ওয়ানডে ক্রিকেটে বেশ কয়েকবছর ধরেই বেশ ধারাবাহিক বাংলাদেশ। দিন-ক্ষণ হিসেব করে বললে, ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে। সেবার ইংল্যান্ডের মত দলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিলো টাইগাররা। এরপর থেকেই ঘরের মাঠে এবং বিদেশের মাটিতেও ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেক সাফল্য বয়ে এনেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
Advertisement
ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে ওয়ানডে র্যাংকিংয়েও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সপ্তম স্থানটা ধরে রেখেছে। বিশ্বকাপে খেলার জন্য আইসিসি যে বাছাই পর্বের আয়োজন করেছিলো, ‘আইসিসি ওয়ার্ল্ড সুপার লিগ’ নামে সেখানে বাংলাদেশ সবার আগে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছিলো এবং শেষ পর্যন্ত হয়েছিলো তৃতীয়।
সে জায়গায়, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কাছে ভালো কোনো কিছু যে কেউ প্রত্যাশা করতেই পারে। ভারতের উইকেটগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনেক স্পষ্ট ধারণা আছে। আবহাওয়া-পরিবেশও প্রায় কাছাকাছি। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের কাছ থেকে ভালো কিছুই প্রত্যাশা করছেন দেশের নামী ক্রিকেট কোচ, ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব নাজমুল আবেদিন ফাহিম।
তার মতে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সামর্থ্য আছে, বিশ্বের যে কোনো শক্তিধর ক্রিকেট খেলুড়ে দেশকে চমকে দেয়ার। জাগো নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলা তার কথাগুলো প্রথম পার্ট তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল কেমন হলো?
নাজমুল আবেদিন ফাহিম: সামগ্রিক বিচার বিবেচনায় এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে আমার মনে হয় এটাই আমাদের সেরা দল। তামিমের অনুপস্থিতিতে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তির পর সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয় এটাই বর্তমান সময়ে আমাদের সেরা দল।
মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপ দলে রিয়াদের অন্তর্ভুক্তি ঠিকই আছে। তবে আমার মনে হয়, তাকে আরও ভালোভাবে তৈরি হওয়ার সুযোগ দেয়া যেত। তাকে যেহেতু নেয়াই হলো, তাই আমার মনে হয় তাকে আরও এক-দুটি সিরিজ খেলানো উচিৎ ছিল। আরও বেশি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেয়া যেত। তাহলে রিয়াদ নিজেকে তৈরি করার আরও সুযোগ পেত এবং মোটামুটি প্রস্তুত হয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যেতে পারতো।
একই কথা তরুণ ওপেনার তানজিদ তামিমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তার অন্তর্ভুক্তি ঠিক আছে; কিন্তু তাকেও আরও তৈরি হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়া যেত। যে আস্থা দেয়া প্রয়োজন ছিল তা দিতে পারিনি। এশিয়া কাপে এক ম্যাচ খেলিয়েই বসিয়ে রাখলাম। শেষ পর্যন্ত মনে হয়, না পারতে তাকে দলে নেয়া হলো।
Advertisement
একজন তরুণ ওপেনারের বিশ্বকাপ খেলার আগে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য যেমন অনুকুল পরিবেশ দরকার, তা কিন্তু পায়নি তানজিদ তামিম। তারপরও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে দারুন খেললো। অসাধারন কিছু শটস বেরিয়ে আসলো তার ব্যাট থেকে। তাকে কৃতিত্ব দিতেই হয়।
কাজেই আমার মনে হয়, সব দিক থেকে বিচার করলে এটাই এ মুহুর্তে আমাদের সেরা দল। দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল। ব্যাটিং, বোলিং এমনকি ফিল্ডিংয়েও এ দলটি বেশ চোস্ত।
জাগো নিউজ: এই দলে তামিমকে অনুভব করছেন কি না? তামিম যদি পুরোপুরি সুস্থ নাও থাকে, অন্তত ৭০ ভাগ সুস্থও থাকে, তারপরও কি দলে থাকতে পারতো না? বা রাখা দরকার ছিল না? আপনার কি মত?
ফাহিম: অবশ্যই। পারফরমার তামিম, ওপেনার তামিম তো অটো চয়েজ। এটা নিয়ে কোনই দ্বিমত নেই। সুস্থ থাকলে তার দলে থাকা নিয়ে হয়ত কোনই সংশয় ছিল না। থাকতোও না।
জাগো নিউজ: তাহলে না নেয়ার কারণ কী? সমস্যাটা কি ছিল আসলে?
