মোহাম্মদ নূরুল হক—প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও কবিতার পাশাপাশি সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে লিখছেন ছড়া ও কলাম। তাঁর প্রবন্ধের বিষয় বিচিত্র। সাহিত্যের নানা শাখায় সমান বিচরণ থাকলেও প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবেই পরিচিত তিনি। ছিলেন দৈনিক আমাদের সময়ের বার্তা সম্পাদক, অনলাইন নিউজপেপার বাংলা ট্রিবিউনের উপ-বার্তা সম্পাদক, সারাবাংলার বার্তা সম্পাদক, রাইজিংবিডির বার্তা সম্পাদক, সময়ের আলোর বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন সেকশনের বার্তা সম্পাদক। বর্তমানে বিজনেস বিষয়ক নিউজ পোর্টাল ঢাকা বিজনেসের বার্তা সম্পাদক। এছাড়া সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যবিষয়ক ছোটকাগজ মেঠোপথ, চিন্তাসূত্র, প্রাকপর্ব ও অনুপ্রাস।
Advertisement
এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কবিতার বই ‘মাতাল নদীর প্রত্নবিহার’, ‘স্বরচিত চাঁদ’, ‘উপ-বিকল্প সম্পাদকীয়’ ও ‘লালরাত্রির গান’। প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সাহিত্যে দশক বিভাজন ও অন্যান্য’, ‘সমালোচকের দায়’, ‘অহঙ্কারের সীমানা ও অন্যান্য’, ‘সাহিত্যের রাজনীতি’, ‘সমকালীন সাহিত্যচিন্তা’, ‘কবিতার সময় ও মনীষার দান, ‘আহমদ ছফার বাঙালিদর্শন ও অন্যান্য’ এবং ‘বাংলা উপন্যাসে বিধবা: বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎ’।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?মোহাম্মদ নূরুল হক: সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার গবেষণাগ্রন্থ ‘বাংলা উপন্যাসে বিধবা: বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎ’। এই বইটিও এবারের বইমেলায় নতুন বই হিসেবেই পাওয়া যাবে। আর নতুন আসবে গল্পের বই ‘নবাবের একদিন’ এবং গবেষণাগ্রন্থ ‘আধুনিক বাংলা কবিতা: ছন্দের অনুষঙ্গে’।
Advertisement
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অনুবাদের পারিশ্রমিক অনেক কম: শেহজাদ আমান
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?মোহাম্মদ নূরুল হক: দেখুন, বাংলা একাডেমির বইমেলা আমি যেমন দেখতে চাই, তেমন করে কোনোকালেই হবে না। বাংলা একাডেমি চলে তাদের নিজস্ব কিছু নীতি নিয়ে, সঙ্গে দেশের কিছু প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ মেনে। তাই আমি কেমন দেখতে চাই, সেই কথা বলা অন্তসারশূন্য। কারণ আমি কোনো আমলা নই, প্রভাবশালী সাংবাদিক নই, বড় কোনো রাজনৈতিক নেতা নই। এমনকি বাংলা একাডেমি কিংবা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কোনো ক্ষমতাবান কর্মচারীও নই। আমার পরামর্শ পুরোটাই অরণ্যে রোদন হবে। সুতরাং কেমন দেখতে চাই, সেই প্রসঙ্গ আজ থাক।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?মোহাম্মদ নূরুল হক: গত বারের বইমেলায় তো ৮০ শতাংশই অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল। এরমধ্যে মোটা দাগে বলতে গেলে বলতে হয়, খাবারের দোকানের অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি শৌচাগারের অব্যবস্থাপনা। লিটলম্যাগ চত্বরের দায়সারা সাজ। লিটলম্যাগ চত্বরের পাশে ‘মোড়ক উন্মোচন’ মঞ্চ থাকায় যেখানে সারাক্ষণ মাইক বাজার কারণে লিটলম্যাগ চত্বরে দাঁড়ানো পর্যন্ত যায় না। প্রচুর ধুলা ওড়া। প্রয়োজনের চেয়ে মেলার আয়তন বড় করা। বইমেলায় আসা বইয়ের মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকা। যে-কেউ ইচ্ছা করলেই প্রকাশক হিসেবে স্টল পাওয়া। প্রকাশকের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ না করা। এত বড় মেলা, টিকিটের ব্যবস্থা না-থাকায় বই ক্রেতার চেয়ে কপোত-কপোতির বৃন্দাবনে পর্যবসিত হওয়া।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই
Advertisement
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?মোহাম্মদ নূরুল হক: এই প্রশ্নের উত্তর আমার মতো ক্ষুদ্র লেখক-পাঠকের দেওয়া সম্ভব নয়। এর উত্তর প্রকাশক সমিতি ও বাংলা একাডেমিই দিতে পারবে। তবে, সারাবছরই যেখানে মানহীন বইয়ের জয়জয়কার, সেখানে বইমেলায় শিল্পোত্তীর্ণ বইয়ের বিক্রি বাড়বে, এমনটা আশা করি না। সারাবছরই যেখানে চটিসর্বস্ব বইগুলোকে স্টান্টবাজ বিক্রেতা, সিন্ডিকেট বেস্টসেলার হিসেবে প্রচার করে, সেখানে মানসম্পন্ন বইয়ের কদর কমবে; এটাই স্বাভাবিক। আর একটা কথা, আগে কোটি শিক্ষিত জনে একজন লেখক থাকতেন, তার বই বাকিরা কিনতেন। এখন কোটি শিক্ষিত জনে একজন মাত্র পাঠক পাওয়া যায়, বাকিরা সবাই সেলিব্রিটি লেখক। তাই বই বিক্রি বাড়বে, এমনটা আশা করা যায় না। কারণ বইমেলার অব্যবস্থাপনার কারণে পাঠকের চেয়ে কপোত-কপোতির বেশি পদচারণা থাকে। সুতরাং বৃন্দাবনে প্রেম চলতে পারে, বই বিক্রি নৈব নৈব চ।
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?মোহাম্মদ নূরুল হক: বইয়ের প্রচারণাকে আমি ইতিবাচক মনে করি। আমি মনে করে, বইটি প্রকাশের অন্তত একমাস আগে থেকে প্রকাশকের উদ্যোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে-সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত। এরপর বই প্রকাশিত হলে, প্রকাশকের উদ্যোগে সম্মানি নিয়ে সমালোচকদের কাছ থেকে বইটির রিভিউ করানো উচিত। সেই রিভিউ টেক্সচুয়াল হতে পারে আবার ভিজ্যুয়ালও হতে পারে।
এসইউ/জেআইএম