যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবর আসার পর শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তা যেন কাটছেই না। ফলে শেয়ারবাজারেও বেশ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এতে একটু ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা দিলেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে পরক্ষণেই দরপতন হচ্ছে।
Advertisement
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষ ভূত না দেখেই যেমন ভয় পায়, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও শেয়ারবাজারের জন্য তেমন হয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরে বিনিয়োগকারীরা অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। এই আতঙ্কের কারণ কারও স্পষ্ট জানা নেই।
তারা বলছেন, কার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, শেয়ারবাজারে তার কী প্রভাব পড়তে পারে- এসব না জেনেই বিনিয়োগকারীরা আতঙ্ক ভুগছেন। আবার একটি চক্র এই সুযোগে গুজবও ছড়াচ্ছে। সবকিছু মিলেই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়। এরপর থেকেই শেয়ারবাজারে অস্থিরত চলছে। গণমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শেয়ারবাাজরে বড় দরপতন হয়।
Advertisement
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার তালিকায় স্থান করে নেয় লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে কমে লেনদেনের গতি। দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার আতঙ্ক কাটার এক ধরনের আভাস দেখা গেলেও শেষ দুই কার্যদিবসের বাজারচিত্র বলছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েই গেছে।
আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ চিন্তিত নয়
মঙ্গলবারের মতো বুধবারও শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়লেও বিক্রির চাপে পতনের তালিকায় স্থান করে নেয় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। বুধবারও একই চিত্র দেখা গেছে।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের ১৬ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু এরপরেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী বিক্রির চাপ বাড়ান। এতে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই সূচক ৪ পয়েন্ট কমে যায়।
Advertisement
এভাবে লেনদেনের পুরো সময়জুড়েই অস্থিরতা দেখা যায়। সূচক একটু ঊর্ধ্বমুখী হতেই বেড়ে যায় বিক্রির চাপ। ফলে পরক্ষণেই আবার দরপতন হতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যদিয়েই দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৭০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৮টির এবং ১৫৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৫০ কোটি ১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪২ কোটি ৪৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেমিনি সি ফুডের ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ইস্টার্ন হাউজিং, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ফু-ওয়াং ফুড, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, বিডিকম অনলাইন এবং অ্যাপেক্স ফুড।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬১টির এবং ৫৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে কেউ কেউ বাজারে গুজবও ছড়াচ্ছেন। সবকিছু মিলেই বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বাজারে এমনও গুজব ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষ ভূত না দেখেই যেমন ভূতের পায়, এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সেই রকম অবস্থা হয়েছে। কার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, শেয়ারবাজারে এর প্রভাব কী- তা না বুঝেই বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ফলে অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে সুযোগসন্ধানী এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন>> আতঙ্ক কাটিয়ে বিমায় ভর করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে শেয়ারবাজারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে পরোক্ষ প্রভাব থাকবে, সেটাও খুব বড় কিছু না। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অবশ্য সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। অনেক প্রতিষ্ঠান ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়তে পারে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ পররাষ্ট্র বিভাগ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করেছে বা এর জন্য দায়ী কিছু বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক বিরোধীদল।
যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে সেসব ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভবিষ্যতে আরও কোনো ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারাও একই ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন।
এমএএস/ইএ/জেআইএম