সাহিত্য

গোলাম রববানীর চারটি কবিতা

মেঘনার মেয়ে-১

Advertisement

থেকেও বা না থেকেও—কোনদিন ভেবো না ভুলেই আমি কাছে নেই, পাশে নেই, ছায়া নেই, ছোঁয়া নেই— সঙ্গত তো আছি; হয়ে কানামাছি—প্রজাপতি নাম ধরে ডাকা, অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকাকেমন আছো তুমি; এই যে এইটুকু জানতে চাওয়াজিয়ো-ই কী রাখবে তুমি সোনালি দিনের এই রঙিন স্মৃতি

যতদিন যাবে—দেখ কচি চারাগাছটির মতো ঠিকতরতর করে তুমি বুঝে যাবে; তুমি কী ছিলে আমারএক চিলতে রোদের—কী যে দরদ, কী যে মায়া,—আলতো স্পর্শে এসে ছুঁয়ে দেবে তোমার ঝুলবারান্দাওগো মেঘনার মেয়ে তুমি বেখেয়ালি মনে গাইবেজল ও জোছনার গান—বেদনার কবিতা শুনবে

পৃথিবীর পরে কত গান আসে সব কি আর মুছে যায়কিছু স্মৃতিগান চির অমলিন হয়েও তো থেকে যায়

Advertisement

মেঘনার মেয়ে-৩

প্রেমের শুরু, প্রেমের শেষবলে কোনো কিছু নেই, যা-ই শুরু তা-ই শেষদিন ফেলে দিন, ঋণ চিরদিনস্বর্গচ্যুতি—স্বর্গে ফেরা;

শুরু করেছে আদম, হাওয়া তাই নিয়েছে বয়ে পিরিতের উদ্যানের মাঠে, আমরা করছি প্রেমাবাদএকটি প্রেমের ক্ষেতে, এক প্রেমফসলের মাঠেকেবল নিত্যনতুন গড়া, ইমোশন, নবনবরূপে ধরা,দ্রোহ-বিদ্রোহের মনবিষে, যখন গিয়েছি ডুবে, মায়ামায়াময় লাগছে দেখতে—সে-তো মেঘনার মেয়ে

প্রেম পতিত অ্যাবোরসনে, অপরূপ জোসনার ঢলেকেন, কেন এত মায়া লাগে? হৃদয় ঠিদয় জ্বলেপ্রেম পুরাতন নবায়ন হয় বুক ধুকে ধুকে কেঁপে কেঁপেপ্রেম নবায়ন পুরাতন হয় ভাঙাচোরার গণ্ডিতে থেকে

Advertisement

দেখতে দেখতে আজ হৃদয়ের পট খরায়িত হচ্ছেরোমান্টিক হীরা-রত্নজুটি, গলে গলে শৈলবনেঝরতে ঝরতে নেমে যাচ্ছে বোবা নদীরঙিন পানিতেযেমন করে প্রেমজন্ম ফলছে ভাঙাগড়ার উচ্ছ্বাসে

পুরাতন প্রেম বলে পৃথিবীতে কিছু নেইনতুন প্রেমের জন্য ওঁত পেতে বসে আছে প্রেমপাজিকৃষ্ণ কানাইয়ের সমস্ত অভিনবত্বের বাঁকে বাঁকে

তবু প্রেমের মৌসুম চলছে, ঘুরতে ফিরতে

মেঘনার মেয়ে-০৪

নীল সমুদ্রের জলে নীলিমার মতো মিশে যাবো সুবিস্তৃত রাজ্য বেড়ে তোমাকেই রাজরানী করেনিয়ে যাবো মালে—আরও জেইরেঞ্জারফোর্ডে...

নিয়ে যাবো তোমাকেই, আরও লাও চাই প্রভিন্সে,দিতে পারি পাড়ি বহুদূর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস পড়ার আগেযদি চোখে চোখ রেখে ছবির মতো সৌন্দর্য হয়ে—নুয়ে পড় প্রেম পিপাসিত ঠোঁটে; এই মৃত্তিকার বুকে

নিয়ে যাবো তোমাকেই ঝিলমিল হ্রদে, জলপ্রপাতেপ্রেমউপত্যকা ঘেঁষা; সেই জুরিখ, বার্ন, লুসান-ভেনেজাএকটি প্রেমের চকোলেট, চৌষট্টিটি দাঁতের সংস্পর্শে আজ প্রেমের সুগন্ধ ওঠে; দু’দুটো হৃদয়ের বন্ধনে

যদি শক্ত কথা দাও, ভানুসিংহের গল্পগুচ্ছের মতো—শেষ হয়েও কখনো হবে না শেষ; পাথরে ফুল ফুটবে এক পলকেই টপকাবে পৃথিবীর পাঁচ পাঁচটি চূড়াশৃঙ্গ মেঘনার মেয়ে তুমি যদি মাটি হও এই মৃত্তিকার বুকে

মেঘনার মেয়ে-০৫

শূন্যতার সব রেশ বুক পকেটে রেখেই পূর্ণতার খোঁজে বেরোলাম,—দেহ খাঁচা ছিঁড়ে, দেহ খাঁচা নিয়ে।

মেঘনার মেয়ে এসে ধমনীর ভেতর থেকে ভেতরে শাজাল ধরিয়ে দিয়ে—হয়েছে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টি লাল চোখের মতো আলজিভ চুমু খেতে খেতে আমিস্বপ্নের সুকন্যাকে দিয়েছি অন্ধকারে অঙ্কুরিত ফলবীজ;জল আর সূর্যের স্পর্শেই ধীরে ধীরে হলে চারা!তুমি আর কবে বড় হবে, কবে দেবে ধরাচোর পুলিশ খেলায় আমাকে হারিয়ে, বলো, তুমি লুকাবে কোথায়?

শূন্যতার সব রেশ বুক পকেটে রেখেই পূর্ণতার খোঁজে বেরোলাম,—দেহ খাঁচা ছিঁড়ে, দেহ খাঁচা নিয়ে।মেঘনার মেয়ে, তুমিই হবে মেঘের জলধারা।

এসইউ/জেআইএম