ফাহিম: আমার মনে হয় তামিমকে নিয়ে আমরা বেশির ভাগ মানুষই একটু ভুল ভাবছি। আমার মনে হয় ৭০ ভাগ কেন, ৫০ ভাগ সুস্থ তামিমকে নিয়েও সমস্যা ছিল না। আসলে তামিম ইকবালের সমস্যা কিন্তু সেটা না।
তামিম এর ফিটনেসের ব্যাপারটা সম্পূর্ন ভিন্ন। তার ফিটনেসে ঘাটতির সমস্যা নয়। সেটা ৫০ ভাগ বা ৯০ ভাগ-এর ব্যাপার নয়। তামিমের সমস্যা হলো, সে যখন তখন বলে ফেলতে পারে আমি এ ম্যাচে আর খেলতে পারবো না। বা সমস্যাটা এমন যে, যে কোনো সময় তার খেলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে তার ব্যথা ও অস্বস্তি। এটা ওই ধরনের একটা ব্যাপার।
তখন কি হবে? তার জন্য আরেকটা ওপেনার রাখতেই হবে। কারণ সে কবে খেলবে বা আদৌ খেলতে পারবে কিনা? তা আগে থেকে জানার বা বোঝার কোনোই সুযোগ নেই। যখন-তখন তার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তামিম ফিট না, তার পরিবর্তে ওই ম্যাচে, কাকে খেলানো হবে। ব্যাপারটা হলো কোন খেলার মাঝপথে বা যখন-তখন তামিমের অস্বস্তি বা ব্যথা যাই বলি না কেন, দেখা দিতে পারে। তখন আর তার পক্ষে খেলা সম্ভব নয়। তার মানে পুরোই অনিশ্চিত একটা অবস্থা। তামিম কবে খেলবে, কবে খেলবে না, সেটা বোঝা বা আগাম জানার কোনোই সুযোগ নেই।
জাগো নিউজ: বলা হচ্ছে, তামিম ইনজাস্টিসের শিকার । আপনিও কি তাই বলবেন?
ফাহিম: আমার মনে হয় তামিম দলে ছিল। ফিটনেসের ব্যাপারটা না দেখা দিলে অবশ্যই দলে থাকতো। এমন একজন খেলোয়াড় যে, একমাসের বেশি সময় বাইরে থেকে মাঠে ফিরে এক ম্যাচ খেলেই আবার বাইরে চলে গেল, এটা আমার কাছে খুব অস্বাভাবিক ঠেকেছে। এমন অবস্থায় তার আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলার কথা। সেখানে তামিম এক ম্যাচ খেলেই আবার বিশ্রামে চলে গেল।
এটা আমার কাছে বেশ অস্বাভাবিক ঠেকেছে। না খেলাতেই মনে হয় প্রশ্ন উঠেছে। এমন যার অবস্থা তাকে দলে নেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, দুরদর্শী বা নিরাপদ, ঝুঁকিহীন হবে? সে প্রশ্ন আসে। না হয় এমনিতে তামিমকে নিয়ে কোন কথা নেই। সে অটোমেটিক চয়েজ। সন্দেহাতীতভাবে এক নম্বর ওপেনার।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে ইনিংসটা খেলেছে, সেটাও কিন্তু দারুণ। দেখে খুব ভাল লেগেছে। প্রধান নির্বাচকও বললেন, ফিটনেসের কারণেই তামিমকে নেয়া সম্ভব হয়নি।
জাগো নিউজ: যে দলটি হলো সে দলের কাছে আপনার প্রত্যাশা কতটুকু? এ দল কতদূর যেতে পারে?
ফাহিম: একটা কথা তো স্বীকার করতেই হবে যে, বিশ্বকাপে আমাদের সমান শক্তির ও কাছাকাছি সামর্থ্যের ৩ থেকে ৪টি দল আছে। তাদের সাথে যদি আমরা জিততে পারি, এর বাইরে যে সব দল আছে- যেমন আমি যদি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত ধরি, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিবেচনায় আনি, এই ৬ দল কিন্তু যথেষ্ঠ শক্তিশালী। তাদের সাথে শক্তিতে পেরে ওঠা কঠিন। তারপরও আমার মনে হয় যে, আমরা যদি মোমেন্টাম পাই, শুরুটা ভাল হয়, তাহলে যে কোনো সময় যে কোনো দলকে চমকে দিতে পারে আমাদের দল।
কারণ হলো, ভারতে বেশ কিছু উইকেট আছে, যেখানে আমাদের বোলিংটা লাগসই হবে। ভারতের সব উইকেটের চরিত্র কিন্তু এক নয়। আর বিশ্বকাপের উইকেটও যে আইপিএলের মত ব্যাটিং স্বর্গ হবে, তাও মনে হয় না আমার।
ভারতের কিছু শহরের কিছু নির্দিষ্ট ভেন্যু আছে, যার উইকেট একটু ভিন্ন। বল টার্ন করে। রাতে বল সুইং করে, টার্ন করে। আমাদের বোলিং শক্তির ওপর আমার বেশ আস্থা আছে। ব্যাটিংয়ে হয়ত কিছু ঘাটতি আছে। উদ্বোধনী জুটিতে ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট।
তারপরও আমরা যদি আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে শুরুটা ভাল করতে পারি, ব্যাটিংটা যদি ভাল হয়, ব্যাটাররা যদি স্কোরবোর্ডটাকে সতেজ, বড় করতে পারে- তাহলে মনে হয় বোলাররা তাকে ডিফেন্ড করতে পারবে।
অনেক কিছু নির্ভর করবে প্রথম ম্যাচের ওপর। প্রথম ম্যাচটা আমরা কিভাবে খেলি? তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। প্রথম ম্যাচ যদি ভাল খেলি, ফলটা যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে হয়ত আমাদের যে বিশ্বকাপ রেকর্ড, মানে সর্বোচ্চ ৩ জয়, সে ধারা থেকে বেরিয়ে আরও বেশি সংখ্যক খেলায় জয় ধরাও দিতে পারে।
এআরবি/আইএইচএস