জাগো জবস

আমার বিসিএস প্রস্তুতি শুরু হয় মাস্টার্সের পর: আনিসুর রহমান

মো. আনিসুর রহমান ৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে (অর্থনীতি) চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান গ্রামে। তিনি দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং দিলোয়ারা জাহান মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেন।

Advertisement

সম্প্রতি তিনি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প, বাধা-বিপত্তি ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে চতুর্থ হওয়ার অনুভূতি কেমন?মো. আনিসুর রহমান: মহান আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। আল্লাহ আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমি ছাত্রাবস্থায় স্কুল, মাদ্রাসা, বিভিন্ন কোচিং এবং রেলস্টেশনে পথশিশুদের পড়িয়েছি। আশা করি আমার পেশায় আমি সর্বোচ্চ আনন্দ পাবো। এ পেশা আমার ভালো লাগে। আমি শিখতে ভালোবাসি। আমার শেখার কিছুটা শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমি সার্থক।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মো. আনিসুর রহমান: ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউটে ৩৫তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। মূলত সেখান থেকেই আমার মনে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সুপ্ত বাসনা জেগে ওঠে। এছাড়া সুশান্ত পাল স্যারের অনুপ্রেরণামূলক লেখাগুলো আমার স্বপ্নের অন্যতম নিয়ামক। বিসিএস ক্যাডারদের সম্মান, লাইফস্টাইল এবং মানুষের জন্য কিছু করার যে ক্ষমতা; সেটা আমাকে প্রবলভাবে বিসিএসের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভাইভা বোর্ডে ফার্স্ট ইম্প্রেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?মো. আনিসুর রহমান: আমি অনার্স পাসের পর বিসিএসের জন্য ম্যাথ, সাধারণ জ্ঞান পড়তাম। পুরোদমে আমার বিসিএস প্রস্তুতি শুরু হয় মাস্টার্সের পর। মাস্টার্সের পর গ্রাম থেকে চট্টগ্রাম শহরে মেসে চলে এলাম। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের একটি কোচিংয়ে বিসিএস প্রিলিমিনারি কোর্সে ভর্তি হই। প্রতিটি ক্লাস করতাম, প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্ট লিখিত আকারে তৈরি করতাম। অনেক কষ্ট হতো। তবুও যে টপিকের অ্যাসাইনমেন্ট থাকতো, তাতে মূল জিনিসটা লিখতাম। সিলেবাস বুঝে বুঝে কোন টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি হয়; সেগুলো বেশি বেশি পড়তাম। যেগুলো থেকে কম প্রশ্ন হয় বা পারি না; সেগুলো প্রথমদিকে বাদ দিয়েছিলাম। পরে মূল টপিকগুলোয় ভালো প্রিপারেশন হওয়ার পর এগুলোতে সময় দিয়েছিলাম। কিছুদিন পরেই করোনা মহামারির জন্য সব কোচিং বন্ধ হয়ে গেল। আমি মেস থেকে গ্রামে চলে গেলাম। গ্রামে থাকাকালীন বেকারত্ব, ডিপ্রেশনের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ি। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠি। আড্ডা, ঘোরাঘুরি, মোবাইল আসক্তি বন্ধ করে দিলাম। তারপর পড়ালেখাই আমার ধ্যান-জ্ঞান। লকডাউনের প্রায় ৬ মাস দিনে ১২-১৫ ঘণ্টা করে পড়েছি। করোনা আমার কাছে আশীবার্দ হয়ে এসেছিল। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হলে আবার শহরে মেসে চলে আসি। এতদিন শুধু পড়েই গিয়েছি। কোচিংয়ে আসার পর বুঝলাম আমার প্রায় সব বিষয়ে কিছুটা দক্ষতা চলে এসেছে। এরপর পড়াশোনা করে আনন্দ লাগতো। দুইটি কোচিংয়ের লাইব্রেরিতে সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পড়তাম। মাঝে নামাজ, খাওয়া-দাওয়ার বিরতি। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো গুছিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, পরিবেশ-জলবায়ু, নারীবিষয়ক, অর্থনীতি, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বাজেট, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিশদভাবে পড়েছি। প্রচুর ডেটা, কোটেশন, ম্যাপ মুখস্থ করেছি। নিয়মিত অনুবাদ চর্চা করেছি। প্রতিদিন অন্তত ১-২ ঘণ্টা দুটি বাংলা দৈনিক পড়েছি। বিগত বিসিএসের সব প্রশ্ন বুঝে বুঝে সমাধান করেছি। একাধিক বই না পড়ে এক সেট বই বারবার পড়েছি। অন্য বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মূল বইয়ের কোণায় কোণায় লিখে রেখেছি। আমার হাতের লেখা খুবই ছোট এবং স্লো কিন্তু পরিষ্কার। লিখিত পরীক্ষায় খুব সংক্ষেপে মূল বিষয়টা লেখার চেষ্টা করেছি। পয়েন্ট, কোটেশন, গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলো নীল কালিতে লিখেছি। লিখিত পরীক্ষাও খুব ভালো হয়।

আরও পড়ুন: প্রস্তুতির পাশাপাশি নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতে হবে: মুহিব

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?মো. আনিসুর রহমান: আড়াল থেকে আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমার বাবার ঘাম, মায়ের চোখের পানি, স্ত্রীর প্রার্থনা, বেকারত্বের গ্লানি, দিনের পর দিন লাইব্রেরির এক কোণে পড়ার কষ্ট। এগুলো আমার মনোবলকে ইস্পাত সদৃশ দৃঢ় করেছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: নতুনদের বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?মো. আনিসুর রহমান: বিসিএসে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জিপিএ কোনো ফ্যাক্ট নয়। আমি এসএসসিতে জিপিএ ৩.২৫ নিয়ে লড়াই করেছি। আপনার মধ্যে যদি জেদ থাকে, কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে, যদি চাকরিটা আপনার সত্যিই প্রয়োজন হয়, যদি নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ার প্রবল ইচ্ছা থাকে, নিজের দুর্বলতাগুলো যদি আইডেন্টিফাই করে কাটিয়ে উঠতে পারেন, প্রতিদিন অন্তত ১২-১৪ ঘণ্টা যদি পড়তে পারেন—আপনি ইনশাআল্লাহ ফার্স্ট টাইম ক্যাডার হবেন। প্রতিদিন অন্তত কয়েক ঘণ্টা পত্রিকা পড়বেন, নিয়মিত অনুবাদ অনুশীলন করবেন। বিসিএস যতটা না মেধাবীদের; তারচেয়েও বেশি ধৈর্যশীল এবং পরিকল্পিত পরিশ্রমীদের।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মো. আনিসুর রহমান: আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমার মায়ের মতো দেশটার জন্য কিছু করতে চাই। আমি একটি সুন্দর পৃথিবী চাই।

এসইউ/এমএস