শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে লড়াই-সংগ্রাম করে নিজ অস্তিত্বের জানান দিয়ে গেছেন বার বার। সংকটে পড়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও এদেশের মানুষের অধিকারের জন্য, এমনকি বিশ্ব মানবতার শান্তি ও কল্যাণে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। কালক্রমে তিনি হয়ে উঠেছেন বিশ্ব মানবতার সোচ্চার কণ্ঠস্বর।
Advertisement
ভারতবর্ষ বিভাজনের পর ন্যায্যতা আর অধিকারের প্রশ্নে পর্যুদস্ত বাঙালিরা যখন শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহের সূচনায় সবেমাত্র মনোযোগী, ঠিক সে সময়টাতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আর বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ঘর আলো করে এসেছে এক কন্যাশিশু। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদরের হাসু। গ্রাম বাংলার ধুলোমাটি ও সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে বেড়ে ওঠা একজন বঙ্গবন্ধুর আদরের হাসুই কালক্রমে হয়ে ওঠেন বাঙালির মুক্তির অগ্রদূত, অন্ধকার জয়ের একমাত্র আলোকবর্তিকা, আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়।
১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ থেকে। ওই বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শেখ হাসিনা শিক্ষা জীবনেই সম্পৃক্ত হন রাজনীতির সাথে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আত্মবিশ্বাসী দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণ একজন শেখ হাসিনাই একসময় হয়ে ওঠেন আবহমান বাংলার প্রতিচ্ছবি। অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সংগ্রামী চেতনা, আপসহীন নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ কালক্রমে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সংকট মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি তাঁর ভাষণে বলেছেন, আমি নিজে নিপীড়িত এবং যুদ্ধ ও হত্যার নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যুদ্ধ, হত্যা, অভ্যুত্থান ও সংঘাতের ভয়াবহতার কারণে মানুষ যে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করে, তা অনুভব করতে পারি। তাই বিশ্বনেতাদের কাছে আবেদন, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও সংঘাতের পথ পরিহার করে আসুন, আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর ভাষণে এটিও বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান সবার মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সবাইকে আইনগত সুরক্ষা প্রদান ও সুবিচার নিশ্চিতকরণে গত এক দশকে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে, জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় আমরা সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের আপামর জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণে অন্য সদস্যদের সঙ্গে যে কাজ করে যাচ্ছে তাও বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এও ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।
প্রসঙ্গতও বলে রাখা ভালো, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ ৪০টি দেশে ৫৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা উদ্যোগ নিয়ে বিশ্বনেতারাও এখন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি। মাত্র কয়েক মাস আগে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ২০২৩-২০২৫ মেয়াদকালের জন্য সদস্যপদ লাভ করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য সমর্থন দিয়েছে ১৬০টি দেশের প্রতিনিধিরা। পঞ্চমবারের মতো জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। এটি মূলত বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।
সাম্প্রতিক আরেকটি ঘটনা বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলেছে। যার কেন্দ্রে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে কথা বলছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ছবি এটি। এ ছবিটি যেমন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিনয়ের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তেমনি বিশ্ব পরিমণ্ডলে আস্থাভাজন ও গ্রহণযোগ্য একজন জ্যেষ্ঠ বিশ্ব নেতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অনবদ্য স্বীকৃতিরও বহিঃপ্রকাশ। প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি বিষয় স্মরণ করা যেতে পারে। তা হলো এ বছর স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লিখেছেন, আপনি বিশ্বের জন্য সহানুভূতি ও উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র আর অন্তত ২০ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের সাধারণ মানুষের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আপসহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর অনবদ্য ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বিশ্ব নেতারা অকপটে। তাঁর নেতৃত্বেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক খাতেও এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। বঙ্গবন্ধু কন্যার অর্জনের স্বীকৃতিওে মিলেছে। দেশে-বিদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে।
Advertisement
পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে ইউনেস্কো। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল তাকে মর্যাদাসূচক ‘পার্ল এস বাক’ পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ মেডেল প্রদান করে। সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ‘মাদার তেরেসা’ পদক প্রদান করে। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের গ্লোবাল ডাইভারসিটি পুরস্কার এবং দুবার সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ইউনেস্কো তাকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরস্কারে ভূষিত করে।
