মতামত

শেখ হাসিনা: বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি

বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদর্শী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। তিনি বাঙালির স্বপ্ন ও সংগ্রামের আজন্ম সারথি। বাংলা ও বাংলাদেশের যে কিছু গৌরবময় অর্জন, তার নেতৃত্বে আছেন একজন, তিনি শেখ হাসিনা।

Advertisement

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বাড়ি আলো করে আসে একটি কন্যাশিশু। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদরের হাসু। বাংলাদেশের আজকের গৌরবময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সমগ্র জীবন ও বাঙ্গালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস মূলত একসূত্রে গাথাঁ। চিন্তা, চেতনা, আত্মবিশ্বাস, মানবিকতায় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি। তিনি শুধু জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকার নয়, আদর্শেরও উত্তরসূরি। তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের নির্ভিক দ্বারকাণ্ডারি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়পরিজন হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে যাওয়া একজন মানুষ প্রবাসে দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে স্বদেশে ফিরেই ব্রত নিলেন স্বাধীন দেশের মানুষগুলোকে সত্যিকার স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দেবেন। শপথ নিলেন বাংলার খেটে খাওয়া ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আনন্দে ভাসাবেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফেরার দিনে লাখো মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত বঙ্গবন্ধু কন্যা জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙ্গালী জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি আনতে চাই।

সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি দীর্ঘ চার দশকেরও অধিক সময় ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং টানা তিন মেয়াদসহ মোট চার মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন।

Advertisement

তিনি দৃঢ় প্রত্যয় আর অদম্য সাহসিকতা সহ সব কিছু সামলেছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন 'শোষিতের কণ্ঠস্বর', ঠিক সেই সময়ই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় হয়ে উঠেছেন 'দুর্গতদের কণ্ঠস্বর'। অথচ দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ভীষণ প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। '৭৫ এর পর সামরিক শাসক আর স্বাধীনতাবিরোধীরা দোর্দণ্ড প্রতাপে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিরা সদর্পে জানান দিচ্ছিল তাদের দাম্ভিক আস্ফালন।এ সময়টাতে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলার সব ধরণের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কোন্দলে বিভাজিত হয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহাসিক রাজনীতিক দল আওয়ামী লীগ।

১৯৯০-এ এরশাদের পতনের পরের বছর নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারবিরোধী দলহীন প্রহসনের নির্বাচন করে। এ সময় আবারও বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহাসিক রাজনীতিক দল আওয়ামী লীগ।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। দীর্ঘ ২১ বছর রাজপথে থাকা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার নেতৃত্বে জন্মের মাত্র কয়েক বছরের মাথায় উল্টো রথে যাত্রা করা বাংগলাদেশ আবার সঠিক পথে চলতে শুরু করে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আবার প্রতিষ্ঠা হয়। ঘুরতে থাকে দেশের উন্নয়নের চাকা। ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্ল্যাটফর্ম চারদলীয় জোট সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। এ সরকারের অপশাসনে দিশেহারা হয়ে ওঠে বাংলার নাগরিকরা।

Advertisement

দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যে। এ ছিল কঠিন এক সংগ্রাম। কারণ ১৯৭৫ এর পর দেশ আবার উল্টোপথে চলতে শুরু করেছিল। একাত্তরের পরাজিত শক্তি সমাজে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হয়েছিল।

জাতির এ কঠিন সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অপরাপর রাজনৈতিক দলসমূহ সংগঠিত হবার তাগিদ অনুভব করে। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল, রাজবন্দীদের মুক্তি, জেল-জুলুম নির্যাতন প্রতিরোধ, ঘুষ-দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং সীমান্ত সমস্যা সমাধান ও ছিটমহল বিষয়ে ইন্ধিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান। তার নেতৃত্বে সারাদেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রাণ ফিরে পায় এবং সকল ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে দল এবং জনগণকে সংগঠিত করার কঠিন সংগ্রামে নিয়োজিত হয়।

একই সময়ে স্বাধীনতা-বিরোধী জামায়াতে ইসলাম এবং অপরাপর রাজনৈতিক দলসমূহ পচাত্তর-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদারিত্ব এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে রাষ্ট্র এবং সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলায় সচেষ্ট হয়।মুক্তিযুদ্ধের মৌল আদর্শ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিপরীতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টি, সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং প্রগতির বিপরীতে ধর্মান্ধ এবং পশ্চাৎপদ ধ্যানধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ এ সময় প্রত্যক্ষ করা যায়। এ সকল উদ্যোগকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে বিএনপি এবং পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি। জাতির এ ক্রান্তিকালে শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তিকে প্রতিরোধ, জনজীবনের নানাবিধ সংকট দূরীকরণ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার কঠিন সংগ্রামে নিয়োজিত হন। দেশবাসীও আশায় বুক বেঁধে পাশে এসে দাঁড়ায় পরবর্তীতে রচিত হয় নতুন ইতিহাস। কখনো একক, কখনো যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চলতে থাকে। একদিকে নিজের দল আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা অন্যদিকে বৃহত্তর সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া। চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত তিনি সরকার গঠন করতে সক্ষম হলেন। এ সময়ে তার প্রথম কাজ ছিল ২১ বছর ধরে যে ভ্রান্ত ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষের সামনে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বারবার প্রচার করে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল, তার বিপরীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরা। যে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছিল, ইতিহাসের সে মহানায়কের প্রকৃত অবদান জাতির সামনে নিয়ে আসা হল। বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনায় রয়েছেন। এ সময়ে তার যে বিশাল অর্জন, তার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে আজকের পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করার মাঝে এ দেশের জন্যে, এদেশের গরীব দুঃখী মানুষের জন্যে কত কল্যাণকর প্রকল্পের যে বাস্তবায়ন হয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।

বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত হয়েছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার মত একজন প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়কের নেতৃত্বের ফলে।

শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় গুণ মানুষের জন্যে ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু যেমন সব সময়েই চাইতেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তার কন্যাও স্বাভাবিকভাবেই মানবিকতার এ দৃষ্টান্ত বুকে ধারণ করেছেন।তার সকল কাজের চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে সাধারণ মানুষের কল্যাণ। মানবিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ তিনি সৃষ্টি করেছেন ১১ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে। তার জন্যে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছেন ‘মানবতার জননী’ হিসেবে। ১৯৯৬ সালে নানা ঘটনার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির অধীনের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দীর্ঘ একুশ বছর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি এবং ভারতের সাথে গঙ্গার পানিচুক্তি সম্পাদন করে তিনি দেশকে দুটি বড় সংকট থেকে রক্ষা করেছিলেন। হতদরিদ্র মানুষদের কল্যাণে তার সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে।বিশেষ করে দেশের উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ করেন। সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সন্তানের পরিচয়ে পিতার পাশাপাশি মায়ের নাম লিপিবদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক করেন।

তারই প্রচেষ্টায় ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জন করে। তার সরকার কুখ্যাত ইনডেমনিটি বাতিল করে প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ শুরু করে। এছাড়াও শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প, বিদ্যুৎ উন্নয়ন, কৃষিসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এবং বিদেশী নানা মহলের আনুকূল্য পেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির উপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়। বিএনপি-জামাতের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে।

এই সময় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাষ্টার, এডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, এডভোকেট মমতাজউদ্দিন, সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালুসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে।

এ সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই সময় শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয় বারবার। বিশেষ করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা ইতিহাসের এক কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।

বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য এবং নির্মূল করার এধরনের ঘৃন্য প্রচেষ্টা বিশ্ব আর কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে দলিত মথিত করে বিএনপি-জামাত সরকার দেশে জরুরী অবস্থা সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করে।

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করে রাজনীতি থেকে বিদায় করার চক্রান্ত করা হয়। কিন্তু অনমনীয় সাহসিকতা এবং বিচক্ষণতায় সব বাধা অতিক্রম করে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা বিপুল সংখ্যাধিক্যে জয়লাভ করে সরকার গঠন করেন। তার পরের ইতিহাস বাঙালির গর্ব ও সাহসের ইতিহাস।

দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তার সততা, সাহসিকতা, দেশপ্রেম এবং বিচক্ষনতায় আমরা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি স্বপ্নের পদ্মাসেতু। আর্ন্তজাতিক আদালতের মাধ্যমে অর্জন করেছি সমুদ্রের বিশাল এলাকা।

বাংলাদেশের অর্জন আজ আমাদেরকে বিশ্বে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা থাকলেও এ অর্জনের মূল কাণ্ডারি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা শুধু রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনৈতিক নেতাই নন, তিনি মানবিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক।

সমকালীন বিশ্বে যে কয়জন রাজনীতিবিদ তাদের নীতি-আদর্শ, প্রজ্ঞা, দক্ষতা এবং অনমনীয় দৃঢ়তার জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত, তার অন্যতম ব্যক্তিত্ব আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যা নয়, স্বীয় প্রতিভা এবং কর্মগুণেই তিনি আজ বিশ্বনন্দিত।

সততা, দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দৃঢ়তা তাকে এক দক্ষ রাষ্ট্রনায়কে পরিণত করেছে। তার নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্র আজ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছে। অর্থনীতির সকল সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রায় উন্নত রাষ্ট্রের সমকক্ষ। গড় আয়ের সাথে গড় আয়ু বৃদ্ধিও এক বিস্ময়কর ঘটনা।

তবে সবকিছু ছাড়িয়ে তার মানবিক বোধ এবং বিপন্ন মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা তাকে এক বিশেষ উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি সমান দৃষ্টির এক মানবিকবোধের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে তার বিশাল কর্মযজ্ঞে।

রাষ্ট্র এবং সমাজ জীবনে তার কর্মযজ্ঞের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেই এ বক্তব্যের বাস্তবতা দৃশ্যমান হয়।শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতির উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, শান্তি এবং সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করতে তার পূর্ণ নিশ্চয়তা ও প্রতিশ্রুতির সাথে কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি স্থিতিশীল এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বিহীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তার দৃঢ় নেতৃত্ব ও নিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সম্মান এবং গুরুত্ব অর্জন করেছে।

সমগ্র বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির স্বপ্নসারথী শেখ হাসিনা এখনও অবিকল্প-অপ্রতিদ্বন্দ্বী । সব সময় স্বজনের আদরে ও আশীর্বাদে মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা আদায় করছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আগামীকালে আরও বেশ উন্নতি এবং সমৃদ্ধি অর্জন করতে সমর্থ হবে। শেখ হাসিনা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের সভাপতি কিংবা রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হলেও তার মাঝে লুকিয়ে আছে সহজাত বাঙালি চরিত্রের এক মর্মস্পর্শী আবেদন- মমতাময়ী মা। সে কারণেই শেখ হাসিনা অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, আমাদের অস্তিত্বের ঠিকানা। বিশ্বমানবতার জননী, মহান জননেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। আপনার অতল কৃতিত্বের কথা শতমুখে বলেও শেষ করা যাবে না। জীবনের এই পরিণত বয়সে পৌঁছেও আপনার অবিশ্রান্ত জনকল্যাণকামী কর্মযজ্ঞের বিরাম নেই। আমরা আপনার সুস্থ, নীরোগ, কর্মময় শতায়ু কামনা করি। লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।

এইচআর/এমআরএম