লালমনিরহাটে উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে হওয়া আটবারের বন্যায় ধান-সবজিসহ ডুবেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। একই সঙ্গে তিস্তার তীব্র ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বহু আধপাকা বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এছাড়া দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ধারদেনা করে আমনের আবাদ করা কৃষকরা।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বন্যায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার প্রায় ৯৫২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পথে বসেছেন তিস্তা পাড়ের হাজারো কৃষক। একই সঙ্গে ভেসে গেছে প্রায় ৪৪০টি পুকুর ও বিলের মাছ। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিস্তার কয়েক দফা বন্যায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানি, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারি, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে রুপা আমন ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বরগুনায় আউশের দামে হিসাব মিলছে না কৃষকের
Advertisement
এছাড়া তিস্তার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এরই মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নিজের বসতবাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় বাঁধের রাস্তায়। এছাড়া আগামী দিনগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে কাটাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিস্তা পারের হাজারো কৃষক। তবে তিস্তা পাড়ের মানুষ এখন আর ত্রাণ চায় না তারা স্থায়ী সমাধান চান।
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে হওয়া বন্যায় ডুবে গেছে ৯৪০ হেক্টর জমির রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা ১২০ হেক্টর, শাক-সবজি ৩১হেক্টর, মাস কালাই ২.৩৭হেক্টর। মোট ক্ষতিগ্রস্ত ১৫৩.৩৭ হেক্টর জমি।
তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা হাজরা বেগম বলেন, ‘তিস্তায় জায়গা জমি ভেঙে আমরা সর্বহারা হয়েছি। এখন যাওনের কোনো পথ নেই। জমিতে ধান লাগাইছি সে জমিও নদী খাইছে। কেমনে বাঁচমু জানি না। এই নদীটার বাঁধ হইলে আমাগোর আর কষ্ট থাকবো না।’
আরও পড়ুন: তালা খোলে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক আসেন ১০টার পর
Advertisement
হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমারী গ্রামের কুরবান আলী বলেন, ‘ধার দেনা করে ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগাইছিলাম। তিস্তার বন্যায় সব পচে গেছে। এখন মানুষের টাকা পরিশোধ ও পরিবার নিয়ে কি খাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ্দৌলা বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় প্রায় আটবার বন্যা আঘাত এনেছে। ডান তীরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় আমরা জিও ব্যাগ ফেলে মেরামত করা চেষ্টা করছি।
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, তিস্তা এলাকার মানুষের দুঃখ দীর্ঘদিন। এই নদীটি খনন না হওয়ায় মানুষ বিপাকে পড়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও টেকসই সমাধান চান নদীপাড়ের মানুষ।
পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, তিস্তার পানি ভারত থেকে প্রথম দহগ্রামে প্রবেশ করে। এই বর্ষা মৌসুমে কয়েক দফা বন্যায় দহগ্রামের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপা আমন ধান, সবজিক্ষেত ডুবে গিয়ে পচন ধরেছে। এতে করে এ ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে চালু হলো ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভ
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, লালমনিরহাটে আমন ধান চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। এর মধ্য ৮৬ হাজার ৬ শতক জমি অর্জিত হয়েছে। উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে কয়েকবার বন্যার সৃষ্টি হয়ে রোপা আমন ও সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রবিউল হাসান/জেএস/জেআইএম