জাতীয়

বঙ্গবাজার থেকে কৃষি মার্কেট: এরপর আগুন কোথায়?

চলতি বছরের ৪ এপ্রিল আগুন লাগে রাজধানীর বঙ্গবাজারে। সেদিন আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট ও এনেক্সকো টাওয়ার। নিঃস্ব হয়ে যান তিন হাজারের বেশি ব্যবসায়ী। এরপর ১৫ এপ্রিল আগুন লাগে নিউ সুপার মার্কেটে। দুটি আগুনই লাগে ভোররাতে। আগুনের সময় ও প্রকৃতি দেখে প্রায় সব মহল থেকেই প্রশ্ন ওঠে, এগুলো দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা। ভয়াবহ এ দুটি আগুনের পর নাশকতার আশঙ্কায় সতর্ক হয়ে যান রাজধানীর অন্যান্য বড় মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা পালা করে বসান পাহারা।

Advertisement

নিউমার্কেটের আগুনের ঠিক ৫ মাস পর আগুন লাগে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে। ওই মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নিউমার্কেটের আগুনের পর তারা কয়েক মাস রাত জেগে মার্কেটে পাহারা দিয়েছেন। কোরবানি ঈদ পর্যন্ত চলে এ কাজ। পরে ব্যবসায় কিছুটা মন্দা সিজন শুরু হলে তারা পাহারা বন্ধ করেন। এ আগুনটিও লাগে ভোররাতে। ব্যবসায়ীরা পাহারা বন্ধ করার কয়েক মাস পর ভোররাতেই আগুন লাগায় স্বাভাবিকভাবেই আবারও প্রশ্ন উঠেছে, এটি নাশকতা কি না। একই সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠেছে, আগুনের এর পরের টার্গেট কোন মার্কেট?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহুতল যেসব শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে সেগুলোতে আগুন লাগছে না। আগুন লাগছে সেসব মার্কেটে যেগুলো বিশাল জায়গা নিয়ে টিনশেড বা একতলা-দোতলা হয়ে রয়েছে। এ শঙ্কা আরও দৃঢ় হয়েছে কারণ, বঙ্গ মার্কেটের পুরাতন টিনশেড ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা, নিউ সুপার মার্কেটে ফুটওভার ব্রিজ ও মার্কেট ভাঙা নিয়ে আলোচনা, কৃষি মার্কেটে অবৈধ দোকান বসানোসহ বিভিন্ন বিলের নামে টাকা তোলা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এসব ঘটনার মধ্যেই আগুনে ছাই হয়ে গেছে বঙ্গবাজার, কৃষি মার্কেট। মালামাল পুড়ে শেষ হয়েছে নিউ সুপার মার্কেটের।

রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট

Advertisement

রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরে ৫৮টি মার্কেট, সুপার মার্কেট, শপিংমল পরিদর্শন করে। এরমধ্যে অগ্নিকাণ্ডে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫টি ভবন চিহ্নিত করা হয়।

আরও পড়ুন: ‘রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে, আগুন লাগলো কীভাবে’

এসব মার্কেটের মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রাজধানীর নিউমার্কেট রোডের গাউছিয়া মার্কেট, ফুলবাড়িয়ায় বরিশাল প্লাজা মার্কেট, টিকাটুলির রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, লালবাগের আলাউদ্দিন মার্কেট, চকবাজারে শাকিল আনোয়ার মার্কেট ও শহিদুল্লাহ মার্কেট, সদরঘাটের শরীফ মার্কেট ও মায়া কাটারা, গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে রোজনীল ভিস্তা।

মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরান ঢাকার কদমতলী আলম সুপার মার্কেট, খিলগাঁও রেলগেট বাজারের উত্তরা মার্কেট, ডেমরায় সালেহা শপিং কমপ্লেক্স ও মনু মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স, দোহারের লন্ডন প্লাজা শপিং মল, ওয়ারীর এ কে ফেমাস টাওয়ার ও রোজভ্যালি শপিংমল, মিরপুর রোডের মেহের প্লাজা, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, নিউ চিশতিয়া মার্কেট, চিশতিয়া মার্কেট, নেহার ভবন, এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্স, ইসমাইল ম্যানশন সুপার মার্কেট, সুভাস্তু অ্যারোমা শপিংমল।

Advertisement

ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে কদমতলীতে বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, খিলগাঁওয়ে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট, খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার, তিলপা পাড়া মিনার মসজিদ মার্কেট, ডেমরার হাজী হোসেন প্লাজা, ইসলাম প্লাজা, নিউ মার্কেট, দোহারের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, এ হাকিম কমপ্লেক্স, নবাবগঞ্জ শরীফ কমপ্লেক্স, কাফরুলে বাচ্চু মিয়া কমপ্লেক্স, ড্রিমওয়্যার, মিরপুর-১ এ এশিয়ান শপিং কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, ফেয়ার প্লাজা, তেজগাঁওয়ের শেপাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, নাসা মেইনল্যান্ড, জাকারিয়া ম্যানশন, লালবাগে হাজী আব্দুল মালেক ম্যানশন, ওয়ারীতে ইপিলিয়ন হোল্ডিং লিমিটেড, মিরপুর রোডে গ্লোব শপিং সেন্টার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, হযরত বাকু শাহ হকার্স মার্কেট, ইসলামিয়া বই মার্কেট, গুলিস্তানে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১, সিদ্দিক বাজারে হান্নান ম্যানশন, সিটি প্লাজা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২, নগর প্লাজা, সিদ্দিক বাজারে রোজ মেরিনাস মার্কেট, দুকু টাওয়ার।

