জাতীয়

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে দেশের প্রথম চলন্ত ওয়াকওয়ে

#দেশের মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরেই প্রথম চলমান ওয়াকওয়ে বা মুভিং ওয়াক বসানো হয়েছে#তৃতীয় টার্মিনালের প্রথম ফ্লোরে আটটি ও দ্বিতীয় ফ্লোরে ছয়টি মুভিং ওয়াক স্থাপন করা হয়েছে#ইমিগ্রেশন থেকে উড়োজাহাজ পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা#এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রীরা

Advertisement

উন্নত বিশ্বের আদলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির চলন্ত ওয়াকওয়ে বা মুভিং ওয়াক। চলন্ত সিঁড়ি বা এসকেলেটর ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত হলেও মুভিং ওয়াক দেশে নতুন। টার্মিনালের আগমনী ও বহির্গমনে ১৪টি মুভিং ওয়াক বসানো হয়েছে। এর ওপর যাত্রীরা না হেঁটে দাঁড়িয়ে থাকলেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে। এটা ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা।

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে শাহজালালেই প্রথম মুভিং ওয়াক স্থাপন করা হয়েছে। টার্মিনালে ফ্লাইট চালু হলে খুব সহজেই ইমিগ্রেশন থেকে উড়োজাহাজের কাছ পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন যাত্রীরা। আবার উড়োজাহাজ থেকে নেমে কিছু পথ হেঁটে কিছু পথ মুভিং ওয়াক ব্যবহার করে ইমিগ্রেশনে যাওয়া যাবে। তবে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রী এবং শিশুরা।

এদিকে তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় ফ্লোরে ওঠা-নামায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বয়ংক্রিয় এসকেলেটর ও লিফট স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলো ব্যবহার করে এক তলা থেকে আরেক তলায় যেতে পারবেন যাত্রী ও বিমানবন্দরে কর্মরতরা।

Advertisement

আরও পড়ুন>> থার্ড টার্মিনাল চালু হলে শাহজালালে লাগেজ হয়রানি বন্ধ হবে

আগামী ৭ অক্টোবর তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে টার্মিনালে ফ্লাইট চালু হতে সময় লাগবে আরও এক বছর। অর্থাৎ, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে এই টার্মিনাল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। তখন এ টার্মিনালে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এখন বিদ্যমান টার্মিনাল-১ ও ২ এ বছরে সেবা পাচ্ছেন প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনটির নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার রোহানি বাহারিন। চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩ ছাড়াও চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেছেন এই স্থপতি। ফলে তিনি এই টার্মিনালের নকশায় আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রেখেছেন। এখানে সব কিছুতে আধুনিক অটোমেটেড সিস্টেম থাকবে।

মুভিং ওয়াক

Advertisement

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত বড় বিমানবন্দর, শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্রে স্বয়ংক্রিয় চলমান ওয়াকওয়ে স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে বিমানবন্দরের ভেতরে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারেন যাত্রীরা। এতে যাত্রীদের সময় বাঁচে, আবার হাঁটাও লাগে না। বয়স্ক যাত্রী ও রোগীদের জন্য এই সেবা বেশি জরুরি।

আরও পড়ুন>> এক্সপ্রেসওয়ে-মেট্রোতে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল

বেবিচক সূত্র জানায়, যাত্রীসেবা দিতেই তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির ১৪টি মুভিং ওয়াক সুইজারল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে টার্মিনাল ভবনের প্রথম ফ্লোরে আটটি ও দ্বিতীয় ফ্লোরে ছয়টি মুভিং ওয়াক স্থাপন করা হয়েছে, যা দেশের কোনো বিমানবন্দরের মধ্যে প্রথম।

২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের প্রথম ফ্লোর। সরেজিমনে দেখা যায়, এই ফ্লোরে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর কিছুদূর পরপর মুভিং ওয়াক বসানো হয়েছে। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা। কোথাও ত্রুটি আছে কি না, তা বারবার দেখছেন। নিজেরাও মুভিং ওয়াকে উঠে একদিক থেকে আরেক দিকে যাচ্ছেন। অর্থাৎ এর ওপর উঠে দাঁড়ালে স্বয়ংক্রিভাবে যাত্রীকে নিয়ে যাবে। তবে যাত্রী চাইলে এর ওপর দিয়েও হেঁটে এগিয়ে যেতে পারবেন।

এই মুভিং ওয়াক তদারিক করছিলেন ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রকৌশলী মো. আল-আমিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক মাস ধরে এই মুভিং ওয়াকগুলো স্থাপনের কাজ করছে আমাদের প্রতিষ্ঠানের শতাধিক কর্মী। এখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সামনে রেখে বারবার চালিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কোথাও ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> অপরিবর্তিত থাকছে থার্ড টার্মিনালের নকশা, সাশ্রয় ৭৫০ কোটি

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের প্রকৌশলী মো. নিজাম-আল হাসিব জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক দশক ধরে উন্নত দেশের বিমানবন্দরের ভেতর চলন্ত ওয়াকওয়ে যাত্রীদের গতিশীলতা ত্বরান্বিত করছে। তাই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে এই সেবা যুক্ত করা হয়েছে, যা বিমানবন্দরের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ ৮৭ শতাংশ শেষ। দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল, দৃষ্টিনন্দন সিলিং, কার পার্কিং, বোর্ডিং ব্রিজসহ অন্য স্থাপন। এর মধ্যে নেওয়া হচ্ছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি। উদ্বোধনী উপলক্ষে চলছে টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার ফ্লাইওভার এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।

২০১৭ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।

এমএমএ/এএসএ/এএসএম