চলছে। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। একটি পাকা ভবন দেবে বলে, এখনো দেয়নি। এখানকার শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্রুত বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনারোধে রাস্তার পাশে একটি নিরাপত্তা দেওয়ালও নির্মাণ জরুরি।

Advertisement

সহকারী শিক্ষক প্রীতু সাহা এ্যানি ও মো. ইসমাইল জানান, টিনশেড ঘর হওয়ায় প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে হয়। এখানে লোডশেডিংও বেশি হয়। বৃষ্টি হলে পানি ঢুকে মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পড়ে। শ্রেণিকক্ষে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অনেক কষ্ট পোহাতে হয় সবাইকে। প্রতিদিন সমাবেশ করার নির্দেশনা থাকলেও বৃষ্টি হলে তা সম্ভব হয় না। শীতকালেও নানান সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে প্রতি বছরই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে বিদ্যালয় থেকে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরী রায় চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা জন্য অন্তত ছয়টি কক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু টিনশেড ঘরটিতে চারটি কক্ষ। এরমধ্যে একটি অফিস ও তিনটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে দুই শিফটে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হয়। আমাদের একটি পাকা ভবন খুবই প্রয়োজন। একটি পাকা ভবন হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বাড়বে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাইন উদ্দিন মোবাইল জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় একবছর হলো বোর্ড কর্তৃক আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমার বাড়ি রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে। এজন্য সবসময় বিদ্যালয়ে আমার যাওয়া সম্ভব হয় না। বিদ্যালয়টি অনেক সমস্যায় জর্জরিত। একাধিকবার একটি ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ভবন দেওয়া হয়নি। শুনেছি জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা আছে।

লামচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়েজ উল্লাহ জিসান পাটওয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়টি প্রায়ই পরিদর্শন করি। এখানে সমস্যার শেষ নেই। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য একাধিকবার সংসদ সদস্যের সুপারিশ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী বৃদ্ধি ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে একটি ভবন প্রয়োজন।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, আমি নতুন। ঘটনাটি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বিদ্যালয়ের নাম তালিকাভুক্ত করে ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এসজে/জেআইএম