গান শুনতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যে কোনো মিউজিক মানুষকে সামান্য হলেও মানসিক প্রশান্তি দেয়। তবে অনেকেই আছেন যারা দুঃখের গান বা স্যাড মিউজিক শুনতে বেশি পছন্দ করেন। জানলে অবাক হবেন, মানুষ কেন দুঃখের গান শুনতে পছন্দ করেন, এর কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে।
Advertisement
গবেষণা বলছে, বেশিরভাগ মানুষ মন খারাপের সময়ই স্যাড মিউজিক বা দুঃখের গান শুনতে পছন্দ করেন। যা তাদের নেতিবাচক আবেগ প্রকাশে সাহায্য করে। যা পরবর্তী সময়ে তাদেরকে আরও বাস্তববাদী হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: সঙ্গী পরকীয়ায় জড়িয়েছেন কি না বুঝবেন যেভাবে
তবে মেজাজ উন্নত করতে কেন দুঃখের গানগুলোই সাহায্য করে? আসলে কোনো দুঃখের গানের শব্দগুলো যখন কারো অভিজ্ঞতার কথা বলে, তখন সেটি শুনলে তাৎক্ষণিকভাবে অনুভব করি যে আমরা একা নই। আরও অনেকেই এমন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এসব ভেবে ইতিবাচক অনুভূতি জাগ্রত হয় মনে।
Advertisement
বিজ্ঞান কী বলছে?
দুঃখের গান শোনার মাধ্যমে মানসিক সুস্থতা মেলে, এমনটিই জানাচ্ছে বেশ কিছু গবেষণা। মিউজিক থেরাপি মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়, এমনকি মন-মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আরও যেসব উপকার মেলে জেনে নিন-
আরও পড়ুন: সঙ্গী পরকীয়ায় জড়ায় কেন?
প্রোলেকটিন হরমোন বাড়ায়
Advertisement
মানুষের দুঃখের সংগীত উপভোগ করার আরেকটি কারণ হলো প্রোলেকটিন হরমোন। স্তন্যদানের সঙ্গে এর গভীর সংযোগ ছাড়াও প্রোলেকটিনের বিভিন্ন মানসিক প্রভাবও আছে।
এটি পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই নির্গত হয়। দুঃখ বা অন্যান্য চাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এর বেদনানাশক প্রভাব আমাদের ব্যথা কমায়।
আরও পড়ুন: ব্রেকআপের কষ্ট ভুলতে করণীয় কী?
আপনি যখন শোকগ্রস্ত থাকেন, তখন প্রোলেকটিন প্রশান্তি ও সান্ত্বনার অনুভূতি তৈরি করে। দুঃখের গান প্রোলেকটিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। ফলে মানসিক কষ্ট ও চাপ থেকে সহজেই মুক্ত হওয়া যায়।
নস্টালজিক করে তোলে
গবেষণায় দেখা গেছে, দুঃখের গান সবাইকে পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। নস্টালজিক স্মৃতি মনে পড়ায় মেজাজ উন্নত হয়। বিশেষ করে যদি স্মৃতিগুলো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ মুহূর্তগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত হয় (যেমন- উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিয়ে, প্রেম)।
উদ্বেগ কমায়
সংগীতের মাধ্যমে উদ্বেগজনক আবেগ দূর হয়। এর মাধ্যমে রাগ ও দুঃখের মতো নেতিবাচক আবেগগুলো দূর করা যায়। যখন কেউ দুঃখের গান শুনে কান্না করেন; তখন হতাশা ও নেতিবাচক অনুভূতিগুলো মুছে যায়।
আরও পড়ুন: চোখের পাতা কেঁপে ওঠে কেন?
মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়
গানের কথা ও সুর সবাইকেই প্রভাবিত করে। বিশেষ করে দুঃখের গান শোনার মাধ্যমে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্যাড মিউজিক শ্রোতাকে কষ্টদায়ক পরিস্থিতি (বিচ্ছেদ, মৃত্যু ইত্যাদি) থেকে দূরে সরে যেতে ও এর পরিবর্তে গানের দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।
সঙ্গ দেয়
কেউ যখন প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে থাকে বা একাকিত্ব অনুভব করে; তখন সংগীত সঙ্গ দেয়। দুঃখের সংগীতকে কাল্পনিক বন্ধু হিসেবে কষ্টের সময় অনুভব করা যেতে পারে।
গান শোনার মাধ্যমে আবেগ, মেজাজ, স্মৃতি ও মনোযোগ প্রভাবিত হয় বলে প্রমাণিত। এ কারণে মানসিক প্রশান্তি পেতে মিউজিক থেরাপি বেশ কার্যকরী।
আরও পড়ুন: ডিপ্রেশনের লক্ষণ কী কী?
ওষুধের চেয়েও কার্যকরী
সংগীত আবার ওষুধের তুলনায় কম ব্যয়বহুল, শরীরের জন্য ভালো ও এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই (ফিন অ্যান্ড ফ্যানকোর্ট, ২০১৮)।
এক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশকে গান শোনার ও অন্যদের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল মানসিক চাপের জন্য। পরে দেখা যায়, যে রোগীরা গান শোনেন, তাদের উদ্বেগ কম ছিল। ওষুধ সেবনকারীদের তুলনায় কম কর্টিসল ছিল।
আজ ইন্টারন্যাশনাল মিউজিক ডে অর্থাৎ বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত কাউন্সিলের ১৫তম সাধারণ অধিবেশন দ্বারা সূচনা করা হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দিবস পালিত হয়।
এই দিবস উদযাপনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সব ক্ষেত্রের মধ্যে সঙ্গীত শিল্পকে উন্নত করা। একই সঙ্গে শান্তি ও বন্ধুত্বের ইউনেস্কোর ধারণাগুলো প্রয়োগ করা।
জানলে অবাক হবেন, প্যালিওলিথিক সময়কালে বাঁশি বাজানোর প্রথা চালু হয়। এটিই প্রাচীনতম বাদ্যযন্ত্র, লাখ লাখ বছর আগে এর ব্যবহার শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়।
সূত্র: সাইকোলোজি টুডে/সায়েন্স এবিসি
জেএমএস/এএসএম