আরও পড়ুন: আগুনের পর পানিতে ডুবেছে কৃষি মার্কেট, ‘পানির দামে’ মিলছে চাল

এরমধ্যে অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর মধ্যে বরিশাল প্লাজা মার্কেট, বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে ছোট বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের তালিকার বাহিরেও আরও অনেক মার্কেটই ঝুঁকিতে রয়েছে। যেমন- মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ওই তালিকায় না থাকলেও পুড়েছে কয়েকশ দোকান।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪৭১টি। আগস্ট মাসে ১ হাজার ৬৬৭টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই ঘটেছে ১২৮টি। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সারাদেশে মোট ২৮ জন আহত ও ৮ জন নিহত হয়েছে। এসব আগুনে পুড়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি।

কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ে প্রশ্ন

মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে রাত ৩ টা ৪৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। মার্কেটটিতে রাত ১০টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইন বন্ধ থাকে। ফলে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে, এমন কথা মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন: মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে ভেঙে দেওয়া হলো না কেন

কৃষি মার্কেটে পাঁচটি দোকান ছিল শহীদুল ইসলাম মানিকের। মালামালসহ দোকানের ক্ষতি পাঁচ কোটি টাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বিদ্যুতের মেইন লাইন বন্ধ থাকে। তবে সিকিউরিটির লাইন থাকে ভেতরে আলোর জন্য। যদি শর্ট সার্কিটের মাধ্যমেও আগুন লাগে, তবে সামান্য এ আগুনে এত বড় ক্ষতি হওয়ার কথা না। যে দোকানটায় প্রথম আগুন লাগে সেটি বাহিরের সাইডে। ফায়ার সার্ভিস অনায়াসে সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো।

গভীর রাত কিংবা ভোররাতে আগুন লাগা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা আগুনই লাগে রাতে। দিনের বেলায় আগুন কি ঘুমাইয়া থাকে? প্রত্যেকটাই ভোরবেলায় লাগতেছে। বঙ্গবাজার, নিউমার্কেটে দেখেন। আগুন কীভাবে লাগে? আগুনের কি টাইম আছে যে এই টাইমে লাগবে? যখন মার্কেট বন্ধ থাকে, তখন আগুনটা লাগে! অথচ আগুন লাগার কথা মার্কেট চলা অবস্থায়। তখন মানুষের অ্যাক্টিভিটি থাকে, বিদ্যুতের লাইন থাকে। রাতে তো বিদ্যুতের লাইন সব বিচ্ছিন্ন। ফ্যান-এসি সব বন্ধ।

এক মার্কেটের পর অন্য মার্কেটে আগুন লাগার বিষয়ে মানিক বলেন, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর থেকেই অনেকে বলছিল যে, টিনশেড আছে এ ধরনের মার্কেটগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। বঙ্গবাজার, নিউমার্কেটের পর কৃষি মার্কেট। এরপর টিকাটুলিতে রাজধানী মার্কেট টার্গেট করা হয়েছে। গত রোজার মধ্যে আমরা রাতে মার্কেট পাহারা দিয়েছি। দোকানের মালিক সবাই মিলে গ্রুপ করে ১০ জন করে পাহারা দিয়েছি। কোরবানির ঈদ পর্যন্ত টানা পাহারা দিয়েছি। কোরবানির পর এখন একটা মন্দার সিজন চলছিল, তাই আর পাহারা দেই নাই।

কৃষি মার্কেটের কাপড়ের ব্যবসায়ী মো. রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের মধ্যে সবারই অনেক মালামাল থাকে দোকানে। প্রতি ঈদে আমরা অনেক মাল তুলি। বঙ্গবাজারে যখন আগুন লাগলো তখন আমরা ভয়ে মার্কেটের একেক ব্লক থেকে ১০-১৫ জন করে রাতে পাহারা দিতাম। বঙ্গবাজারের মতো আমাদের এখানেও যেন কোনো আগুন না লাগে, বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগার কারণে আমাদের এখানেও আগুন লাগে কি না তাই পাহারা দিতাম।

আরও পড়ুন: শেষ রাতের দিকে আগুন লাগা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মার্কেটের সাগর ফ্যাশনের মালিক মো. সাদেকুল ইসলাম সাগর জাগো নিউজকে বলেন, আগুন যদি হক বেকারিতে লাগে, এত দ্রুত কীভাবে সব জায়গায় ছড়িয়েছে। এটা বুঝতে হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে যা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা

