ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বারোমাসি কাটিমন থাই জাতের আম চাষ করে সফল হয়েছেন নাঈমুল হাসান শামিম। পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পেছনে না দৌড়ে সারাবছর আম চাষ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। জেলার মধ্যে তিনিই প্রথম এ জাতের বড় আম বাগানের মালিক। তার বাগান দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বারোমাসি আম চাষে।
Advertisement
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় বাণিজ্যিক, বাড়ি ও ছাদ বাগান মিলিয়ে ২ হাজার ৩১ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম বাগান আছে। এছাড়া ২ হেক্টর জমিতে বারোমাসি আম চাষ হচ্ছে। বারোমাসি কাটিমন জাতের আম বাগানে মৌসুমের সময় গাছে মুকুল আসে। সেসব মুকুল ও ডাল কেটে দিলে ঠিক ২ মাস পর আবারও মুকুল আসে। এভাবে মুকুল ধরা বিলম্বিত করে মৌসুম ছাড়াই আম উৎপাদন করা সম্ভব। জেলার বিভিন্ন স্থানে এ জাতের আমের চাষাবাদ শুরু হলেও তা পরিমাণে কম। তবে সারাবছরই এ জাতের আমের স্বাদ নেওয়া যায়। চাহিদাও বেশ ভালো।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের যোগীবরাট গ্রামের জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের ছেলে নাঈমুল হাসান শামিম। বছর চারেক আগের মাস্টার্স শেষ করে অনেকটা বেকার থাকেন। ফলে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ইউটিউব দেখে বারোমাসি আম চাষে আগ্রহী হন। পার্শ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের বাগুয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন বারোমাসি আম চাষ। এ জমিতে ৬০০টি আমের চারা রোপণ করেন। চলতি বছর থেকে আরও প্রায় ২২ বিঘা জমিতে বারোমাসি আম চাষের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
পৌরসভার আঁধারকোঠা গ্রামের মো. এস এম মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অসময়ে গাছে গাছে ঝুলছে আম। আবার প্রায় গাছেই নতুন করে মুকুল এসেছে। দেখতে যেমন ভালো লাগে; খেতেও সুস্বাদু এবং মিষ্টি। বাগান ঘুরে দেখলাম। বাড়ির জন্য কয়েক কেজি কিনে নিলাম।’
Advertisement
আরও পড়ুন: পেঁপে চাষে লাভবান মিরসরাইয়ের আব্দুল মান্নান
স্থানীয় মো. আবুল আহাদ বলেন, ‘সারাবছর এখানে আম পাওয়া যায়। বাগানটি এ এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। বারোমাসি আম চাষ দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন এ আম চাষ করতে।’
বাগান মালিক নাঈমুল হাসান শামিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করি। চাকরির পেছনে ছুটে হতাশ হয়ে পড়ি। কিছু একটা করার চিন্তা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনি। এরপর ২০১৯ সালে ৫ বিঘা জমিতে রাজশাহী থেকে আনা ৬০০টি কাটিমন থাই জাতের বারোমাসি আমের চারা রোপণ করি। বছর দুই পরে গাছে মুকুল ও ফল আসে। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। গত ২ বছরে ১৬ লাখ টাকার মতো আয় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বারোমাসি কাটিমন জাতের আম বাগান জেলার মধ্যে আমারটিই বড়। এবার প্রতি কেজি আম পাইকারি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আম প্রায় শেষের দিকে। নতুন করে প্রতিটি গাছেই মুকুল এসেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে নতুন করে আম বিক্রির আশা করছি। বারোমাসি আম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক দূর থেকে মানুষ বাগান দেখতে আসেন। পরামর্শ নেন। গাছের চারা কিনে নেন।’
Advertisement
আরও পড়ুন: কাজী পেয়ারার চারা কখন রোপণ করবেন?
বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম রাশেদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাগান মালিক নাঈমুল হাসান শামিম শিক্ষিত এবং সফল উদ্যোক্তা। বারোমাসি আম চাষে তিনি সফল। তার বাগানটির জন্য নিয়মিত দেখাশোনা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তার দেখাদেখি অনেকেই বারোমাসি আম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এখানে এ জাতের আম প্রথম চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শামিম।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফরিদপুরে মৌসুম ভিত্তিক বিভিন্ন জাতের আম বেশি পাওয়া যায়। জেলায় ২ হাজার ৩১ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের বাগান আছে। এছাড়া ২ হেক্টর জমিতে বারোমাসি কাটিমন জাতের আম চাষ হচ্ছে। বারোমাসি আমের বেশ কদর আছে। যারা এ বাগান করছেন এবং করতে আগ্রহী; তাদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়।’
এন কে বি নয়ন/এসইউ/জিকেএস