দেশজুড়ে

এসপিজির ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব গ্রামবাসী

অনলাইনে ‘SPG’ নামে আর্নিং প্ল্যাটফর্ম খুলে একটি চক্র শত কোটি টাকার প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে এক দল ভুক্তভোগী। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগীরা জাগো নিউজের কাছে এমন অভিযোগ করেন।

Advertisement

ভুক্তভোগী রবিউল আউয়াল বাপ্পির অভিযোগ, নিজেকে অনলাইন উদ্যোক্তা পরিচয় দেওয়া ফিরোজ কবির ‘SPG’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে প্রচারণা করেন। প্রায় তিন মাস প্রতারকরা সদস্য সংখ্যা সংগ্রহ করেছে। সেখান থেকে কিছু টাকা আয়ও করেন তিনি। ওই অনলাইন আর্নিং অ্যাপসে সদস্য সংখ্যা ও টাকা ইনভেস্টের পরিমাণ অনেক বেশি হলে গত কয়েক দিন আগে থেকে তাদের কার্যক্রম পরিবর্তন হয়ে যায়। তারা অনলাইনে প্রোডাক্ট বিজনেসের কথা বলে টাকা ইনভেস্ট করতে বলে। তাদের কথায় অনেকেই টাকা পাঠায়। টাকা পাঠানোর পরদিন পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েকদিন চলে গেলেও পণ্য হাতে আসেনি।

জানা গেছে, প্রায় মাস দুয়েক আগে এমনই সহজ আয়ের চমকপ্রদ প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কচুবাড়ি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার। এসপিজি কোম্পানির কথিত ম্যানেজার ফিরোজের প্ররোচনায় বিভিন্ন বেকার ও শিক্ষার্থীসহ গ্রামের গৃহিণীরা এর সদস্য হন। তবে কোনো প্রকার লোভ্যাংশ না দিয়েই গ্রামবাসীর বিনিয়োগের ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা নিয়ে বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানির কার্যক্রম। পালিয়ে যান কথিত ম্যানেজার ফিরোজও।

যেভাবে কাজ করে এসপিজি

Advertisement

হাতে থাকা স্মার্টফোনে দিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টা কাজ করলেই আয় হবে দৈনিক ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা। শুধুমাত্র এসপিজির সদস্যরাই পাবে এই সুবর্ণ সুযোগ। টিকটক ও ফেসবুক রিলের স্ক্রিনশট নিয়ে এসপিজি নামক একটি অনলাইন অ্যাপে আপলোড করাই এই সদস্যদের কাজ। প্রতিটি স্ক্রিনশটের জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে এসপিজি ক্রেডিট অপশনে যোগ হবে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

তবে এই স্ক্রিনশট আপলোডের নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। এসপিজি কোম্পানিতে ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সদস্য হলে ১৬টি স্ক্রিনশট আপলোড করে ২৫ টাকা হিসেবে দৈনিক ৪০০ টাকা আয় করা যাবে। ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে স্টার সদস্য হলে ৪০টি স্ক্রিনশট আপলোড করে ৩০ টাকা হিসেবে আয় হবে দৈনিক ১২০০ টাকা। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পরে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে ওঠানো যাবে সেই লোভ্যাংশ।

তবে প্রথম মাসে কিছু সদস্য লোভ্যাংশ পেলেও পরে আর পাওয়ার সুযোগ হয়নি কারো।

প্রতারণার শিকার গ্রামবাসী জানান, এসপিজির কথিত ম্যানেজার ফিরোজ প্রতিবেশী হওয়ায় সহজেই তার কথায় বিশ্বাস করে ফাঁদে পা দেয় দরিদ্র গ্রামবাসী। গবাদিপশু বিক্রি করে বা উচ্চ সুদে লোন নিয়ে এসপিজির সদস্য হয়েছেন তারা।

Advertisement

দশম শ্রেণির ছাত্র সুজন বলে, আমার বাবা একমাত্র সম্বল গরুটি বিক্রি করে দেয়। তা দিয়ে একটি স্মার্টফোন ও স্টার এসপিজির একাউন্ট খুলি। তবে এসপিজি আমাদের নিঃস্ব করে চলে গেলো।

দিনমজুর রতন বলেন, সুদের ওপর কিছু টাকা নিয়ে ছেলেকে দিয়েছি। ভেবেছি ছেলের ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারবো। এখন নাকি কোম্পানি আর নাই। আমি এই সুদের টাকা কীভাবে শোধ করবো তা বুঝতে পারছি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বলেন, জেলায় জেলায় ম্যানেজার নিয়োগ করে কচুবাড়ি গ্রামের মতো দেশজুড়েই প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে এসপিজি। সারাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি টাকা এই সাইটে বিনিয়োগ হয়েছে। তাই দ্রুতই এই প্রতারক কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, সারাদেশেই এরকম বিভিন্ন ফাঁদ পেতে বসেছে প্রতারকরা। কেউ প্রতারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে সরাসরি অভিযোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি। যাতে করে দ্রুতই প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।

তানভীর হাসান তানু/এফএ/জেআইএম