কৃষি মার্কেট, বঙ্গমার্কেটে বহুতল ভবন নেই। টিনশেড বা বহুতল ভবন নেই এমন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। এসব মার্কেটের পর এবার আগুন কোন মার্কেটে যাচ্ছে, সেটি নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা।

আবার মার্কেটগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তারও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ কারণে মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। অগ্নিনিরাপত্তার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের তালিকা অনুযায়ী, অগ্নিনিরাপত্তায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ গাউছিয়া মার্কেট। এ মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মার্কেটে আমরা কিছু কিছু কাজ করেছি। সামনে আরও কাজ করবো। মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যেসব জিনিস দরকার তার ব্যবস্থা করা হবে।

বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর থেকে রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটে আগুন লাগার শঙ্কা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা। এ কারণে সেখানে পানির ট্যাংক স্থাপন, ফায়ার সিলিন্ডার স্থাপন, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের লাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি, ভোররাতে পাহারা দেওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পরিকল্পনা চলছে বহুতল ভবন নির্মাণের।

আরও পড়ুন: অগ্নিকাণ্ড রোধে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই: ফখরুল

এ মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফজলুল হক বিপ্লব জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর সব সংস্থার লোক এখানে এসেছে। তারা যা যা বলেছে আমরা তা করার চেষ্টা করেছি। মার্কেটটি ভেঙে বহুতল ভবন তৈরি করার পরিকল্পনা চলছে। রাজধানী মার্কেটের টিনশেডে যেন আগুন না লাগে, ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছি। ভোররাতে আগুনগুলো লাগে। এ কারণে গোয়েন্দা সংস্থার লোক প্রায়ই আমাদের এখানে থাকে। ৩৫ জন সিকিউরিটি গার্ডসহ আরও ১০ জনকে নিয়োগ দিয়েছি শুধু রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য। রাত তিনটার পর থেকে তারা ফ্লাইওভার এবং আশপাশের ভবনে পাহারা দিতে থাকে। আমরা সম্পূর্ণ নজরদারিতে রেখেছি।

ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা

অগ্নি ঝুঁকিতে থাকা মার্কেটগুলোর তালিকা করেই অনেকটা দায় সারে ফায়ার সার্ভিস। আবার যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে তালিকা তৈরি করা হয় কি না, তা নিয়েও আছে প্রশ্ন।

কৃষি মার্কেটে আগুনের পর ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, এমন কোনো কাগজ আমরা পাইনি। আর এ মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে ভেঙে দেওয়া হলো না কেন? তাহলে কেন আমরা মেনে নেবো এটা ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট!

রাজধানীসহ সারাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেটের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, যারা ভবনের মালিক আছেন তাদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। কীভাবে ব্যয়টাকে সঙ্কুচিত করা যায় সেদিকে তাদের যে নজর, তাতে নিরাপত্তার বিষয়গুলো সঙ্কুচিত হয়ে যায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনসহ যেসব সংস্থা রয়েছে, তাদেরও সদিচ্ছা ও সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। ভবন বা মার্কেটের নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত হওয়ার পরও অনেক সময় মালিকরা এসব সংস্থাকে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেন। ফলে পুরো জাতি অগ্নিঝুঁকিতে আছে।

ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেড ও ছোট ভবনের মার্কেটগুলোতে বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করা যেতেই পারে। তবে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করে পরিকল্পনা করা দরকার। সেই সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্যতাও তৈরি করতে হবে যেন তাদের রুটি-রুজির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বিচ্ছিন্নভাবে যেসব পরিকল্পনা করা হয় সেগুলো সফল হচ্ছে না।

প্রতিটি মার্কেটেই আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্তারা বলেছেন, পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ছিল না সেখানে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকলে আগে কেন ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থা নিলো না? একের পর এক আগুন লাগলেও এসব রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। এ ব্যর্থতা এবং অগ্নি ঝুঁকিতে থাকা মার্কেটগুলোতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ ফায়ার সার্ভিস নিয়েছে কি না, জানতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করে ও মোবাইলে মেসেজ দিয়ে পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা জাগো নিউজকে বলেন, যেকোনো দুর্ঘটনা মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো দুঃখজনক। আমরা সব সময়ই বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছি, সবার সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের মোবাইল কোর্টগুলো অভিযানে যাচ্ছে। বিদ্যুতের লাইনগুলো সময় সময় চেক করতে হয়। মার্কেট এবং বাসাবাড়িতেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এটা ব্যবহারকারী বা মার্কেট সমিতি, সবারই সতর্ক থাকতে হয়। মার্কেটকে আমরা সতর্ক করছি যেন অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। অগ্নিনিরাপত্তা স্থাপন করতে বেশ কিছু টাকা লাগে। এটি অনেকে করতে চান না। মার্কেটের বিদ্যুতের লাইন ব্যবস্থাপনা মার্কেট সমিতিকে দেওয়া থাকে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারও অবহেলা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরএসএম/এসএনআর/এমএইচআর/এএসএম