জাতীয়

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাচ্ছে জাপান, আগ্রহী বিমানও

#জাপানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার: বেবিচক চেয়ারম্যান#জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, দাবি এমডির#বিমানকে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা দিতে সক্ষম, প্রমাণ দিতে হবে: বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী

Advertisement

দেশের সব বিমানবন্দরে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ খাত থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করছে সংস্থাটি। তবে আশানুরূপ বাড়েনি বিমানের সেবা। যাত্রীদের অভিযোগ বিস্তর। এ অবস্থায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কাজটি পেতে দৌড়ঝাঁপ করছে বিমানও।

সংস্থাটির সংশ্লিষ্টদের দাবি, আগের তুলনায় এখন দেশের সব বিমানবন্দরে সেবার মান বাড়ছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বিমানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে বিমানের।

বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের একটি বড় অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। বিমানবন্দরে কখন একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করবে, কোন উড়োজাহাজটি পার্কিং বে-তে নেওয়া হবে, উড়োজাহাজের দরজায় সিঁড়ি লাগানো, নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রীর লাগেজ বুঝিয়ে দেওয়া, কোনো লাগেজ হারিয়ে গেলে তা বের করে দেওয়া, উড়োজাহাজের ভেতর-বাইরে পরিষ্কারসহ যাত্রীসেবার আরও অনেক কাজ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে অন্তর্ভুক্ত। শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে এসব সেবা দিয়ে আসছে বিমান। কিন্তু শুরু থেকেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে যাত্রীদের অভিযোগ ছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন>>অক্টোবরে একাংশ উদ্বোধন, বছরে সেবা পাবেন ১ কোটি যাত্রী

এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে জাপানের অংশগ্রহণ যাত্রীসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে। তখন বিমান সেবার মান বাড়াতে প্রতিযোগিতা করবে। তাদের কাজ যাচাই করা আরও সহজ হবে। যদিও জাপানের কাজ পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় গত কয়েক মাস ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরের বিদ্যমান টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২-সহ দেশের সব বিমানবন্দরে সেবার মান অনেকটাই বেড়েছে। বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম, তারা এমন প্রমাণ দিতে চেষ্টা করছে।

আগামী ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে এই টার্মিনাল প্রকল্পের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় শতভাগ। উদ্বোধনের পর যন্ত্রপাতি স্থাপন, জনবল নিয়োগসহ বাকি কাজ করা হবে বলে জানিয়েছে (বেবিচক)।

আরও পড়ুন>>শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন অক্টোবরে

Advertisement

বেবিচক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। এখন এই টার্মিনাল উদ্বোধন হলেও যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এই এক বছর টার্মিনালটি পরিচালনায় প্রস্তুতি নেবে বেবিচক।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাচ্ছে জাপান

বেবিচক সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। এমন অবস্থায় তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর থেকেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের বিষয়টি সামনে আসে। তখন আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বেবিচক ও মন্ত্রণালয়। আগামী বছরের জুনের দিকে তাদের সঙ্গে বেবিচকের চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন>>এক্সপ্রেসওয়ে-মেট্রোতে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল

গত ৮ আগস্ট হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান। পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে নতুন টার্মিনালে অবশ্যই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিদেশি প্রতিষ্ঠান করবে জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের অপারেশনের মেনটেন্যান্স স্কুপের মধ্যে কার্গো হ্যান্ডলিং, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, টার্মিনাল বোর্ডিং রয়েছে। এ কাজগুলোর পরিচালনা জাপানের একটা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী বছরের মাঝামাঝি তাদের সঙ্গে বেবিচকের চুক্তি হবে। জাপান দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা কাজটা বিমানকে দিয়ে করাবে না অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করাবে সে সিদ্ধান্ত তারাই নেবে।’

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ চায় বিমান

বিমান সূত্র জানায়, ১৯৭২ সাল থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে বিমান। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি ৩২টি বিদেশি এয়ারলাইন্সের শতাধিক ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সেবা দিচ্ছে তারা। এই পরিষেবার মাধ্যমে বছরে ১২ থেকে ১৫শ কোটি টাকা আয় করে বিমান, যা বিমানের মূল আয়ের অর্ধেকের বেশি। এখন থার্ড টার্মিনালের দায়িত্ব পেলে এই আয় চার হাজার কোটিতে গিয়ে ঠেকবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, শাহজালালে প্রায় প্রতিদিনই লাগেজ অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন যাত্রীরা। অনেক সময় বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরেও চেক-ইন লাগেজ পেতে যাত্রীদের এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। যদিও রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্সটির বার্ষিক আয়ের প্রধান উৎস গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা। এখন জাপানকে দায়িত্ব দিলে বিমানের বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।

জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম জাগো নিউজকে বলেন, ভারত, সিঙ্গাপুর, তুরস্কসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্সই করে। সে অনুযায়ী দেশের সব বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে বিমান। এই কাজে বিমানের ৫২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা দিনে তিন শিফটে জনবল ভাগ করে কাজটি করছি। এখন ফ্লাইট অবতরণের ১৮ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই লাগেজ পাচ্ছেন যাত্রীরা। তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজসহ যেসব সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, সেখানে বিমান ভালোভাবেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ জাপানকে দেওয়া হবে। কিন্তু জাপানের কোন প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে, তাদের যোগ্যতা কী তা কেউ জানে না। এ বিষয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছি, তিনিও কিছু জানেন না বলে জানান।

এ অবস্থায় জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া ঠিক হবে না জানিয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং আধুনিকায়নে এক হাজার কোটি টাকার বেশি যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। পাইপলাইনে আছে আরও ৭শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এসব যন্ত্রপাতি দেশে আসবে। এগুলো ব্যবহারের সুযোগ পেলে আরও উন্নত যাত্রীসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তাই তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানই যথেষ্ট।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ জাপানকে দেওয়ার কথা হয়েছে। তবে বিমানের জন্যও এ কাজ নেওয়ার সুযোগ আছে। এজন্য বিমানকে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা দিতে সক্ষম, এমন প্রমাণ দিতে হবে। অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠানই কাজ পায়, তাকে যথাযথ যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কাজ নিতে হবে।

এমএমএ/এএসএ/এএসএম