বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট কিন্তু ধীরে ধীরে যথেষ্ট উন্নতি করছে। বেশ আশাও জাগিয়ে তুলছে আমাদের নারী ক্রিকেটাররা। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচে জিতেছিল তারা। শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়েছিল। প্লে-অফে হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ডকে। সে তুলনায় এবার আরো ভালো ক্রিকেট প্রত্যাশা করেছিলাম তাদের কাছ থেকে; কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলো না তারা। একটি ম্যাচও জিততে পারলো না। শুধু জয় না পাওয়াই নয়, কোনো ম্যাচেই ন্যুনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি তারা।বিশ্বকাপের লক্ষ্যে গত দেড়-দুই বছর ভালোই অনুশীলন করে যাচ্ছিলো নারী ক্রিকেটাররা; কিন্তু এই টুর্নামেন্টে তাদের খেলা দেখে মনে হলো বড় স্টেজে এখনো অনেক পিছিয়ে। এই টুর্নামেন্টেই মনে হলো, অনেক ঘাটতি রয়েছে দলটির মধ্যে। অনেক সমস্যাই ধরা পড়েছে তাদের খেলায়। অথচ যে ধরনের অনুশীলন দীর্ঘদিন ধরে তারা করছিল, তাতে তাদের আরো উন্নতি করা প্রয়োজন ছিল।সবচেয়ে বড় পার্থক্য যেটা, সেটা হলো টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য যে পাওয়ার ক্রিকেট প্রয়োজন হয়, সেই পাওয়ার ক্রিকেট খেলার মতো যোগ্যতা এখনো আমাদের হয়নি। অন্য দেশগুলোর মতো, যেমন পাকিস্তান কিংবা ভারত- এসব দেশের নারীরা যে ধরনের পাওয়ার ক্রিকেট খেলে, তাদের তুলনায় আমাদের মেয়েরা অনেক পিছিয়ে।অর্থাৎ অনেক ইমপ্রুভমেন্ট প্রয়োজন। দলের কোচিং স্টাফ হিসেবে যারা রয়েছেন তারা অনেক চেষ্টা করছেন। আরো বেশি চেষ্টা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আরেকটা বিষয় হলো পাওয়ার ক্রিকেট খেলতে হলে শারীরিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। আমাদের নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে এই জিনিসটার ঘাটতি দেখা গেছে। আসল কথা, তাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা জরুরি। তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সে ধরনের খাবার রাখা উচিৎ, যাতে তাদের সেভাবে শারীরিক শক্তির উন্নতি হয়। যাতে একটা শট খেললে সেটা অন্তত মাঠের বাইরে গিয়ে পড়ে।গত বিশ্বকাপের মতো এবারো যদি অন্তত একটা ম্যাচ যদি আমরা জিততে পারতাম, কিংবা প্রতিটি ম্যাচে যদি জয়ের জন্য ফাইট দিতে পারতাম, তাহলে অনেক ভালো লাগতো। আমাদের নারী ক্রিকেট দলের মূলত তিন বিভাগেই উন্নতি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমাদের নারী ক্রিকেট দলের ফিল্ডিংটা সব সময় ভালো ছিলো দেখতাম। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে এসে ফিল্ডিংটা মোটেও ভালো হয়নি। শুধু ফিল্ডিং কেন, ব্যাটিং কিংবা বোলিংও ভালো হয়নি। টুর্নামেন্টের ৪টা ম্যাচেই খুব হতাশ করেছে আমাদের ক্রিকেটাররা।নারী ক্রিকেটে উন্নতির জন্য আমার কাছে আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। সেটা হলো আর্থিক দিক। নারী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক কিংবা আয়ের উৎস যদি আরো বাড়ে। পারিশ্রমিক যদি আরেকটু বাড়িয়ে দেয়া হয় কিংবা এই খাতে যদি আরেকটু বাজেট বাড়ানো হয়, তাহলে আমার মনে হয় নারী ক্রিকেটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কারণ, আর্থিক বিষয়ে নিশ্চয়তা পেলে অনেকেই খেলার প্রতি মনযোগী হবে এবং প্রচুর খেলোয়াড়ও বের হয়ে আসবে।তবে এটাও সত্য, ভালো ফল যখন দেয়া শুরু করবে নারী ক্রিকেটাররা, তখন অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর্থিক বিষয়টার পরিবর্তনের জন্য নারী ক্রিকেটারদেরও কিছু প্রতিদান দেয়া প্রয়োজন। নারীদের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটটাকেও খুব শক্তিশালী করা প্রয়োজন। প্রচুর ম্যাচ, প্রতিযোগিতা এবং প্রচুর খেলোয়াড় উঠে আসার মাধ্যমেই মূলত নারী ক্রিকেটে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধন হবে বলে আমার বিশ্বাস।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক।আইএইচএস/বিএ
Advertisement