একেকটি দলের সদস্য সংখ্যা ২৫-৩০ জন। সবার হাতেই দেশি-বিদেশি পিস্তল-রাইফেল-রিভলবার। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলে এমন সশস্ত্র অন্তত সাতটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
Advertisement
সূত্র বলছে, বিস্তীর্ণ চরে এসব বাহিনীর সদস্যদের জন্য খাওয়া-দাওয়া, বিনোদন, প্রশিক্ষণ, রাত্রিযাপন, মাদক, নারীসঙ্গসহ সবকিছুরই ব্যবস্থা আছে। রাখালের গরুর পাল থেকে অস্ত্রের মুখে গরু ছিনতাই, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ট্রলারে চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে বালু ও মাটি কেটে বিক্রি, মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এসব বাহিনীর সদস্যরা।
অনেক সময় আধিপত্য বিস্তারসহ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের ধরে এক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আরেক বাহিনীর সদস্যদের গোলাগুলি, বোমা নিক্ষেপসহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। তবে এসব বাহিনীর সদস্যদের ভয়ে মুখ খোলা থেকে বিরত থাকেন চরাঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা।
এসব বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যদের নামে খুন, মারামারি, ডাকাতি, ধর্ষণ, চুরির মামলা রয়েছে। এসব বাহিনীতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া পান্না বাহিনী, লাল চাঁদ বাহিনী, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, গণবাহিনী ও লাল পতাকা বাহিনীর দু-একজন করে সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে।
Advertisement
সূত্রের তথ্যমতে, এসব বাহিনীতে জড়িয়ে পড়েছেন দৌলতপুরের অন্তত ২০০ তরুণ-যুবক। তবে অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়ে এসব বাহিনীদের সদস্যদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীরা তাদের ‘শেল্টার’ দেন বলে জানা গেছে।
ভারত সীমান্তঘাঁষা ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে দৌলতপুর উপজেলা। ৪৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে ভারত সীমান্ত। সীমান্তঘেঁষা এ উপজেলায় অস্ত্র ও মাদকের ছড়াছড়ি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চরাঞ্চলে এসব বাহিনীর আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। চরাঞ্চলে এসব বাহিনীর আনাগোনা ও অস্তিত্বের বিষয় স্বীকার করে ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু বলেন, তার ইউনিয়নে আগে একসময় এমন বাহিনী থাকলেও এখন নেই।
চিলমারীর চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী বাহিনীর কথা শুনেছেন কিন্তু দেখেননি। তবে, অস্ত্রসহ বিভিন্ন কালোবাজারি ব্যবসা চলে বলে জানান তিনি।
প্রাগপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল বলেন, এলাকার মানুষ এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। তারা অতিষ্ঠ। তবে এখনো কোনো সমাধান আসেনি।
Advertisement
সীমান্ত সংলগ্ন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল। তিনি দাবি করেন, তার ইউনিয়নে এমন কোনো বাহিনী নেই।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ওইসব অঞ্চলে এমন বাহিনীর কোনো হিস্ট্রি তার কাছে নেই।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানাবো। তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) মহসীন আল মুরাদ বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আল-মামুন সাগর/এসআর/জিকেএস