পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আর আতাইকুলা ইউনিয়নের গাঙ্গহাটি গ্রামের বাসিন্দা নূরজাহান খাতুন। ৭৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বিধবা হয়েছেন ২৫ বছর আগে। দুটি পা অবশ বলে হাতের ওপর ভর দিয়ে অতিকষ্টে চলাফেরা করেন। তার নামে একটি বিধবা ভাতার কার্ড হয়েছিল। ভাতা পেয়েছিলেন দেড় বছর। গত দুই বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। কেন বন্ধ রয়েছে তা সংশ্লিষ্টরা জানেন না। সরকারি কোনো সাহায্য না পাওয়ায় প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে বৃদ্ধা নূরজাহানের।
Advertisement
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, নূরজাহান খাতুন তার স্বামীর রেখে যাওয়া ঘরে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বাস করেন। তিনি কোনোমতে হাতের ওপর ভর করে ঘরের বাইরে বের হন। তার মেয়ে জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। তিনিও একা চলাফেরা করতে পারেন না। একটি ঘরে মা ও মেয়ের করুণ জীবনযাপন।
প্রতিবেশীরা জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে বিধবা হয়েছেন নূরজাহান খাতুন। তার চার ছেলের মধ্যে দুই ছেলে মারা গেছেন। এক ছেলে বাড়িতে থাকেন। তবে তিনি গুরুতর অসুস্থ। আরেক ছেলে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। একমাত্র মেয়ে জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। মায়ের ঘরেই থাকেন। সংসারে উপার্জনক্ষ কেউ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন যায় তাদের।
বৃদ্ধার বড় পত্রবধূ অনোয়ারা খাতুন জানান, তিনি অকালে বিধবা হয়েছেন। তিনি নিজেই অসহায় ও সাহায্য প্রার্থী। ইচ্ছা থাকলেও তিনি তার শাশুড়িকে সাহায্য করতে পারেন না।
Advertisement
তিনি আরও জানান, তার শাশুড়ি ছয় মাস পরপর তিন কিস্তিতে ভাতা পেয়েছিলেন। দেড় বছর ভাতা পাওয়ার পর তার ভাতা গত দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ভাতা কেন বন্ধ তারা তা জানেন না।
ছোট পুত্রবধূ হীরা খাতুন জানান, তার স্বামী গুরুতর অসুস্থ। তারা নিজেরাই অসহায়।
বয়সের ভারে স্পষ্ট করে করে বলতে পারেন না নূরজাহান খাতুন। কথা জড়িয়ে যায়। ভাঙা কণ্ঠে বললেন, ‘ভাত খেতে পারিনে। কলা নরম তাই খেতে পারি। কিন্তু কলা কেনার টাকাও তো নেই। সরকারের লোকেরা খালি নাম ল্যাহে (লেখে), কেউ কিচু দেয় না। মানসি যা দ্যায় তাই খাই। পালি খাই, না পালি না খাই।’
আর আতাইকুলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আকতার হোসেন জানান, তিনি মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন দুই বছর পূর্ণ হয়নি। ওই বৃদ্ধার ভাতার কার্ড চালু বা বন্ধ হয়েছে সম্ভবত তার নির্বাচিত হওয়ার আগে। এজন্য তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরে ভাতা পাওয়ার উপযোগীদের যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছিল।
Advertisement
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই বৃদ্ধাকে ভোটার আইডি কার্ডসহ উপজেরা সমাজসেবা অফিসে আসতে হবে। তিনি কেন টাকা পান না তা অনলাইনে যাচাই করতে হবে। তাই অফিসে আসতে হবে।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এমআরআর/এমএস