আদর্শ, চিন্তায়, কর্মে, আত্মবিশ্বাসে, মানবিকতায় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের সোচ্চার কণ্ঠস্বর ছিলেন, যিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার অনবদ্য প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হয়েছেন, তাঁর উত্তরসূরি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রদূত হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সার্বিক বিবেচনায় এ কথা আজ অবধারিতভাবেই বলা যায়। একজন মানবিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি পরীক্ষিত একজন বিশ্ব নেতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ছোট বোন শেখ রেহানা, স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া, পুত্র জয় ও কন্যা পুতুলকে নিয়ে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটাতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। বাবা-মা, কনিষ্ঠ সহোদর শেখ কামাল-শেখ জামাল, আদরের ছোট্ট রাসেল আর আত্মীয়-পরিজন হারিয়ে নিদারুণ যন্ত্রণা আর অবর্ণনীয় কষ্ট বুকে চেপে নির্বাসিত প্রবাস জীবনেও তিনি ভেবেছেন বাংলার মানুষের কল্যাণের কথা, তাদের অধিকারের কথা।
১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রত্যয়দীপ্ত শেখ হাসিনা তৎকালীন সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু, জনকের খুনিদের আস্ফালন ও সব ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা আর সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা সেদিন বলেছিলেন, আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই। ওই বছরই মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় তিনি বলেছিলেন, আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। শোষণের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়।
গত দেড় দশক একটানা সরকারের নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এ সময়ে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিশ্ববাসীর কাছে বিস্ময় হয়ে ধরা দিয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। এটি বাংলাদেশের বড় অর্জন। গত ১৪ বছরে দেশে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি। স্বাধীনতার পর মাত্র ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া বাংলাদেশের জিডিপি ৩৮ বছর পর ২০০৯ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার হয়।
গত ১৪ বছরে জিডিপির আকার ২০০৯ সালের তুলনায় চারগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৬০ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। দেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নতুন ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মোট কর্মসংস্থানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ জনে। বেকারত্বের হার ২০১০ সালের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৭-০৮ অর্থবছরের ৬৮৬ মার্কিন ডলার থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
২০০৭-০৮ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, অথচ গত ১৪ বছরে নানা বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ থেকে অর্ধেকের বেশি কমে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। এ সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে তিন-চতুর্থাংশ কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। গড় আয়ু বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৭৩ বছর হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না এ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলা গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। অচিরেই অন্য জেলাগুলো গৃহহীনমুক্ত হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, ভূমিহীন ও গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, নতুন নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু আর ঢাকায় বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের সাফল্যসহ স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে এ যাত্রা বিশ্বের কাছেও বিস্ময়।
এত সব বড় বড় অর্জনের নেপথ্যের কারিগর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তারপরও একশ্রেণির মানুষ দেখেও দেখে না। তারা সব সময় বর্তমান সরকারের সময়ে দেশ ভালো চলছে না, দেশ ভালো নেই, মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন বক্তব্য ও প্রতিবেদন উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রস্তুতি রাখতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সুযোগ পেলেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় না থাকলে এদেশে মুক্তযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে, আবারও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে, এদেশ আবার অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার পাওয়া হবে অলীক কল্পনা, আবার দুর্নীতির মহোৎসব হবে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ছেয়ে যাবে বাংলার আকাশ, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ হবে, এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন তাড়া করে ফিরবে এদেশের সাধারণ মানুষকে।
আমরা সবাই চাই এ আশঙ্কাগুলো যেন সত্যি না হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিনে আমাদের প্রত্যাশা দৃঢ়প্রত্যয়ী শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র, সব অন্ধকার দূর করে আলোর উৎস হয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন দীর্ঘজীবন। তিনি ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে। বাংলাদেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো। আজন্ম লড়াকু নির্ভীক যোদ্ধা শেখ হাসিনার হাত ধরে বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে, তৈরি হবে একটি বৈষম্যহীন মানবিক বিশ্ব।
লেখক: সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এইচআর/ফারুক/এএসএম