আন্তর্জাতিক

বিশ্বকাপে নাশকতার হুমকি, খালিস্তানি নেতার বিরুদ্ধে ভারতে মামলা

ভারতে হতে যাওয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপে নাশকতার হুমকি দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী খালিস্তানপন্থী নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ইউনিট। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গুজরাট সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ইউনিটের উপ-পরিদর্শক এইচ এন প্রজাপতি বাদি হয়ে আহমেদাবাদের একটি থানায় এ মামলা করেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বে টুইটার) গুরপতওয়ান্ত সিংয়ের একটি ভিডিওবার্তা ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি বলেন, দিল্লি খালিস্তান হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, শহীদ হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার জন্য আপনি দায়ী ও শিখ ফর জাস্টিস এই হত্যার প্রতিশোধ নেবে।

তিনি আরও বলেন, ৫ অক্টোবর আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের যে আসর শুরু হতে চলেছে, তা হবে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ কাপের প্রথম আসর। এটা গুরুপতওয়ান্ত সিং পান্নুনের বার্তা। এর পাশাপাশি তিনি ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বী ও খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি সহমর্মী জনগণকে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তান প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপ বর্জনের আহ্বানও জানান।

পেশায় আইনজীবী গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন খালিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দল শিখস ফর জাস্টিসের (এসএফজি) যুক্তরাষ্ট্র শাখার আইন বিষয়ক উপদেষ্টা। বেশ কয়েক বছর আগে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের খানকোট জেলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে স্থায়ী হন তিনি।

Advertisement

বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা চালানোর অভিযোগে শিখস ফর জাস্টিস ও খালিস্তানপন্থী আরেকটি সংগঠন খালিস্তান টাইগার ফোর্সকে নিষিদ্ধ করেছে ভারত। দেশটির অভ্যন্তরে তেমন তৎপর না থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বেশ সক্রিয় তারা।

গত জুনে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের রাজধানী ভ্যানকুভারে একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার। ১৯৭৭ সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর জেলা থেকে কানাডা গিয়েছিলেন হরদীপ, পরে তিনি সেখানাকার নারিকত্বও অর্জন করেন।

এদিকে, শিখদের ঘোষিত রাষ্ট্র খালিস্তান কায়েমের জন্য তৎপর দুই রাজনৈতিক গোষ্ঠী খালিস্তান টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস কানাডা শাখার একজন জ্যেষ্ঠ নেতা হরদীপ ছিলেন ভারতের তালিকাভুক্ত আসামি। হরদীপকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করাতে আগ্রহী ছিল ভারত।

গুরুপতওয়ান্ত সিং পান্নুনও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে তাকে ‘তালিকাভুক্ত’ সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার দুই মাস পর ভারতে তার যাবতীয় সম্পত্তি জব্দ করা হয়।

Advertisement

ভারতের সঙ্গে কানাডার সাম্প্রতিক যে দ্বন্দ্ব, তার সূত্রপাত এখান থেকেই। গত ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনেও দুই দেশের শীতল কূটনৈতিক সম্পর্কের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল।

সম্মেলন শেষে নয়াদিল্লি থেকে ফেরার এক সপ্তাহ পর, ১৮ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

কানাডার জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।

ভারতের সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, হরদীপ হত্যা সেই মৌলিক নিয়মনীতির পরিপন্থী।

ট্রুডোর এমন অভিযোগের পরদিনই কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (আরএডব্লিউ বা র) কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কার করে ট্রুডো সরকার।

অন্যদিকে, শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ ভারত পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পরদিনই দিল্লির কানাডা দূতাবাসের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেয়। পর থেকেই নজিরবিহীন টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে কানাডা ও ভারত।

৫ অক্টোবর থেকে শুরু হবে আইসিসি বিশ্বকাপের ১৩ তম আসর। প্রথম ম্যাচ হবে গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও গুজরাটের মানুষ।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